আজ ব্রিটেনের প্রয়াত রানীর রাষ্ট্রীয় অন্তেষ্টিতে চার্চে যে সব ভাষণ হলো তাতে তাঁকে এক বিশেষ ধারার খ্রিষ্ট পন্থাবলম্বীদের রক্ষাকর্ত্রী এবং একজন পরম খ্রিষ্টান বলে বারেবারে সম্বোধিত করা হলো। দিন দশেক আগে যখন রাজা তৃতীয় চার্লস দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন তখন গোটা প্রিভি কাউন্সিলের সামনে দাঁড়িয়ে তিনিও নিজেকে defender of the faith বলেই অবিহিত করেছিলেন এবং স্কটল্যান্ডের চার্চের রক্ষক হিসেবেও শপথ নিয়েছিলেন। বলাবাহুল্য faiths নয় কিন্তু, faith এবং সেই faith অবশ্যই খ্রিষ্টান পন্থের একটি ধারাবিশেষ, যাকে protestant বলে।
অর্থাৎ ব্রিটেনের রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি অন্যান্য এমন কিছু দেশেরও রাষ্ট্রপ্রধান যেখানকার মূল জনজাতিরা খ্রিষ্ট পন্থাবলম্বী নন, তিনি সমস্ত পন্থ তো দূর, খ্রিষ্টানদেরই অন্য ধারাগুলির রক্ষক নন। এত কথা বলার উদ্দেশ্য এই যে রাজা এবং তাঁর দৌলতে রাষ্ট্রের একটি বিশিষ্ট পন্থীয় ধারা থাকা স্বত্তেও ব্রিটেনকে কি কেউ theocratic রাষ্ট্র বলে? বলে না তার কারণ রাষ্ট্রশক্তি বিভিন্ন পন্থাবলম্বীদের মধ্যে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করে না, দুর্ভাগ্যজনকভাবে যা অনেক ইসলামিক দেশেই সরকারিভাবে করা হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো যেখানে রাষ্ট্রপ্রধান স্বয়ং নিজেকে একটি মাত্র পন্থের রক্ষাকর্তা হিসেবে সরকারিভাবে শপথ নেওয়া স্বত্তেও রাষ্ট্র পন্থনিরপেক্ষ থাকতে পারে, সেখানে ভারতবর্ষের বেলায় শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব ইত্যাদি পন্থাচারের প্রাধান্যকে বাদ দিয়ে কেবলমাত্র প্রাচীনকাল থেকে প্রবাহমান ধর্মবোধ এবং একীভূত সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে কেন? প্রবঞ্চনার মাধ্যমে সংবিধানে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া socialist আর secular শব্দগুলির জেরে এখন কি আমরা খুব ভালো আছি? ওগুলোর মধ্যে কি আমাদের existential ethos আছে?
এই যে এত মারামারি কাটাকাটি - সেসব কিসের জন্য? মতবাদ-অসহিষ্ণুতার জন্য, যা ভারতীয় সংস্কৃতিতে কস্মিনকালে ছিল না, পুরোটাই বিজাতীয় পন্থের সাথে সাথে আমদানিকৃত। অর্থাৎ, অন্য অপসংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যত আমরা আমাদের সহিষ্ণু, সংস্কারমুক্ত, সদাচারী জীবনবোধ থেকে সরে গেছি, তত আমাদের অনেকের মধ্যে অন্যের মতকে সন্মান দেওয়ার প্রবণতা কমেছে এবং সেই সাথে নিজের মতকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।
পন্থ যার যার কিন্তু ধর্ম সবার। অর্থাৎ ভারতীয় সমাজে থাকতে গেলে এবং সততার সাথে নিজের নিজের কর্তব্য নির্বাহ করতে গেলে গোটা সমাজে ভালো-মন্দের মাপদন্ড একটাই হওয়া উচিত - আমাদের পূর্বপুরুষ হাজার হাজার বছর ধরে মাজাঘষা করতে করতে যার একেবারে একটা perfect model তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন, যাকে আমরা হিন্দুধর্মবোধ বা হিন্দুত্ব বলি। ভারতকে আবার অর্থ কাম এবং মোক্ষলাভের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে গেলে ফের সেটাই করতে হবে যেটি আমাদের পূর্বপুরুষ অনুসরণ করে হাতে হাতে সুফল পেয়েছিলেন - ধর্মীয় হতে হবে। পন্থীয় নয় কিন্তু, ধর্মীয়। আর তার জন্য প্রথমে আমাদের হিন্দুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার কারণ অন্য কোনো সভ্যতায় 'ধর্ম' বলে কোনো বস্তু নেই, আছে কেবল পন্থ বা religion।
আমাদের রাষ্ট্র যদি সত্যি সত্যিই পন্থনিরপেক্ষ হতে চায়, তাহলে তাকে সত্যিকারের ধর্মনিষ্ঠ হতেই হবে। আর সত্যিকারের ধর্মনিষ্ঠ হতে গেলে মনে প্রাণে সাংস্কৃতিকভাবে হিন্দু হওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায়ই নেই, কারণ অন্য কোনো সংস্কৃতিতে ধর্মের কোনো প্রতিশব্দই নেই যে। সারা বিশ্বজুড়ে মানুষ আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে protestant মতানুসারে পালিত একজন protestant নারীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখছেন, কারণ সেটাই সমীচীন। যদি নিজেদের সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার কারণে বিভিন্ন মতানুসারে রানীর একটা খিচুড়ি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হতো, সেটা বরং ভড়ং হতো। আমরা গত ৭৫ বছর ধরে এই মিথ্যে ভড়ংটাই করে আসছি, আর না। আমাদেরও শিকড়ে ফেরার সময় হয়ে গেছে। আমাদের রাষ্ট্রের জন্য হিন্দুত্ব ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মানক নেই। জয় মা ভারতী, জয় হিন্দুরাষ্ট্র।
No comments:
Post a Comment