আজ সকালে নিউজফিডে হঠাৎই একটা ভিডিও ভেসে উঠলো - বেলুড় মঠে মা গঙ্গায় সদ্য ব্রহ্মলীন পরম পূজনীয় প্রেসিডেন্ট মহারাজের পূত অস্থি বিসর্জনের ভিডিও। মহারাজের যিনি সেবক মহারাজ ছিলেন, সর্বক্ষণ মহারাজের সঙ্গে থাকতেন, তাঁকে আগলে রাখতেন, ভিডিওটিতে তাঁকে দেখলাম। যিনি মাথায় করে অস্থিকলস নিয়ে ঘাটের সিঁড়ি ভেঙে গঙ্গায় নামছিলেন, দুহাত দিয়ে তাঁকে অমনভাবেই মহারাজ ধরেছিলেন যেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট মহারাজকে ধরে নামাচ্ছেন। এই যে dedication, এই আত্মনিবেদন - এ আর কোথায় দেখতে পাবো? চোখে জল এসে গেল। তারপর দেখলাম অন্যদের সাথে সেই সেবক মহারাজও বালতি করে গঙ্গাজল ভরে এনে চিতায় ছড়িয়ে দিয়ে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম করলেন আর সমবেত হাজার হাজার মানুষ হরি ওঁ রামকৃষ্ণ ধ্বনি দিয়ে উঠলেন। ওখানে, ওই মুহূর্তে, সেই ভক্তদের আর পৃথক পরিচয় নেই, তাঁরা সবাই রামকৃষ্ণ পরিবারের সদস্য।
এই প্রসঙ্গেই পরে একটা কথা ভাবছিলাম। রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা কোনোভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন না, স্বামীজীর নিষেধ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন বলে কত না criticism face করতে হয়। কত ভালো কথা, না? ওঁরা শিব জ্ঞানে জীব সেবা করেন স্বামীজীরই দেখানো পথে, ওটাই ওঁদের নিত্যপূজা। নিজেদের হাতে গড়া ইস্কুল, কলেজ, টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়ে অগণিত জাতির ভবিষ্যৎ তৈরি করেন, দাতব্য চিকিৎসালয় বা বড় বড় হাসপাতালের মাধ্যমে আর্তের সেবা করেন, গ্রামোন্নয়ন, স্বনির্ভর প্রকল্প, কৃষির উন্নতি ইত্যাদিতে অজস্র মানুষের আর্থিক উন্নতির সহায়ক হন, বন্যা খরা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রাণ এবং rihabilitation নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কত শাস্ত্রগ্রন্থ, ধর্মগ্রন্থ ইত্যাদি প্রকাশনা করে এবং প্রবচন প্রশিক্ষণ এবং পরিমার্জনের মাধ্যমে সমাজকে উন্নীত হতে সাহায্য করেন, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার বা বিবেকানন্দ বেদ বিদ্যালয়ের মতন ব্যতিক্রমী গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেন, আর্ট, কালচার, নৃত্য, গীত, বাদ্য, সেমিনার, sermon - কি বাদ থাকে? এছাড়া একেবারে তিথি নক্ষত্র ধরে ধরে সারাবছর বিভিন্ন মঠে নানান পূজা অর্চনা তো আছেই। এঁরা সবকিছুই করেন এবং অত্যন্ত সুচারুরূপে করেন কিন্তু রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন - কেন?
মানুষ বলতেই পারেন যে রাজনীতিও তো জীবসেবার একটি মাধ্যম, গোরক্ষনাথ মঠের মোহন্তবাবাজীরা তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত, তাহলে রামকৃষ্ণ মিশন নয় কেন? ওটা ওঁদের tradition, এটা মিশনের। মিশনের জীবসেবা করার যে যে পন্থার কথা আগে বললাম, তাতে স্বার্থ, কালোটাকা আর ময়লা-মনের মানুষদের কোনো স্থান নেই। এই সেবায় মন শুদ্ধ থাকে, সেবককে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়না। সন্ন্যাসী হবেন নিষ্কলঙ্ক, বেদাগ, একেবারে তরোয়ালের ফলার মতন মসৃন। স্বামীজী ছিলেন ক্রান্তদর্ষি, উনি জানতেন রাজনীতি কোন দিকে যেতে চলেছে, ফলে আগে থাকতেই নিজের হাতে গড়া সঙ্ঘকে লক্ষণরেখা টেনে protect করে গেছেন। তাই তো যখন রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা ব্রহ্মলীন হন তখন দল মত নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যেন তাঁদের স্বজন হারান, কোনো ism বা সংকীর্ণ পরিচয় সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। Universal Truth needs no boundaries.
No comments:
Post a Comment