পশ্চিমবঙ্গে যদি কোনোদিন সত্যিকারের বুকের পাটাওয়ালা সরকার ক্ষমতায় আসেন তাহলে অরবিন্দ ঘোষ, রাসবিহারী বসু, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী, যতীন্দ্রনাথ দাস, সূর্য সেন, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, বটুকেস্বর দত্ত, প্রফুল্লচন্দ্র চাকী, ক্ষুদিরাম বসু, বিনয় কুমার বসু, গণেশ ঘোষ, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, লীলা রায়, শোভারানী, কল্যাণী দাস (ভট্টাচার্য্য) প্রমুখ অসংখ্য বীরশ্রেষ্ঠ বিপ্লবীদের স্মৃতি মাথায় করে রাখবেন। এঁদের বিষয়ে বাঙালিকে বিশদে পড়ানো হবে, এঁদের জন্মস্থান তীর্থক্ষেত্ররূপে চিহ্নিত হবে, এঁদের দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রবোধকে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সবরকম প্রয়াস হবে।
চরখা কেটে এ দেশ স্বাধীন হয়নি। এই বীর বিপ্লবীদের অপরিসীম আত্মত্যাগ না থাকলে এবং রাসবিহারী বসু ও বিনায়ক দামোদর সভারকারের অনুপ্রেরণায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ পরাধীন ভারতকে আক্রমণ না করলে ও ফলস্বরূপ ইংরেজ অধীনস্ত ভারতীয় নৌবাহিনীতে বিদ্রোহ না হলে, ভারত হয়তো ১৯৪৭এ স্বাধীন হতো না।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে গান্ধীজির একটা ভূমিকা আছে কিন্তু সেটা যত বড় করে দেখানো হয়, আসলে তার ধারেকাছেও না। ভারতের স্বাধীনতার জন্য যদি কোনো একটি ভারতীয় জাতির সর্বোচ্চ অবদান থেকে থাকে, তাহলে সেটা হিন্দু বাঙালির, সেলুলার এবং অন্যান্য জেল যার সাক্ষ্য আজও বহন করে চলেছে। এই রাষ্ট্রবোধের ইতিহাস, বস্তুতঃ হিন্দু বাঙালির বীরত্বগাথা, তার গৌরবময় জাতিস্বত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। হিন্দু বাঙালি বিপ্লবীদের অবদান ছোট করে দেখানো আসলে একটা গভীর ষড়যন্ত্রের ফল কারণ শৌর্যে, বীর্যে, বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, অনুভবে, অনুরাগে, শিল্পে, সাহিত্যে, উদ্ভাবনীশক্তিতে, সৃজনশীলতায় - সবকিছুতে যে জাতি সারা দেশের মধ্যে প্রমুখতম ছিল, তাকে তার মূল থেকে বিচ্ছিন্ন না করতে পারলে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যেত না যে। কংগ্রেসের সক্রিয় সহযোগিতায় দোসর বামপন্থীরা পাঁচ দশক ধরে ঠিক সেই চেষ্টাটাই করে গেছে।
বাবর যেমন ভারতীয় ভাবধারাকে ছোট করার জন্য রামজন্মভূমির মন্দির ভাঙিয়েছিল, ঠিক তেমনই কংগ্রেসি সিস্টেম সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালিকে হেয় করে কৃত্রিমভাবে অন্যদের বড় করে দেখাবার চেষ্টা করে গেছে। সবুজ বিপ্লব গমে হয়েছে কিন্তু ধানে হয়নি, স্যার বীরেন মুখার্জির ইস্কো জাতীয়করণ হয়েছে কিন্তু টাটাদের টিস্কো হয়নি, এককালে নর্থ ও সাউথ ব্লক কাঁপানো বাঙালি সিভিল সারভেন্টের সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে, বাঙালির ভবিষ্যৎ লাটে ওঠানোর জন্য নকশাল আন্দোলন এখানেই শুরু করা হয়েছে। এগুলো অতীত। অবশেষে দেশে নতুন করে হিন্দুত্বের জোয়ার এসেছে, তাই আমাদের দেশকে আক্রমণকারী বর্বর বাবরের সেনাপতির দ্বারা ভেঙে দেওয়া শ্রীরামজন্মভূমিমন্দির আবার নতুন করে তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে সময় এসেছে হিন্দু বাঙালি জাতিস্বত্তাকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার। সময় এসেছে হিন্দুবিরোধী ইকোসিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ জানাবার। আর সময় এসেছে আবার হিন্দু বাঙালিকে ভারতের সম্মিলিত তেজপুঞ্জের চালিকাশক্তি করে তোলার। আমাদের মননে আজও অতীতের ভারতগৌরব অতীশ দীপঙ্কর যেমন বেঁচে আছেন, তেমনই বেঁচে আছেন আধুনিক ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পিতামহ ভীষ্ম ঋষি রাজনারণ বসু। একবার শৃঙ্খলমুক্ত হতে পারলে আমাদের আটকানো মুশকিল আছে।
No comments:
Post a Comment