একজন মানুষ যেমন আগের আগের জন্মের কর্মফলের নিট ফলাফল-স্বরূপ প্রারব্ধ ঘাড়ে করে নিয়ে জন্মান এবং এই জন্মের সু অথবা কু কর্মফলের কারণে সেই প্রারব্ধকে হয় খণ্ডন অথবা বর্ধন করেন, ঠিক সেইরকমই যেকোনো জাতির জীবনেও ওই একই প্রারব্ধ আর কর্মফলের সূত্র কাজ করে, তবে সমষ্টিগতভাবে, যা সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তির জীবনকেও প্রভাবিত করে। আমরা কোন দেশে জন্মেছি, কোন প্রদেশে জন্মেছি, কোন পরিবারে জন্মেছি, কোন সংস্কারে লালিত পালিত হচ্ছি - সবটাই আমাদের প্রারব্ধ। আর আমরা যে এই জাতিতেই জন্মেছি এবং আমাদের কর্মফল জাতিকেও ভোগ করতে হচ্ছে, এটা সেই জাতির প্রারব্ধ। দেখবেন অনেক সময় এমন হয় যে একেবারে হওয়া কাজ ঘেঁটে গেল, চরম অশান্তির কারণ হয়ে উঠলো, অথচ এমনটা ঘটার কোনো পূর্ব ইঙ্গিতই ছিলনা - প্রারব্ধ। জাতির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। হটাৎ বলা নেই কওয়া নেই কোত্থেকে হৈ হৈ করে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিছু বর্বর এসে লুটপাট করে, বহু মন্দির আর শ্রীবিগ্রহ ভেঙেচুরে, শাস্ত্রগ্রন্থ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে, জোর করে নিজেদের বর্বরতা কিছু মানুষের মধ্যে বপন করে, গোটা সমাজকে কলুষিত করে দিয়ে চলে গেল - কি বলবেন, জাতির প্রারব্ধ নয়? যদি নিজেদের মধ্যে জাতবিচার না করে, জাতি সু আর কু-এর মধ্যে জাতবিচার করতো আর সবাই মিলে একসাথে এক জাতি হিসেবে বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারতো তাহলে সেই কর্মফলের দ্বারা পরাধীনতার প্রারব্ধ খণ্ডন হয়ে যেত, কিন্তু জাতি পারলো না। বারবার অবতারেরা এলেন, তাঁদের দূতরা এলেন, বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণহেতু মানবতার ধাত্রীভূমি আমাদের এই পবিত্র হিন্দুভূমির নিজের ক্ষমতা এবং খামতি সম্পর্কে আত্মপোলব্ধির বড় প্রয়োজন, কিন্তু জাতি জাগলো না আর দীর্ঘ সময় ধরে জন্মজন্মান্তরের সঞ্চিত পাপও আর স্খলন করা গেলনা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য - দেশভাগ থেকে শুরু করে এখন যে শ্রদ্ধাহীনতা, ক্ষুদ্রতা, অপরিসীম লোভ, লালসা, হিংসা, পরনির্ভরতা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি সব মিলিয়ে এক সার্বজনীন নৈরাজ্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটাও বাঙ্গালী জাতির প্রারব্ধ - তারা সত্যিকারের শ্রীচৈতন্যকে বুঝতে পারেনি, মহীরুহকে লতাগুল্ম বানিয়ে ছেড়েছে। যাইহোক, জন্মান্তরবাদ তত্বের মতে অহেতুকি ভগবৎ কৃপায় কোনো না কোনো এক জন্মে মানুষের বোধোদয় ঠিকই হয় এবং তার জীবন অবশেষে প্রারব্ধশূন্যতার দিকে মোড় নেয়। জাতির জীবনেও এমনটাই হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে বহু সভ্যতার উত্থান ও পতন এবং পুনরুত্থানের মধ্যেই এর প্রমাণ ছড়িয়ে আছে, ইহুদীরা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এখনই বাঙ্গালীর জাগার সময় হয়েছে কিনা আমি জানিনা, কিন্তু ভারত আবার জাগছে। আর ভারত জাগলে বঙ্গভূমিও আজ নয় কাল জাগতে বাধ্য। ভবিষ্যৎ আশাময়।
No comments:
Post a Comment