যদিও আগে একাধিকবার পড়েছি, তবু আজ সকাল থেকে সেই প্রিয় বইটিই আবার পড়ার চেষ্টা করছি যদিও চোখের কারণে খুবই মন্থরগতিতে পড়তে হচ্ছে। বইটির নাম The Divine Life, পূজ্যপাদ স্বামী যতিস্বরানন্দজি মহারাজের লেখা। আসলে লেখা না বলে সংকলন বলাই ভালো যেখানে ৭৮ পৃষ্ঠার এক দীর্ঘ introduction লেখার পর পূজনীয় মহারাজ গীতা, উপনিষদ, ভাগবত, মনুস্মৃতি, পুরাণ ইত্যাদি নানা শাস্ত্রগ্রন্থ থেকে নানা শ্লোক তুলে তুলে একত্রিত করে এক আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় structure তৈরি করেছেন।
Introduction ছাড়া মোট ১৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত ছোট একটি বই, অসাধারণ বই, সবসময় সঙ্গে রাখার মতন বই। বইটার বক্তব্য আত্মস্থ করতে গেলে অন্তত বার কয়েক পড়তে হবে আর জীবনে যাঁদের দেখেছি, ভালো মন্দ indifferent, তাঁদের সাথে এবং অবশ্যই নিজের আচরণের সাথে শ্লোকগুলো মিলিয়ে মিলিয়ে দেখতে হবে, তবে theory আর practice এর মধ্যে কোথায় মিল আর কোথায় গরমিল আর তার ফলে একজন মানুষ ঠিক কি ধরণের legacy রেখে গেছেন বা তৈরি করছেন, তা স্পষ্ট বোঝা যাবে।
প্রায় গোটা পঞ্চাশেক মানক আছে আধ্যাত্মিক জীবনে অগ্রগতির জন্য কিন্তু আমি নিজের মতো করে তার মধ্যে থেকেই শুধুমাত্র স্বভাবগত কয়েকটিকে আলাদা করে নিয়েছি নিজের ও অপরের আচরণকে সহজে analyse করার জন্য। এখন এই একই মানকগুলি ধরে ধরে যদি আমরা দুটি আলাদা আলাদা field এর আলাদা আলাদা দুজন বিখ্যাত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পর্য্যালোচনা করি - ধরা যাক শ্রী নারায়ণমূর্তি এবং শ্রী রাহুল গান্ধীর, তাহলে মানুষ হিসেবে তাঁদের অগ্রগতি কতটা, তাও খানিকটা বোঝা যাবে আবার নিজে কতটা পিছিয়ে আছি সেটাও বোঝা যাবে। আমার দুর্ভাগ্য যে এই ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে আমি এই শরীরে আর মনু সংহিতা পড়তে পারলাম না, পারলে হয়তো আরো কিছু শিখতে পারতাম।
মানকগুলি হলো:
কর্মযোগী বনাম ফলপ্রত্যাশী
বিশ্বাসী বনাম বোধহীন
প্রত্যয়ী বনাম নিয়তিবাদী
উৎসাহী বনাম উদাসীন
ত্যাগী বনাম অহঙ্কারি
বিবেকি বনাম ভয়ার্ত
সেবাব্রতী বনাম শ্লাঘাপূর্ণ
সংস্কারী বনাম অভব্য
সমাবেশী বনাম বিভাজনী
ধর্মবোধী বনাম অধার্মিক
আধ্যাত্মিক বনাম ভৌতিক
যে কাউকে, তা তিনি আধাত্মপথের যাত্রী হন বা নাই হন, কেবল মানুষ হিসেবে কেমন তা এই মানকগুলি ধরে ধরে চরিত্র বিশ্লেষণ করলে বুঝতে সুবিধা হবে এবং কার সঙ্গ কাম্য আর কোন ধরণের সঙ্গ ত্যাজ্য, সে বিষয়ে নির্ণয় নেওয়াও সহজতর হবে।
কেবল প্রথম মানকটি বুঝিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি - যিনি কর্মযোগী তিনি তাঁর সম্পুর্ন ফোকাসটি নিজের কাজের ওপরেই রাখেন যেমন ইনফসিস গড়ে তোলার সময় শ্রী নারায়ণমূর্তি নিজে বছরে ৩০০ দিন বাড়ির বাইরে থাকতেন অথচ ত্রিশ বছর নিজের পরিবারকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরের বাইরে কোথাও ঘুরতে যাননি। এই ধরণের মানুষ resultএর ওপর ফোকাস করেন না - ওটা by product - বৃহত্তর selfless goal থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও তাই - যবে থেকে দলীয় বা সাংবিধানিক দায়িত্বে এসেছেন, তাও প্রায় ত্রিশ বছর হয়ে গেল, একদিনও ছুটি নেননি কারণ ওনার কাছে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়াটাই জীবনের লক্ষ্য।
কোনো ফললাভ লক্ষ্য থাকলে এমন নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রম এঁরা করতে পারতেন না কারণ একজন সাধারণ মানুষ যে সামাজিক সন্মান, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার কথা কল্পনাও করতে পারেন না, সেটা তো অনেক আগেই ওঁরা পেয়ে গেছেন, তারপর এখনো এত খাটনির কি প্রয়োজন? আচ্ছা, মজার ব্যাপার হলো কেবল শাস্ত্রপথে থেকেও যে উচ্চতম জাগতিক সুখ ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে, এঁরা তারও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বটে। এঁদের দুজনকে চোখের সামনে দেখছি তাই এঁদের কথা বললাম নাহলে সফলতম কর্মযোগী হিসেবে আদি শঙ্করাচার্য্য থেকে নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে পরম পূজনীয় ডাক্তারজি - অনেকের কথাই বলা যেত। একইভাবে যদি এক এক করে বাকি মানকগুলোর নিরিখেও নিজের ও মানুষের স্বভাব বিশ্লেষণ করা যায়, আপনেআপ দুধ কা দুধ ঔর পানি কা পানি হো জায়গা।
No comments:
Post a Comment