Saturday, February 24, 2024

লাটু মহারাজ

 কাশীর রামকৃষ্ণ মিশনের দোতলায় লাটু মহারাজের ঘরে তাঁর এই তৈলচিত্রটি আছে, আর তার ঠিক উল্টোদিকে তাঁর খাটের পাশের দেওয়ালে আছে মা কালীর এই দিব্য ছবিটি। আসলে মহারাজ মঠে খুব কমই থেকেছেন, উনি মাঠে ঘাটেই থাকতেন বেশি আর শেষে কয়েকবছর ছিলেন বাঙালিটোলায় একটি বাড়িতে, ওনার শরীর যাওয়ার পর ওখান থেকেই ওনার ব্যবহৃত জিনিষপত্তর মঠের এই ঘরে এনে রাখা হয়। আমি ভেজানো দরজা ঠেলে ঐ ঘরে যখন ঢুকেছিলাম, ওই বিশেষ গন্ধটা নাকে আসতেই আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল - সেই গন্ধটা যা একমাত্র প্রাচীন সাধুদের ঘরে পাওয়া যায়। লাটু মহারাজের মধ্যে ঠাকুর ছাড়া আর কিছু নেই - নিরক্ষর ছিলেন, ফলে শুনেছেন প্রচুর কিন্তু নিয়েছেন সেটুকুই যেটুকু ঠাকুরের কাছে যা শিখেছেন তার নিরিখে ওনার মান্য বলে মনে হয়েছে। 


যদিও বলাটা হয়তো politically incorrect হবে, ব্যক্তিগতভাবে আমার লাটু মহারাজকে ঠাকুরেরই extension বলে মনে হয়, যদিও তাঁর সব পার্ষদরাই তাঁর নিজের হাতে গড়া। আমি শ্রীশ্রীলাটুমহারাজের বিশাল বড় fan - এই সিদ্ধপুরুষের মুখের প্রতিটি কথা আমার কাছে সাক্ষাৎ দৈববাণী। আর এই যে মিশনের কর্মকান্ড থেকে তাঁর কন্সিয়াসলি দূরে থাকা এবং ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করে সাধনায় ডুবে থাকা, এটাও কিন্তু ঠাকুরের ইচ্ছাতেই হয়েছে, কারণ লাটু মহারাজের সাথে ঠাকুরের সম্পর্কটা ছিল সর্বাঙ্গীন - শিক্ষক-ছাত্র, গুরু-শিষ্য, ইষ্ট-ভক্ত, প্রভু-ভৃত্য, সেবিত-সেবক, সবরকমের। তাঁর জন্মতিথি অজ্ঞাত, তাই আজকের এই মাঘী পূর্ণিমাকেই তাঁর জন্মতিথি বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। মহারাজের দিব্য শ্রীচরণে আমার ভূমিষ্ট প্রণাম জানাই।


|| অ দ্ভু ত আ ন ন্দ ||


লাটু মহারাজ একদিন বলিয়াছিলেন — "সংস্কার যাওয়া খুব কঠিন—ভগবানের কৃপা ভিন্ন যায় না। অনেক বড় লোকের ছেলে, কোনও অভাব নেই, তবুও চুরি করে। পূর্ব জন্মের সংস্কার। সেই জন্যই তো জন্মান্তর মানতে হয়। শাস্ত্রে বলেছে — জন্মগ্রহণ করে ভালো কাজ করলে মঙ্গল হয়। 

ভাইয়ে ভাইয়ে মিল থাকা খুব দরকার। সকলে সমান রোজগার করতে পারে না। হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না।"


যে বেশী রোজগার করিতে অক্ষম, তাহাকে বলিতেন, "এ সংসার ক'দিনের জন্য। বেশী ভাবিস না, কোনও রকমে সংসার চলে গেলেই হল।"


শ্রীশ্রীমা বলিয়াছিলেন "লাটু কি কম গা? সে সময় লাটু আমার কত কাজ করত। অন্য ছেলেরা আমার সামনে আসতে পারত না।"


একবার এক জনৈক ভক্তকে শ্রীশ্রীমা মাথায় হাত দিয়া আশীর্বাদ করিয়া বলিয়াছিলেন "লাটুর সেবা করলে তোমার কল্যাণ হবে।"

(মূলগ্রন্থ : অদ্ভুতানন্দ প্রসঙ্গ, সংকলক : স্বামী সিদ্ধানন্দ, পৃ.: ১২৫-১২৬)


স্বামী গৌরীশানন্দ — শরৎ মহারাজ একবার লাটু মহারাজকে দেখতে গিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। তাতে ভূমানন্দ স্বামীর মনে হলো— ইনি গুরুভ্রাতা, কত বিদ্বান, পণ্ডিত! ইনি লাটু মহারাজকে প্রণাম করলেন কেন? কথাটা আলোচিত হতে লাগল। অবশেষে শরৎ মহারাজকে প্রশ্ন করা হলো। শরৎ মহারাজ বললেন, "লাটু কত আগে ঠাকুরের কাছে গিয়েছে। ঠাকুরের সমাধি, ভাবের সময় কত দেখেছে, শুনেছে—তাঁকে নানা নাম শুনিয়ে সমাধি ভাঙিয়েছে। আমাদের এখন যে-অবস্থা লাটু বহু দিন আগে তা লাভ করেছে। ও আমাদের চেয়ে ঢের বড়। গুরুতুল্য পূজার পাত্র।"

(লাটু মহারাজের স্মৃতি,  মূলগ্রন্থ : প্রাচীন সাধুদের কথা (দ্বিতীয় খণ্ড) সম্পাদক : স্বামী চেতনানন্দ, পৃ.: ১০-১১)

No comments:

Post a Comment