মাসদুয়েক পর ছুটি পেয়ে গতকাল আমার ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ, বাঁকা বঙ্কিম আর বিদ্যার সাগরের মাঝামাঝি একটি সুকুমার রায়ইস্ক প্রাণী হয়ে দে দোল দোল, দে দোল দোল করলাম সারাদিন। এ কমাস তো তেমন খবরাখবর রাখতে পারিনি, অকাজের চাপে নুয়ে ছিলাম, কিন্তু মুখপত্রিকার আনাচে কানাচে 'বসন্ত এসে গেছে' গোছের একটা শব্দবন্ধ বড্ড বেশি ঘোরাফেরা করছিল, ঠিক ঠাউর করতে পারিনি কেসটা কি। গতকাল বুঝলুম। এবং সেই সুত্রেই এই লেখ। অলেখও বলতে পারেন, তবে অলীক নয়।
গতবছর, কিংবা তার আগের বছরও হতে পারে, গিন্নির পেছনে পেছনে থলে হাতে ঘুরছিলাম, উনি এটা কিনছেন, সেটা কিনছেন আর সটান চালান করে দিচ্ছেন এই অধমের বোঝায়। মানে এটা আমার মতন সব ওয়ার্স-হাফদেরই বৈবাহিক কর্তব্যের মধ্যেই পরে, সুতরাং স্ক্যান্ডেলাইজড হবার কিছু নেই। ড্রাইভারি আর কুলিগিরি আমাদের কুলীন গৌরব, আমরা অনেকেই সদর্পে তা করে থাকি, যাঁদের এতটা সুখ সয়না, তাঁরা বিড়বিড়িয়ে স্বগদক্তি করতে থাকেন, সেটা অন্য কথা। যাইহোক, আসল ব্যাখ্যানে আসি। কোনও একটি নামকরা দোকানে উনি 'ইয়েস ম্যাদাম'দের দ্বারা পরিবৃত হয়ে পরিক্রমা করছেন আর আমি ইতি-উতি চাইছি, হটাত কুনুইএর রামগুঁতোয় বোঝা গেল আমি যথেষ্ট মনযোগী নই। ফিসফিস করে ভ্রু উঁচিয়ে বললেন 'হিরোইন'। আমি আবার চরম সেকেলে তো, সুচিত্রা সেনের থেকে বিশেষ এগতে পারিনি, চারদিকে তাকিয়ে তিনি যে কিনি বোঝবার চেষ্টা করছি। এবার নির্ভুল দিগনির্দেশ এল। ভাই, সত্যি বলছি, প্রথমে অবিশ্বাস, তারপর দীর্ঘশ্বাস ! তারপর শঙ্কা, বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত।
এতটা ইতিবৃত্তের অবতারণা এই কারনে যে গতকাল চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে দেখি সেই উনি একটি পিয়ানোর চারদিকে ক্যাটওয়াক করতে করতে 'বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে' গাইতে গাইতে পাক খাচ্ছেন, এবং এতদিন যার শব্দরূপ মুখপত্রিকায় দেখেছি, তার চলমান রূপ দেখে আমি তো যারপরনাই আহ্লাদিত। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এপাস ও পাস করতে করতে, আর একটি চ্যানেলে দেখি এক ফুটফুটে কন্যা দাঁত চিপে চিপে নামতা পড়ার মত করে ঐটিই আবার লাইভ গাইছেন। বোঝা গেল ইনিই এই আগমনীর নব্য গায়িকা, আর সুরকার অতি বিখ্যাত, যার সুরের বৈচিত্র্য এমনই, তাঁর একটি সুরের থেকে আর একটিকে কিছুতেই আলাদা করা সম্ভব নয়, অন্তত আমার মতন নভিসদের পক্ষে। অনেকটা গভীর রাতেও কালো চশমায় করুণানিধি হয়ে থাকা আর এক ভদ্রলোকের পপুলার গানগুলির মতন। বসন্তের এ হেন সমাগমে আমি বেশ কুপোকাত, এখনো কানে বাজছে সেই নবীন আগমনবার্তা। বেজেই চলেছে।
No comments:
Post a Comment