হারিদ্বার
এখনো এই শরীরে শিবপুত্রী মা নর্মদার দর্শনলাভ হয়নি আমার। তবে শুনেছি মা গঙ্গা সারাদিন ধরে গঙ্গোত্রী থেকে সাগর পর্য্যন্ত গোটা তট জুড়ে সমস্ত পাপীতাপি স্নানার্থীদের মনঃক্লেদ নিজের শরীরে ধারণ করে একটি কৃষ্ণবর্ণ গাভীর রূপ ধরে সন্ধ্যায় পরমপাবন রেবানদীতে অবগাহন করেন আর স্নানের পর শ্বেতশুভ্র নির্মল গোরূপ ধরে শুচিশুদ্ধা হয়ে উঠে আসেন। মহাদেবকন্যার পবিত্র সলিল-শরীর স্পর্শ করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে বহুবার পবিত্র গঙ্গাদর্শন এবং গঙ্গাস্নানের সৌভাগ্য হয়েছে এবং সেই সূত্রে মা গঙ্গার সাথে একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে গোটা জীবন জুড়ে। এই সম্পর্কটি বোধহয় শুধুমাত্র এক জন্মের নয়, হয়তো জন্মান্তরেরও। আর এই যোগসূত্র কিন্তু ভাগীরথী-হুগলি তীরবর্তী কলকাতাবাসের সুবাদে নয়, মূলতঃ হরিদ্বারের কল্যাণে। কোনোদিন হরিদ্বারের অভিজ্ঞতার কথা আগে লিখিনি, গিন্নি এবং দুজন বন্ধু ছাড়া বলিওনি কাউকে।
যখনই শুনি পরিচিত কেউ হরিদ্বার যাচ্ছেন বা হরিদ্বার পেরিয়ে দেবভূমিতে আরো ওপরে যাবেন, মনটা কেমন যেন বড্ড বেশি 'যাই যাই' করে নেচে ওঠে। বহুদশক আগে যেবার প্রথম হরিদ্বার দর্শন করি, সেবার রাস্তায় চলতে চলতে মনে হয়েছিল এসব আমার খুব চেনা। রামঘাটে সন্ধ্যায় বসে থাকতে থাকতে মনে হয়েছিল এই জায়গা আমার চেনা, এর বাতাসের গন্ধ আমার চেনা, এর প্রকৃতিও আমার চেনা। তারপর বহুবার ফিরে ফিরে গেছি হরিদ্বারে, সুযোগ পেলেই কিছুদিন করে থেকেছি, আর পায়ে হেঁটে সকাল থেকে সন্ধ্যে অলিতেগলিতে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে সূর্যাস্ত হয়ে গেছে, টেরটিও পাইনি। হরিদ্বার আমায় টানে, ভীষণভাবে টানে। হরিদ্বার আমার নিজস্ব জায়গা, এ বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। ওখানে যে শরীরের বাস ছিল তার ঠিকানা হয়তো এই শরীর জানেনা, সেই শরীরের আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবদের কথা হয়তো এখনকার শরীরের স্মরণে নেই, কিন্তু স্থানমাহাত্ম যাবে কোথায়?
তবে একেবারে কিছুই কি মনে নেই? যে ক'বারই গেছি, প্রথম দর্শনেই বড় আপন মনে হওয়া গঙ্গাপারের একটি নির্দিষ্ট বহুপুরানো একতলা বাড়ির আশেপাশে পান্থশালা খুঁজে নিয়েছি প্রতিবার, ইচ্ছে করে। আশেপাশে ঘুরতে ফিরতে বারবার ওটার কালো রংচটা খোলা বা বন্ধ দরজাটার দিকে অজানা তৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়ে থেকেছি। প্রতিবার অনেকখানি হেঁটে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট দোকানে মাটির ভাঁড়ে গরম দুধ খেয়ে অন্যান্য সব জায়গার চেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়েছি আর গঙ্গার তীরে যেখানে এখন পুণ্যার্থীরা কমার্শিয়াল গঙ্গা আরতির জন্য ভিড় জমান, সেসব পেরিয়ে নির্জন শ্রীগঙ্গাজি মহারাজ ভগীরথজির প্রাচীন মন্দিরের চাতালে নিভৃতে গঙ্গাস্তব গেয়ে অনাবিল আনন্দ পেয়েছি। কয়েকবার মনে হয়েছে ওই ক্ষয়া ক্ষয়া বাড়িটার ততোধিক ক্ষয়ে যাওয়া কাঠের সদর দরজাটা ঠেলে খুলে ভেতরের শানবাঁধানো উঠোনের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াই, বাড়ির ভেতরটা একটু ভালো করে দেখি, কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠিনি। হয়তো সবটাই কল্পনা, শুধুমাত্র বুকের টানটা ছাড়া। তিনদশক ধরে অনেক চলমান ছবি তুলেছি হরিদ্বারের, সেসব কোনো এক হার্ডডিস্কে বন্ধ রয়েছে, ইচ্ছে করলেই মনের স্ক্রিনে ফুটিয়ে তোলা যায়। বড় চেনা, বড় চেনা এই শহর। আগামীকাল গিন্নি রওনা হচ্ছেন দেবভূমির উদ্দেশ্যে, হরিদ্বার হয়েই যাবেন এবং ফিরবেন। আমারও ইচ্ছে করছে দৌড়ে পৌঁছে যাই, মা গঙ্গার দর্শন করি, গঙ্গাস্নান করে স্নিগ্ধ হৈ, কিন্তু এবারে আর হলো না। হয়তো পরে কোনো একদিন অথবা পরের কোনো এক শরীরে আবার - কে জানে?
সদ্যঃ পাতকসংহন্ত্রী সদ্যোদুঃখবিনাশিনী।
সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমা গতিঃ।।
২০১১সালে মনে হয়েছিল এবারে হয়তো হরিদ্বারে একটা স্থায়ী আস্তানা গড়া যাবে, শেষমেশ আশাপূরণ হয়নি। তার পরের বছর একটি পোস্টে গঙ্গাদ্বার হরিদ্বার সম্পর্কে লিখেছিলাম:
Gangadwára.....where the palace of King Daksha used to be and where lived Lord Shiva's consort Devi Sati......where a drop of Amrit fell in what is now called the Brahma Kund during the churning of the oceans or Samudra Manthan, spilled accidentally from the pitcher carried by Garuda.......which is refered to as a Tirtha by Rishi Dhaumya to Yudhistir in the Vanaparva of the Mahabharat.......where Rishi Agastya did his penance with the help of his wife Lopamudra........where Sage Kapila is said to have an ashram giving it another ancient name Kapila or Kapilastan.........now known both as Haridwar (gateway to Lord Vishnu in Badrinath) and Hardwar (gateway to Lord Shiva in Kedarnath)
No comments:
Post a Comment