ভারতকে ইন্ডিয়া বলা বন্ধ হোক;
পূজাকে প্রার্থনা বলা বন্ধ হোক;
পন্থকে ধর্ম বলা বন্ধ হোক।
- ভারত এক প্রাচীন রাষ্ট্র, ইন্ডিয়া একটি দেশ;
- পূজা মানে দেবার্চনা, প্রার্থনা মানে আবেদন;
- পন্থ মানে মতবাদ, ধর্ম মানে আদর্শ জীবন যাপনের জন্য মূল্যবোধভিত্তিক সনাতন দার্শনিক মানদণ্ড।
প্রতিদিনের ব্যবহারিক প্রয়োগে এক্ষুনি এই তিনটি শব্দের পরিবর্তন না হলে শাশ্বত ভারত খুব শিগগির শিগগির আবার জেগে উঠবে না।
এই পরিবর্তন হলে কি হবে?
১. ভারত মানে এক বিরাট ইতিহাস : ইতিঃ হ আস্ : 'ইতিঃ' মানে এই রকম, 'হ' মানে নিশ্চয়, 'আস্' মানে ছিল - ভারত বললেই জনমানসে তাঁদের পূর্বপুরুষের সত্যিকারের অতুল কীর্তি পুনর্জাগরিত হবে। সেই ইতিহাস কি রকমের? 'ধর্মার্থকামমোক্ষাণাম উপদেশ সমন্বিতম্, পূর্ববৃত্তকথোপিতম্, ইতিহাসম্ প্রচক্ষ্যতে' - ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষলাভের উপদেশ সমন্বিত, পূর্বের বৃত্তান্ত যেখানে বলা আছে, সেটাই আসল ইতিহাস। অর্থাৎ ইংরেজ আর বামপন্থীদের দ্বারা তৈরি করা ইন্ডিয়ার দাসত্বের মেকি ইতিহাস নয়, প্রাচীন ভারতের ধর্ম আধারিত জীবনযাপনকারী জনগণের সত্যিকারের উপলব্ধি ও গৌরবগাথা, যা ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও databaseএর কাজ করবে। কোথাকার কোন আরাকোশিয়ার বাসিন্দা (বর্তমানে কান্দাহারের উত্তরপশ্চিম কোণে অবস্থিত আর্ঘ্যান্দব) মূলগ্রীকদেশীয় রাজদূত মেগাস্থেনিস পাটুলিপুত্রে (বর্তমানে পাটনা) সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের রাজসভায় এসে সম্রাটকে স্যান্ড্রকোটাস আর ভারতকে ইন্ডিয়া নাম দিয়ে দিলেন আর আমাদের সমস্ত পূর্বইতিহাস মুহূর্তের মধ্যে myth বা গল্প হয়ে গেল - মজা নাকি?
২. পূজাস্থল আর প্রার্থনাস্থল এক নয়, ফলে হিন্দুর মন্দির আর অন্য প্রার্থনাগৃহসমূহ সমগোত্রীয় নয়। প্রার্থনা তো এয়ারপোর্ট, হোটেল, রাস্তাঘাটে - যেখানে ইচ্ছা করা যায়, পূজা একমাত্র বিধিবদ্ধভাবে বিধিসম্মত উপায়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহেরই করা যায় এবং যতক্ষণ বিধিসম্মতভাবে তাঁর বিসর্জন না হচ্ছে, সেই পূজাস্থলের মালিক তিনিই থাকেন (আইনি ভাষায় বলে তিনি forever minor), তাতে মন্দিরের stucture থাকলো কি না থাকলো, মায় বিগ্রহ স্বয়ং সেখানে থাকলেন কি না থাকলেন, কিছু আসে যায় না। হিন্দুদের পূজা এবং বাকি মতাবলম্বীদের প্রার্থনার মধ্যে মূল পার্থক্যকে গুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রটি বুঝতে হলে হিন্দুদের মন্দিরের বিশেষত্বকে বুঝতে হবে, যা অন্য মতাবলম্বীদের প্রার্থনাগৃহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যই নয়। মন্দির এমন একটি উর্যাক্ষেত্র যেখানে স্বয়ং ঈশ্বর বাস করেন, যেখান থেকে সেই উর্যা আহরণ করে মানুষ আধ্যাত্মপথে অগ্রসর হতে পারেন, সেটি ঈশ্বরের কাছে সুখ শান্তি সমৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য আবেদনস্থল ও সামাজিক কর্মাদির জন্য মণ্ডপমাত্র নয়।
৩. সারা বিশ্ব জুড়ে বহু পন্থ অর্থাৎ religion এসেছে আর গেছে, পন্থ অর্থাৎ পথ চিরস্থায়ী নয়। আজকের পরিবেশে অনুসন্ধিৎসুর যেটিকে আদর্শ পথ বলে মনে হচ্ছে, কয়েক হাজার বছর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্যদের তা নাও মনে হতে পারে; পারস্য, মেশোপটেমিয়া, আরব, গ্রীস, মিশর বা পেগানদের ইতিহাস ঘাঁটলেই এর প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায়। কিন্তু ধর্ম সনাতন, আদি এবং অন্তহীন, চিরসত্য, চিরনির্ভর। ধর্ম সেই সনাতন মূল্যবোধ যা সর্বযুগে সমাজকে ধারণ করে। তাই ধর্মের ওপর যদি আঘাত আসে তখন সর্বশক্তি দিয়ে তাকে রক্ষা করতে হয়, কারণ ধর্মহীন জীবন পাপের, জন্তুরও অধম। ধর্ম নষ্ট হলে সে ধর্মনষ্টকারীকেও নাশ করে তাই ঋষিরা বলছেন, 'ধর্ম এব হতো হস্তি ধর্মে রক্ষতি রক্ষিত:, তস্মাৎ ধর্মে ন হস্তব্যে মা নো ধর্মে হতো বধীৎ' - ধর্মকে যদি তুমি রক্ষা করো তাহলে ধর্মই তোমাকে রক্ষা করবে। আর যদি তুমি ধর্ম থেকে বিচ্যুত হও, ধর্মই তোমার নাশ করবে। পথ বদলায় কিন্তু ধর্ম বদলায় না, ঠিক যেমন খাদ্যাভ্যাস পাল্টায় কিন্তু ক্ষুধা বদলায় না।
হিন্দুস্থান প্রাচীনকাল থেকে হিন্দুদের বাসভূমি, সনাতন ধর্মের সূত্রগুলি অর্থাৎ পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, সঠিক-বেঠিক, অধিকার-অনধিকার, কর্তব্য-অকর্তব্য, ভালো-মন্দ, গ্রহণযোগ্য-ত্যাজ্য ইত্যাদির মানদন্ড এখানেই উন্মোচিত হয়েছে এবং ব্যবহারিকরূপে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই হিন্দু সংস্কৃতিতে মতান্তর কখনোই মনান্তরের কারণ হতে পারেনা এবং এখানে যত্র জীব তত্ৰ শিব। বেদ বলছেন "একং সৎ বিপ্রা বহুদা বদন্তি"(যা সৎ তা এক, পন্ডিতেরা তা নানা নামে অভিহিত করেন)। , যে পন্থ সনাতন ধর্মাশ্রয়ী নয়, অর্থাৎ পরপন্থদ্বেষী, সেই পন্থগুলির এই ভারতরাষ্ট্রে কোনো স্থান নেই।
No comments:
Post a Comment