আজ ১১ই চৈত্র ১৪৩০, শ্রীচৈতন্য পূর্ণিমা, বসন্তকাল, শুভ দোলোৎসব। প্রেম নামক যে ঈশ্বরীয় অনুভূতিটি সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে দিয়েছেন, তাঁর যে প্রেম দিয়ে তৈরি সহস্রদলপদ্মরূপী আসনে তিনি স্বয়ং আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে বিরাজমান, সেই নিত্য সত্য অনন্ত আনন্দময়ের আত্মপ্রেমের প্রকাশরূপে এই যে গোটা বিশ্বব্রহ্মান্ড প্রতীয়মান, আজকের এই পবিত্র দিনটি সর্বতোরূপে সেই অদ্বৈতবোধকে উজ্জাপন করার দিন। বাইরে তাকিয়ে দেখুন - পলাশের শাখায় শাখায় যেন প্রেমের আগুন লেগেছে, কৃষ্ণচূড়া, কণকচাঁপা থেকে নিয়ে গাব, গামারি, মণিমালা পর্য্যন্ত প্রতিটি গাছ যেন বসন্তের প্রেমের ঔজ্জ্বল্যে একেবারে ফেটে পড়ছে। আর প্রকৃতির এই বাঁধভাঙা উচ্ছাসের মাধ্যমে যে অনন্তপ্রেমের বাণী তিনি দিচ্ছেন, তাকেই অনুসরণ মানুষ করে একে অপরকে রঙে রঙে রাঙিয়ে তুলে তাঁরই সৃষ্টির মধ্যে তাঁকে অনুভব করে তাঁর সাথে একাত্ম বোধ করতে চেষ্টা করছে, এ ঈশ্বরের লীলা বৈ আর কিই বা? বৃন্দাবনে শ্রীরাধা এবং শ্রীকৃষ্ণ একে অপরের গায়ে আবির ছুঁড়ে দোলযাত্রার সূচনা করেছিলেন। আসলে শ্রীরাধা আর শ্রীকৃষ্ণ এক এবং অদ্বিতীয় কারণ প্রেম দ্বৈতস্বত্তাকে অদ্বৈত করে তোলে, সেটাই তার প্রকৃতি। রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি আসলে অর্ধনারীশ্বর মূর্তি, অবিচ্ছেদ্য, অবর্ণনীয়, সগুন আর নির্গুণ ব্রহ্মের, পুরুষ ও প্রকৃতির, নিত্য ও অনিত্যের একত্রিত বাহ্যিক প্রতিফলন। এ এক অনন্ত প্রেম, যা বুঝতে গেলে প্রকৃতির কাছে ফিরে যেতে হবে। ফুটে ওঠা বেলকুঁড়ির সাথে বাতাসের যে প্রেম, সেটার চরিত্র কি? বসন্তের বার্তা বহন করে আনা বেলকুঁড়ি ফোটে, বাতাসে তার মিষ্টি গন্ধ মিশে যায়, বাতাস সেই সুগন্ধ বয়ে নিয়ে যায় বহু দূরে যেখানে আমি আপনি ছোট্ট বেলগাছটিকে চোখে দেখতে না পেলেও তার মিষ্টি আঘ্রানে পুলকিত হৈ, একইসাথে তার অস্তিত্বকে এবং বসন্তের আগমনকেও অনুভব করতে পারি। এই হলো প্রেমের সত্যিকারের চরিত্র - যা মেলায়, বা সসীমের মধ্যেও অসীমের বার্তা বহন করে আনে। আজ দোল, রঙের উৎসব, জীবনের উৎসব। জীবন মানেই প্রেম কারণ আমাদের প্রত্যেকের উৎস ওটাই। তাই আজ প্রেমের উৎসব, হয়তো সেই কারণেই প্রেমের জীবন্ত প্রতিমূর্তি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পূণ্য আবির্ভাব তিথিও বটে। তাঁর শ্রীচরণে প্রার্থনা করি,
রঙ যেন মোর মর্মে লাগে,
আমার সকল কর্মে লাগে,
সন্ধ্যাদীপের আগায় লাগে,
গভীর রাতের জাগায় লাগে॥
যাবার আগে যাও গো আমায় জাগিয়ে দিয়ে,
রক্তে তোমার চরণ-দোলা লাগিয়ে দিয়ে।
আঁধার নিশার বক্ষে যেমন তারা জাগে,
পাষাণগুহার কক্ষে নিঝর-ধারা জাগে,
মেঘের বুকে যেমন মেঘের মন্দ্র জাগে,
বিশ্ব-নাচের কেন্দ্রে যেমন ছন্দ জাগে,
তেমনি আমায় দোল দিয়ে যাও
যাবার পথে আগিয়ে দিয়ে,
কাঁদন-বাঁধন ভাগিয়ে দিয়ে॥
আপনারা সকলে শুভ দোলযাত্রা উপলক্ষে আমার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও প্রণাম জানবেন। হরিবোল।
No comments:
Post a Comment