Friday, March 8, 2024

শিবমন্ত্র

ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারুণাত্রায় হেতবে। 

নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গত্বিং পরমেশ্বরম॥


এখানে কি বলা হচ্ছে? না, হে পরমেশ্বর শিব, আমি আমার আত্মাকে তোমার পায়ে নিবেদন করছি, তুমি তার গতি করো। এখন, শিব নিজে যেমন তেমনই তো গতি করবেন, উনি তো আর আমায় রাক্ষস বানিয়ে দেবেন না। তা, শিব কেমন? প্রথম লাইনে বলা হচ্ছে যে আমি সেই শিবকে প্রণাম করি যিনি শান্ত আর তিন কারণের হেতু। কি কি কারণ? সৃষ্টি, স্থিতি আর প্রলয়। শিবের স্তুতিতে আর একটি মন্ত্রে আছে, 'তস্মৈ নমঃ পরমকারণ কারণায়' অর্থাৎ হে কারণের পরম কারণ, তোমায় প্রণাম করি - মানে, এই যে সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়যুক্ত বিশ্বব্রহ্মান্ড তৈরি হয়েছে, এও তোমারই ইচ্ছায়, অর্থাৎ তুমিই শক্তি, তুমিই ব্রহ্ম।


এই মন্ত্রের অলৌকিক দ্যোতনা বাদ দিলে, প্রাত্যহিক যাপনে শিবভক্তদের লৌকিক ব্যবহার কেমন হবে, তার নির্দেশও এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে। প্রথম কথা, আমায় বুঝতে হবে যে আমি আত্মা, এই শরীর-মন মাত্র নই। দুই, আমি শিবত্ব অর্থাৎ শিব-অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কারণ যাঁকে চিনি না, জানি না তাঁর কাছে তো আর নিজেকে নিবেদন করতে যাবো না। তিন, তিনি আমার কি গতি করবেন সে সম্পর্কেও আমার সম্যক ধারণা আছে কারণ সমস্ত জাগতিক বন্ধন থেকে তিনি আমায় মুক্ত করে দেবেন, সেটা মেনে নিয়ে এবং কামনা করেই আমি এই পথে হাঁটছি। চার, আমার যে কামনা তা পবিত্র, তা লোভ নয় কারণ আমার লক্ষ্য শিবত্ব প্রাপ্তি। 


শিবত্ব কি? শিবকে বর্ণনা করা হচ্ছে  'সত্যম-শিবম-সুন্দরম' বলে। শিব হচ্ছেন শাশ্বত, তাই একমাত্র চিরসত্য। শিব হচ্ছেন চিরপবিত্র, তাই একমাত্র চিরসুন্দর। এটা আসলে জৈব জীবন থেকে অনন্ত জীবনে উত্তরণের একটি ফর্মুলা। জীবাত্মা প্রথমে প্রবৃত্তির অস্থিরতাকে অতিক্রম করে শান্ত হবে। তারপর ক্রমশই সে নিজের মধ্যে পরমাত্মারূপী সেই অনন্ত অজর অমর চিরসত্যকে উপলব্ধি করে পবিত্রতার প্রতিরূপ হয়ে প্রতিভাত হবে। শিবলিঙ্গ অর্থাৎ শিবের প্রতিরূপের মাথায় জল দেওয়া হয়। জলই জীবন। শিবের মাথায় যখন অর্ঘ্য হিসেবে জল নিবেদন করা হয় তখন আসলে নিজেকেই নিবেদন করা হয় এবং উপরোক্ত মন্ত্রটি বলা হয়। আশাকরি এবার থেকে জল ঢালার এবং এই বিখ্যাত মন্ত্রটি উচ্চারণ করার সময় সচেতনভাবেই তা করা যাবে।

No comments:

Post a Comment