মায়ার আক্ষরিক অর্থ বিভ্রম বা যাদু। ব্রহ্ম মায়া সৃষ্টি করেছেন নির্গুণ থেকে সগুন হয়ে সৃষ্টির মজা উপভোগ করার উদ্দেশ্যে। তারপর মায়া এই মহাজাগতিক বিভ্রম সৃষ্টি করেছেন - যেন বিশ্বব্রহ্মান্ড সব সত্যিকারের অর্থাৎ নিত্য, indestructible - তবে খেলুড়েরা কেউ এই মায়ার জগৎকে অনুধাবনই না করতে পারলে ব্রহ্মের আর মজা করা হলো কই? সেইসূত্রেই মানুষের মন তৈরি করেছেন তিনি। মন মায়ার এক অনন্য এবং অনবদ্য সৃষ্টি যা apparent বাস্তবের ভেতরেও আরো আরো apparent বাস্তব তৈরি করে একেবারে ভড়কে দিতে পারে - সেটা কখনো ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে, কখনো বা জাগ্রত অবস্থায় কল্পনায়।
মানুষের মনের কি অসীম ক্ষমতা ভাবুন, একবার ঘুমালেই হলো, চোখের নিমেষে একটা গোটা virtual world তৈরি করে ফেলে তাতে একেবারে বাস্তবের মতন সব অনুভূতি, সব অভিজ্ঞতাকে নিখুঁতভাবে recreate করে দেয় - এত যে মানুষের বোধ, বুদ্ধি, বিচার - সেইসময় সব ফেল! আবার এই মনই মনে মনে নানারকম তথ্য proccess করে প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার চেতনায় plan A plan B plan C ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে আর বুদ্ধি আর বিবেকের সাথে মিটিং করে স্থির করে দেয় কোন পরিস্থিতিতে কখন ঠিক কোন কাজটা করণীয়। সামনে দেখছি কাঠের টেবিল, সেটা আলো হয়ে চোখ দিয়ে ঢুকে তড়িৎ তরঙ্গ হয়ে ব্রেনে গিয়ে টোকা মারছে আর তারপর সেই তথ্যকে process করে মন বলছে এর ওপর পা তুলে দিয়ে আরাম করে বোস আবার বুদ্ধি মনকে বলছে না, এর ওপর বই আছে, মা সরস্বতী, ওখানে পা দেওয়া উচিত নয় - তখন মন সেই উপদেশ মেনে নিয়ে নিজের আগের command withdraw করছে।
শরীর কিন্তু তাই তাই করে চলেছে যা মন তাকে বলছে - একবার পা দুটি এগিয়ে দিয়েই মাঝপথে গুটিয়ে নিচ্ছে - কি মজা, তাই না? তাহলে মোদ্দা কথা কি দাঁড়ালো? আমাদের এই 'বাস্তব' দৈহিক অস্তিত্বের একটি মূল বিন্দু হলো শরীরের boss-রূপী মন। আর মনের boss বুদ্ধি, তার ওপর বুদ্ধির boss - 'আমি'। সত্যিকারের আমি। হয় মন বুদ্ধি - এরা আমায় control করবে অথবা আমি এদের control করবো - তার ওপরে নির্ভর করছে how I shall be able to utilise this human lifetime. কিছু মানুষ আছেন যাঁরা সংসার চালানার জন্য domestic help এর ওপর নির্ভরশীল আর কিছু মানুষ আছেন যাঁরা সত্যিকারের কর্তা - সংসার তাঁদের পরিচালনার ওপর নির্ভরশীল, including all subordinates.
তাই এই 'আমি'টা যে ঠিক কে, সে কেমন, এটা define করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। Clearly, 'আমি' কারো subservient নই নাহলে আমার শরীর, আমার মন, আমার বুদ্ধি ইত্যাদি বলা হতো না, উল্টে আমি তাদের, এমনটা বলা হতো। প্রতিদিন যেহেতু বাস্তবে দেখছি শরীর মনের instruction-এর ওপর নির্ভরশীল আর মন তার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বোধ বুদ্ধি বিবেক ইত্যাদির রায়ের ওপর নির্ভরশীল, আর ওগুলি আবার আমার ভাবের ওপর নির্ভরশীল, সেহেতু আমিই হলাম আসল প্রভু। তাহলে বুদ্ধি কেমনভাবে চলবে - না আমি যেভাবে চালাবো - কুবুদ্ধি হলে জগতের ক্ষতি হবে আর সুবুদ্ধি হলে উপকার হবে। জগৎ মানে কি, না বিভিন্ন আধারে মায়ার বিভিন্ন illusory প্রকাশ। যেমন বিভিন্ন পুকুর থেকে শুরু করে প্রতিটি নদী নালা খাল বিল ডোবায় প্রতিদিন সেই একই সূর্য্যের প্রতিবিম্ব দেখি, যেগুলোর যে কোনোটাতে জল শুকিয়ে গেলেই সূর্য্যদেব ভোজবাজির মতন সেটি থেকে গায়েব হয়ে যান।
এ কোন মায়া? যে মায়ার প্রভাবে আমি যেন আসল আমি নই - জীবরূপী। এই 'না-আমি'র এক নিজস্ব অহঙ্কার তৈরি হয় আর প্রভু হওয়া স্বত্তেও কখনো নিজেকে বুদ্ধি ভেবে ভ্রমিত হই, কখনো মন ভেবে, আবার কখনো বা শরীর। আমি তাহলে আসলে কি? আমি সেই অনন্ত অসীম অনাদি আনন্দময় অবর্ণনীয় সত্যস্বত্তা - purety personified - pure existence, pure consciousness, pure bliss - সৎ চিৎ আনন্দ - সচ্চিদানন্দ - ব্রহ্ম। এই পুরো মায়ার জগৎটাই যেহেতু আমার existential আনন্দ দিয়ে আমারই আনন্দবর্ধনের জন্য তৈরি, আমি যেহেতু আমারই প্রকাশের বুদ্ধিকে অহঙ্কার দিয়ে ভ্রমিত করে তার মনকে নিয়ে ছেলেখেলা করা দেখে আনন্দ পাই, আবার সেই মন যখন আমারই দ্বারা প্রেরিত অবতার এবং সদগুরুর tutorial-এ তালিম পেয়ে আমার লুকোচুরি খেলাটা ধরে ফেলে সমস্ত proccessed information বুদ্ধির সামনে তুলে ধরে তাকে চমকে দেয় আর বুদ্ধি দৌড়ে এসে আমাকে ছুঁয়ে বলে 'আব্বুলিশ', তখনও আমারই খেলা জেতার ultimate আনন্দ হয়।
তাই প্রতিটি জীবের আনন্দময় কোষের ভেতর আমার বাস, তাদের সূক্ষ্ম শরীর আর কারণ শরীরের সমস্ত লম্ফঝম্ফের আমি দ্রষ্টা, অলক্ষ্যে থেকে identity গুলিয়ে দিয়ে মজা আমিই দেখি আর স্বরূপ ধরা পড়ে গেলে আমিই চরম উপভোগ করি। আমি তো ধরা দিতেই চাই - ওটাই তো খেলার ultimate objective, কিন্তু আত্মবোধের খেলাটা খেলতে চাইতে হবে তো!
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাই নি,
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি,
আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
আমার সকল ভালোবাসায়
সকল আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে, আমি তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়--
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে
আমার দুঃখসুখের গানে সুর দিয়েছ তুমি,
আমি তোমার গান তো গাই নি ॥
No comments:
Post a Comment