চীনের ১৮ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির গল্পটা কেবল গল্পই, আসলে ওটা খুব বেশি হলে ৭.৭৫ট্রিলিয়ন, তাতেও কিঞ্চিৎ জল মেশানো থাকতে পারে। দেঙ্গ জিয়াও পেং যে রাস্তায় হেঁটেছিলেন তাতে সত্যি সত্যিই চীন একদিন ১৮ট্রিলিয়নে পৌঁছত কিন্তু তাতে ধীরে ধীরে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র সিসিপির হাত থেকে টেক জারদের হাতে চলে যেত। মুস্কিল হলো কম্যুনিস্ট একনায়করা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে চিরকাল সিঁটিয়ে থাকেন কারণ ওটাই ওঁদের এলিট বিলাসবহুল জীবনযাপনের একমাত্র চাবিকাঠি।
ফলে শি জিন পিং দেশের অগ্রগতির সর্বনাশ করে চীনকে আবার মাওয়ের রাস্তায় নিয়ে চলেছেন, অর্থনীতিতে যার ভয়ঙ্কর প্রতিফলন ইতিমধ্যেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চীনের ৭.৭৫ট্রিলিয়নের অর্থিনীতির তুলনায় রাষ্ট্রীয় ঋণ সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি, তার ওপর জিরো কোভিড পলিসির জন্য সাপ্লায়ার হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতাও তলানিতে এসে ঠেকেছে, ফলে ভবিষ্যতে চীনের আবার উঠে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম।
এমত অবস্থায় শি বা এই ধরণের অটোক্র্যাটদের হাতে ব্রাভাডো ছাড়া করে দেখানোর মতন খুব একটা কিছু থাকে না। তাই 'বসুধৈব কুটুম্বকম' শব্দের ওপর আপত্তি জানানো থেকে নিয়ে সম্ভাব্য জয়েন্ট স্টেটমেন্টের শব্দবন্ধ নিয়ে নানা ব্যাগড়া দেওয়া থেকে নিয়ে দালাল বুড়োখোকাকে লাদাখে পাঠিয়ে ভারতের কতটা জমি চীন কব্জা করে রেখেছে সেটা তার মুখ দিয়ে বলিয়ে কৌশলে নেহেরু, ইন্দিরা আর রাজীবের অপদার্থতাকে সেনা ও মোদীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করার পর ঠিক জি২০ শুরুর আগেই একটা মনগড়া ম্যাপ জারি করে খানিকটা হওয়া গরম করার চেষ্টা করে ভারত এবং আসিয়ান দেশগুলি থেকে চূড়ান্ত ঝাড় খেয়ে শেষে মিটিং ছেড়েই পালিয়ে গেলেন।
এমনিতেও ভারতে চীনের ডাল আর গলছে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিক্সের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মোদীজি শিকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে যতক্ষণ না চীন গোটা ৩৪৪০ কিমি লম্বা এলএসি জুড়ে ২০১৩র আগের অবস্থানে ফিরে না যায়, ততক্ষন অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হবে না। ইতিমধ্যে আদানি নিঃশব্দে বিশ্বজুড়ে ভারতের হয়ে ভারতীয় বেল্ট এন্ড রোড তৈরি করে চলেছেন, যা আটকাতে সোরস এবং চীন মরিয়া কিন্তু অপারগ। চীন আমাদের শত্রু নয়, সিসিপি আমাদের শত্রু - এটা যেন আমরা না ভুলি। যেদিন সিসিপির অবসান হবে সেদিন শত্রুতাও শেষ হয়ে যাবে।
দেঙ্গের পরবর্তী প্রজন্মের নেতারা চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেকে নিজেদের ক্ষমতা আহরণ করতেন কারণ অবশেষে দুটো পয়সার মুখ দেখতে পেয়ে সাধারণ গরিব মানুষ খুশি ছিলেন। শি-এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো হয়ে গেছে, কারণ ওঁর ভ্রান্ত পলিসির জন্য চীন এখন অর্থনৈতিক অবনতির শিকার এবং দেশজুড়ে ডিফ্লেশনের সাথে পাল্লা দিয়ে বেকারত্বও মাত্রাছাড়া। এই অবস্থা বেশিদিন চলতে পারেনা, শি বা সিসিপির পতন অনিবার্য।
আসলে সর্বক্ষেত্রে বিফল শি জিন পিং আর বিশ্বনেতৃত্বের সামনে মুখ দেখানোর মতন অবস্থায় নেই, বিশেষত ৭.৮% হারে জিডিপি বৃদ্ধির সুফল ভোগকারী ভারতীয় জনগণের সামনে তো নয়ই, আমেরিকা এবং ইউরোপের সামনেও নয়। মাওবাদী কম্যুনিস্ট শি স্রেফ লজ্জায় ভারতে আসছেন না। একদিকে কম্যুনিসমের ব্যর্থতা আর অন্যদিকে গণতন্ত্রের সাফল্যের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত আজকের ভারত - জি২০ থেকে পালিয়ে গিয়ে না চাইতেও বিশ্বকে শি জিন পিং দুটি বিপরীতধর্মী মতাদর্শের ব্যর্থতা বনাম সাফল্যের বার্তাই দিয়ে গেলেন।