Sunday, August 29, 2021

কাল আর যাপন

যেটুকু বুঝেছি, generally হিন্দু সভ্যতায় কালচক্র (time cycle) হলো প্রায় সব দর্শনেরই মধ্যবিন্দু। যেমন ছয়টি ঋতুই কালের নিয়মে একের পর এক নির্দিষ্ট cycle মেনে চলতে থাকে তেমনিই ঋত (Cosmic order), সত্য (Truth), ধর্ম (Universal Law) এবং ঋণ (Debts owed to ancestors, Rishis and nature) ওই একই প্রথায় একটি নির্দিষ্ট cycle মেনে চলতে থাকে। পূর্বপুরুষের প্রজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে, ধর্মের পথ ধরে, সত্যকে আশ্রয় করে পরমসত্যে লীন হয়ে যাওয়া একটা গোটা জন্মচক্রের পরিণতি। সেই জন্যই বারেবারে জন্ম-মৃত্যু-পুনর্জন্মের cycle চলে আর সেইজন্যই ধর্মাশ্রয়ী সুকর্মের মাধ্যমে বাজে কর্মফল ক্ষয় করে করে শেষে ব্রহ্মকে উপলব্ধি করার সুযোগ সবার আছে, ফলে eternal hell বা eternal heaven বলে আমাদের দর্শনে কিছু নেই। এবং পুরো দর্শনটিই বিজ্ঞানের (science) ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যা মূলত প্রত্যক্ষ প্রমান (empirical evidence) নির্ভর কিন্তু তারপরেও stage by stage ধীরে ধীরে মানুষের বোধবুদ্ধি অনুযায়ী অনুমান (inference), উপমান (analogy), অর্থপ্রাপ্তি (deductive evidence) ও শেষে শব্দ (scriptural authority) অবধি নামতে পারে। লক্ষ্য করার বিষয় হলো শব্দ কিন্তু last resort আর প্রত্যক্ষ প্রমান সবচেয়ে ওপরে কারণ time cycle চোখের সামনে দেখা যায়, তাকে জীবনের প্রতিটি বিষয়ের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে বোঝা যায় - উদাহরণ স্বরূপ সুখ এবং দুঃখ একটা cyclical order এ চলতে থাকে, ক্ষুধা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পর পায়, জাগরণ এবং ঘুম দিন আর রাতের cycle এর সাথে জোড়া, ফুলের পর ফল হয়, ইত্যাদি। মূল কথা হলো কেউই ব্রাত্য নন, যিনি যখন realise করবেন যে তাঁর সত্যিকারের আমিটাকে খোঁজা প্রয়োজন, সেই দিন থেকেই তাঁর reverse osmosis চালু হয়ে যাবে এবং এখানে final day of judgement এর কোনো আষাঢ়ে গল্প নেই - সবটাই জীবের নিজের হাতে। সত্যিকারের আমির না কোনো শুরু না শেষ, না তার কোনো ঈশ্বর, না কোনো শব্দ - সে সনাতন, অব্যক্ত ও অবিভক্ত। নামরূপী ও অনামরূপী সবকিছুই শুধুমাত্র আদি ও অনন্ত ব্রহ্মের (Universal Consciousness) বিভিন্ন কায়িক বা দার্শনিক manifestation মাত্র।

এরপর আসে, যাঁরা অনুসন্ধানে বেরোবেন, তাঁদের ideal living এর বিষয়। পাঁচটি 'পরিহার' অর্থাৎ অহিংসা, সত্যবাদিতা, অচৌর্য, অপরিগ্রহ এবং কামশুন্যতার মধ্যে অপরিগ্রহ হলো বেশ কঠিন একটি concept। অপরিগ্রহ মানে হলো মূলত অনাসক্তি কিন্তু তার মধ্যেও অন্তঃপ্রবৃত্তি (নিজের পছন্দ/অপছন্দ) ও বাহ্যপ্রবৃত্তির (বিষয়েচ্ছা/ভোগেচ্ছা ইত্যাদি) মধ্যে পার্থক্য থাকতে বাধ্য। অবশ্য অপরিগ্রহ বলতে সাধারণ ব্যাখ্যায় 'কেউ নিজে থেকে দিলে ভিক্ষা নেব কিন্তু নিজে আগবাড়িয়ে কিছু চাইবো না' বোঝায়, যা আপাতদৃষ্টিতে হয়তো কেবলমাত্র স্থূল শারীরিক চাহিদাপূরণের ক্ষেত্রে একটি মানসিক restraint-এর ইঙ্গিত, কিন্তু এর পেছনে আসলে ঈশ্বরের ইচ্ছার ওপর সম্পুর্ন নির্ভরতা, আস্থা এবং তাঁতে পূর্ণ সমর্পণের ভাব কাজ করে। এছাড়াও সত্য দম দয়া অক্রোধ আর্জব সন্তোষ তপস্যা স্বাধ্যায় শৌচ এবং মিতাহার - সবটা মিলিয়ে যাপনের একটা গোটা eco-system। দম মানে হলো দমন - নিজের কুপ্রবৃত্তিকে দমন, কমেচ্ছাকে দমন ইত্যাদি; আর্জব মানে ঋজুতা বা সারল্য আর স্বাধ্যায় মানে শাস্ত্রপাঠ। এগুলি জৈনদের কৃত্য বটে কিন্তু যিনিই আত্মানুসন্ধানে ব্রতী হবেন তাঁদের সকলের পক্ষেই এইগুলি common factor। হিন্দু সভ্যতায় কোনো religious dogma নেই, সবটাই way of life। ওটি মানতে পারলে মন আপনা থেকেই এমন আধ্যাত্মিক উচ্চতায় উঠে যাবে যে তারপর আর rigidity-র কোনো জায়গা থাকে না - সব পথকেই নিজের পথ বলে মনে হয়। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সাধন-জীবন নানা পথ ধরে শেষে সেই একই সনাতন সত্য বা eternal truth-এর উপলব্ধির মূর্তরূপ। এর আগের অবতারে শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন এই শাশ্বত দর্শনের ব্যবহারিক প্রতিরূপ আর শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন এর বৌদ্ধিক প্রতিরূপ।

No comments:

Post a Comment