Thursday, September 21, 2023

ভারত সঙ্ঘ বনাম প্রদেশিকতা

এক বুড়োখোকা সারাক্ষন 'India is not a Nation but an Union of States' বলে বলে মাথা খারাপ করে দেন, তিনি কি জানেন শ্রী ভীমরাও আম্বেদকর সংবিধানের আর্টিকেল ১এর বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যায় কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন 'India is an indestructible Union with destructible States' অর্থাৎ ভারত একটি অবিনাশী Union বা সঙ্ঘ, আর রাজ্যগুলি অনিত্য - তারা ভাঙতে পারে, জুড়তে পারে, অন্য রাজ্যে বিলয় হতে পারে, তারা কেন্দ্র দ্বারা শাসিতও হতে পারে, ইত্যাদি। 

আমেরিকার ফেডারেশন, যার ভিত্তিতে বুড়োখোকা এইসব আজেবাজে কথা বলে বেড়ান, সেটা কিন্তু সম্পুর্ন ভিন্ন একটা কনসেপ্ট যেখানে বিভিন্ন রাজ্য সম্মিলিতভাবে একটি রাষ্ট্রগঠনের জন্য চুক্তিবদ্ধ। ভারতের ক্ষেত্রে একেবারেই তা নয় এবং ফেডারেশনের বদলে ইউনিয়ন শব্দটি সংবিধান সভায় প্রচুর আলোচনার পরেই প্রয়োগ করা হয়েছিল। তার কারণ, এক, ভারতীয় ফেডারেশন আমেরিকান ফেডারেশনের মত রাজ্যগুলির মধ্যে একটি চুক্তির ফলাফল নয়; এবং দুই, রাজ্যগুলির ফেডারেশন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো অধিকারই নেই৷ 

এখন মুস্কিল হলো 'এক রাষ্ট্র' বা 'one Nation' এর ধারণা রাষ্ট্র্ববাদের ভাবনাকে সুদৃঢ় করে, nationalism এর জন্ম দেয়, আর এর ঠিক উল্টোটা, অর্থাৎ প্রাদেশিকতা বা আঞ্চলিকতাকে মুখ্যধারা করতে পারলে উগ্র sub nationalism এবং আখেরে বিচ্ছিন্নতাবাদকে ছড়াতে সাহায্য করে রাজনৈতিক লাভ ওঠানো যায়। আজ বহুবছর ধরে তামিলনাড়ুতে যে ধরণের Dravidian রাজনীতি আমরা দেখছি - উত্তর ভারতের প্রতি ঘৃণা, মুখ্য উত্তর ভারতীয় ভাষার প্রতি অবজ্ঞা আর হিন্দুত্ব অর্থাৎ আসমুদ্র হিমালয় একটাই single entity, সমস্ত নাগরিকের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত মূল রাষ্ট্রীয় পরিচয় হিন্দু এবং এই সমাজ এক সনাতন ধর্মবোধ দ্বারা চালিত - এর বিরুদ্ধাচরণ করতে গিয়ে ইচ্ছে করে সেই বাতিল হয়ে যাওয়া আর্য - অনার্য বিভাজনের থিওরিকে তুলে এনে আঞ্চলিকতাকে খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে যাতে ভারতীয় সঙ্ঘকে কমজোর করা যায়।  

এই একই ক্ষুদ্র রাজনৈতিক লাভের জন্যই বুড়োখোকা টুকরে টুকরে গ্যাংকে তোল্লা দেন অথবা সারা দেশে জাতিভিত্তিক জনগণনা করার জন্য জোরাজুরি করেন বা বিদেশে গিয়ে ভারত এক রাষ্ট্র নয় বলে বেড়ান। এই জন্যই ভারতের দখল হয়ে যাওয়া জমির ওপর দিয়ে যখন চীন তার নিজের বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের রাস্তা বানায়, বুড়োখোকা তাকে চীনের visionary পদক্ষেপ বলেই প্রচার করেন। এখন ব্যাঙ্গালোরে আছি, সহায়িকারা কেউ হিন্দি বুঝতে পারেন না কিন্তু ইংরিজি বুঝতে পারেন - এতদিনের ইন্ডি গোষ্ঠীর শাসনের ফলে এখানকার এই অদ্ভুত দ্বিচারিতা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি ! 

আমি আশা করবো বুড়োখোকাদের গুষ্টিকে এবার জনতা আগাপাসতলা বর্জন করবেন এবং যে বীর সভারকারকে এঁরা মনেপ্রাণে ঘৃণা করেন, মাঝেমাঝেই বীরদর্পে "I am not Savarkar" বলে নিজেদের হিন্দুবিরোধী মানসিকতাকে উজাগর করেন, হিন্দুরাষ্ট্র সম্পর্কে সেই শ্রী বিনায়ক দামোদর সভারকারের ব্যাখ্যাই একেবারে সঠিক এবং সর্বজনগ্রহণযোগ্য বলে প্রতিপন্ন হবে। পুরাণ বলছেন,
आसिंधु सिंधु पर्यन्ता यस्य भारतभूमिका ।
 पितृभू: पुण्यभूश्चैव स वै हिंदुरिति स्मृत: ॥
(সিন্ধু নদী থেকে নিয়ে সিন্ধু সাগর পর্য্যন্ত বিস্তৃত ভারতভূমিকে যে নিজের পিতৃভূমি এবং পূণ্যভূমি মানে, সেই হিন্দু।)
সাভারকার এই ব্যাখ্যাকে আরো এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, 'Hindu is one who considers India to be his motherland (matrbhumi), the land of his ancestors (pitrbhumi), and his holy land (punya bhumi).'

Monday, September 18, 2023

দেশের ক্ষতি

সংসদীয় গণতন্ত্রের নিজস্ব একটা মর্য্যাদা আছে কারণ সংসদে সরকারপক্ষ এবং বিরোধীপক্ষ উভয়ই কিন্তু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি - জনপ্রতিনিধি হিসেবে ধারে ভারে কেউ কারো থেকে কম বা বেশি ক্ষমতাবান নন। দুপক্ষের সাংসদরাই একই শপথবাক্য পাঠ করেন, দুপক্ষই সংবিধানের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠা রাখার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ, সেখানেও দুপক্ষের ভূমিকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বাকি, সরকারপক্ষের কাজ শাসন করা আর বিরোধীপক্ষের কাজ ভুল ধরিয়ে দেওয়া - মিটে গেল। তাহলে একপক্ষের এত হীনমন্যতা কিসের?

খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি নেহাত বিরোধিতার জন্য বিরোধীপক্ষের কেউ কেউ বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনের মধ্যেও ক্ষুদ্র দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থকে টেনে এনে গণতান্ত্রিক পরম্পরাকে হেয় করছেন। এঁদের কখনো দেখি নতুন সংসদভবনের নির্মাণ আটকানোর জন্য বারেবারে আদালতে ছুটে যাচ্ছেন, তাতে জাতীয় প্রতীক প্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে সঙ্গে সিংহের হিংস্রতা নিয়ে অকারণে বিতর্ক সৃষ্টি করে সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন, ভবন উদ্ঘাটনের দিন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বয়কট করছেন, আর আজ যখন প্রথমবার নতুন সংসদে রাষ্ট্রীয় ধ্বজারোহন হলো, তখন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা চিঠি লিখে জানিয়ে দিলেন তিনি আসতে পারবেন না, অন্যত্র দলীয় কার্য্যক্রমে ব্যস্ত। 

এটা যদি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতো, খুশি হতাম কিন্তু বাস্তবিক তা নয়। এর আগেও স্বাধীনতা দিবসে এই একই ভদ্রলোক লালকেল্লার জাতীয় অনুষ্ঠানকে এড়িয়ে দলীয় অনুষ্ঠানে চলে গিয়েছিলেন। আমার মনে হয় প্রতিষ্ঠান ও পরম্পরার ওপর বারবার এই আঘাত আসলে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ওপরেই আঘাত। রাজনীতিকে যদি এত নিচু স্তরে নামিয়ে আনা হয় যেখানে সরকারি অনুষ্ঠানকে অন্য পক্ষের দলীয় অনুষ্ঠানের মতন তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা উপহাস বা অবজ্ঞা করা যেতে পারে, তাতে সংবিধানকে কতদূর শ্রদ্ধা বা তার প্রতি কতটা নিষ্ঠা প্রদর্শিত হয়, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। 

আমি জানি না যে দলটি ৬০ বছর দেশের শাসনভার সামলেছেন, তাঁরা আজ এত বেসামাল কেন। এমনটা তো আগে ছিল না - তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরসিংহ রাও ভারতের পক্ষ রাখতে তৎকালীন বিরোধী নেতা শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে জাতিসংঘের জেনারেল এসেম্বলিতে পাঠিয়েছিলেন। সংবিধান প্রধান বিরোধীপক্ষকে যে ভূমিকা দিয়েছে তাঁরা যদি তা ঠিকমত পালন না করেন তাহলে সেই ভূমিকা যে তাঁরা অচিরেই হারিয়ে বসবেন, সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই কারণ গণতন্ত্রের ওই স্তরে শূন্যস্থান পূরণ হতে বেশিক্ষন সময় লাগে না। 

বিরোধীপক্ষ হয়তো এই ভেবে খুশি হচ্ছেন যে সরকার অপদস্থ হচ্ছেন আর সরকারপক্ষ হয়তো এই ভেবে আনন্দিত যে দেশের সামনে বিরোধীদের নেতিবাচক ভূমিকা প্রকাশিত হচ্ছে কিন্তু আখেরে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, সংসদ নামক মহান প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতি হচ্ছে, জনপ্রতিনিধিত্ব সম্পর্কেই প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিচ্ছে আর গণতান্ত্রিক পরম্পরার প্রতি সম্মান ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে এঁরা অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্ককেও একইভাবে তলানিতে এনে ফেলেছেন - এতটাই যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৩তম জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতেও অনেকে অক্ষম। 'দোল দোল দুলুনি রাঙা মাথায় চিরুনি' করতে করতে কখন যে ক্ষতিটা মাত্রাছাড়া হয়ে যাবে, নিজেদের ক্ষুদ্র রাজনীতি নিয়ে মশগুল এই মানুষগুলো হয়তো আজ বুঝতেও পারছেন না।

Tuesday, September 12, 2023

সফলতার চাবি

যদিও আগে একাধিকবার পড়েছি, তবু আজ সকাল থেকে সেই প্রিয় বইটিই আবার পড়ার চেষ্টা করছি যদিও চোখের কারণে খুবই মন্থরগতিতে পড়তে হচ্ছে। বইটির নাম The Divine Life, পূজ্যপাদ স্বামী যতিস্বরানন্দজি মহারাজের লেখা। আসলে লেখা না বলে সংকলন বলাই ভালো যেখানে ৭৮ পৃষ্ঠার এক দীর্ঘ introduction লেখার পর পূজনীয় মহারাজ গীতা, উপনিষদ, ভাগবত, মনুস্মৃতি, পুরাণ ইত্যাদি নানা শাস্ত্রগ্রন্থ থেকে নানা শ্লোক তুলে তুলে একত্রিত করে এক আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় structure তৈরি করেছেন। 

Introduction ছাড়া মোট ১৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত ছোট একটি বই, অসাধারণ বই, সবসময় সঙ্গে রাখার মতন বই। বইটার বক্তব্য আত্মস্থ করতে গেলে অন্তত বার কয়েক পড়তে হবে আর জীবনে যাঁদের দেখেছি, ভালো মন্দ indifferent, তাঁদের সাথে এবং অবশ্যই নিজের আচরণের সাথে শ্লোকগুলো মিলিয়ে মিলিয়ে দেখতে হবে, তবে theory আর practice এর মধ্যে কোথায় মিল আর কোথায় গরমিল আর তার ফলে একজন মানুষ ঠিক কি ধরণের legacy রেখে গেছেন বা তৈরি করছেন, তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। 

প্রায় গোটা পঞ্চাশেক মানক আছে আধ্যাত্মিক জীবনে অগ্রগতির জন্য কিন্তু আমি নিজের মতো করে তার মধ্যে থেকেই শুধুমাত্র স্বভাবগত কয়েকটিকে আলাদা করে নিয়েছি নিজের ও অপরের আচরণকে সহজে analyse করার জন্য। এখন এই একই মানকগুলি ধরে ধরে যদি আমরা দুটি আলাদা আলাদা field এর আলাদা আলাদা দুজন বিখ্যাত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পর্য্যালোচনা করি - ধরা যাক শ্রী নারায়ণমূর্তি এবং শ্রী রাহুল গান্ধীর, তাহলে মানুষ হিসেবে তাঁদের অগ্রগতি কতটা, তাও খানিকটা বোঝা যাবে আবার নিজে কতটা পিছিয়ে আছি সেটাও বোঝা যাবে। আমার দুর্ভাগ্য যে এই ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে আমি এই শরীরে আর মনু সংহিতা পড়তে পারলাম না, পারলে হয়তো আরো কিছু শিখতে পারতাম।

মানকগুলি হলো:
কর্মযোগী বনাম ফলপ্রত্যাশী
বিশ্বাসী বনাম বোধহীন
প্রত্যয়ী বনাম নিয়তিবাদী
উৎসাহী বনাম উদাসীন
ত্যাগী বনাম অহঙ্কারি
বিবেকি বনাম ভয়ার্ত
সেবাব্রতী বনাম শ্লাঘাপূর্ণ
সংস্কারী বনাম অভব্য
সমাবেশী বনাম বিভাজনী
ধর্মবোধী বনাম অধার্মিক
আধ্যাত্মিক বনাম ভৌতিক
যে কাউকে, তা তিনি আধাত্মপথের যাত্রী হন বা নাই হন, কেবল মানুষ হিসেবে কেমন তা এই মানকগুলি ধরে ধরে চরিত্র বিশ্লেষণ করলে বুঝতে সুবিধা হবে এবং কার সঙ্গ কাম্য আর কোন ধরণের সঙ্গ ত্যাজ্য, সে বিষয়ে নির্ণয় নেওয়াও সহজতর হবে।

কেবল প্রথম মানকটি বুঝিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি - যিনি কর্মযোগী তিনি তাঁর সম্পুর্ন ফোকাসটি নিজের কাজের ওপরেই রাখেন যেমন ইনফসিস গড়ে তোলার সময় শ্রী নারায়ণমূর্তি নিজে বছরে ৩০০ দিন বাড়ির বাইরে থাকতেন অথচ ত্রিশ বছর নিজের পরিবারকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরের বাইরে কোথাও ঘুরতে যাননি। এই ধরণের মানুষ resultএর ওপর ফোকাস করেন না - ওটা by product - বৃহত্তর selfless goal থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও তাই - যবে থেকে দলীয় বা সাংবিধানিক দায়িত্বে এসেছেন, তাও প্রায় ত্রিশ বছর হয়ে গেল, একদিনও ছুটি নেননি কারণ ওনার কাছে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়াটাই জীবনের লক্ষ্য।

কোনো ফললাভ লক্ষ্য থাকলে এমন নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রম এঁরা করতে পারতেন না কারণ একজন সাধারণ মানুষ যে সামাজিক সন্মান, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার কথা কল্পনাও করতে পারেন না, সেটা তো অনেক আগেই ওঁরা পেয়ে গেছেন, তারপর এখনো এত খাটনির কি প্রয়োজন? আচ্ছা, মজার ব্যাপার হলো কেবল শাস্ত্রপথে থেকেও যে উচ্চতম জাগতিক সুখ ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে, এঁরা তারও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বটে। এঁদের দুজনকে চোখের সামনে দেখছি তাই এঁদের কথা বললাম নাহলে সফলতম কর্মযোগী হিসেবে আদি শঙ্করাচার্য্য থেকে নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে পরম পূজনীয় ডাক্তারজি - অনেকের কথাই বলা যেত। একইভাবে যদি এক এক করে বাকি মানকগুলোর নিরিখেও নিজের ও মানুষের স্বভাব বিশ্লেষণ করা যায়, আপনেআপ দুধ কা দুধ ঔর পানি কা পানি হো জায়গা।

Saturday, September 2, 2023

মিথ্যেকথা

দেশে রাজনৈতিক পারদ যত চড়ছে তত চতুর্দিকে নেতাদের গলায় মিথ্যে কথার ফুলজুরি ফুটছে। আসলে আমাদের দেশে রাজনীতি বস্তুটাই এখনো একটা বিরাট বড় মিথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে - "গরিবের দুঃখে আমার বুক ফাটে" - সত্যি সত্যিই ক'জনের ফাটে ভাই? যাইহোক, যারা বলার তারা বলুক, আমরা সাধারণ মানুষ কি ব্যক্তিগত জীবনে মিথ্যাকথা না বলার অভ্যেস করতে পারি না? আমি চেষ্টা করে দেখেছি, খুব খুব কঠিন জিনিস। চতুর্দিকে মিথ্যে শুনতে শুনতে আর ছেলেবেলা থেকে অকারণে "খুচরো নেই", "বাড়িতে নেই", "টেলিফোন খারাপ", "পেট খারাপ", ইত্যাদি মিথ্যেকথাগুলোকে পারিবারিক স্বীকৃতি পেতে দেখে আমাদের এমন মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে আমরা বেশিরভাগ মানুষই আদতে এক একটি compulsive lier তৈরি হয়ে গিয়েছি। কাউকে খুশি করার জন্য মিথ্যা বলছি, কাউকে দুঃখ না দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলছি, তাও নাহয় বোঝা গেল, কিন্তু অকারণে কেন? কোনো ট্রেনের অচেনা সহযাত্রীকে "আচ্ছা আবার দেখা হবে" বলে বিদায় দেওয়ার মধ্যেও যে মিথ্যে আছে, সেটা আমরা হয়তো বুঝতেও পারিনা, ওটাকে সামাজিকতা বলে সহজেই স্বীকার করে নিই। আর স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইচ্ছে করে মিথ্যে কথা বলা তো আছেই, সারাদিন ধরে ক্রমাগত বলেই চলেছি। আমি একদিন চেষ্টা করলাম একটাও মিথ্যে বলবো না, পারলাম না। আবার পরদিন চেষ্টা করলাম, পারলাম না। আবার একদিন করলাম, আবার ব্যর্থ। তারপর লিখতে শুরু করলাম - যেই মিথ্যে বলি অমনি কি বললাম আর কেন বললাম লিখে রাখি। কিছুদিন পর পড়তে গিয়ে দেখলাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যে কথা বলার প্রয়োজনই ছিল না, চুপ করে থাকলে বা সরে গেলেই হতো। সেদিন থেকে আমি বাকসংযমের উপকারিতা উপলব্ধি করতে পেরেছি। এখনো মাঝে মাঝে মিথ্যেকথা বলি, তবে আগের তুলনায় অনেক অনেক কম। হয়তো লুকিয়ে মিষ্টি খেয়ে ধরা পড়ে গেলে এখনো হাবেভাবে না জানার ভান করি আর মনেপ্রাণে চেষ্টা করি যাতে স্পষ্টভাবে "আমি খাইনি" বলতে না হয়, তবে বকুনি খাবার ভয়ে অনেকসময় বলেও ফেলি, which I regret later, এইরকম আরো কত কিই। অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মিথ্যে কথা বলা আর ক্ষমতা, যশ ও অর্থলাভের লোভের বশে রাজনীতি করা সমগোত্রীয় - যে কোনো ভদ্রলোকের জীবনে একেবারেই unacceptable - ওটা বর্জন করা গেছে অনেকদিন আগেই। কিন্তু মিথ্যেকে এখনো যাপন থেকে পুরোপুরি বর্জন করা যায়নি - তবে চেষ্টা চলছে।