Saturday, September 2, 2023

মিথ্যেকথা

দেশে রাজনৈতিক পারদ যত চড়ছে তত চতুর্দিকে নেতাদের গলায় মিথ্যে কথার ফুলজুরি ফুটছে। আসলে আমাদের দেশে রাজনীতি বস্তুটাই এখনো একটা বিরাট বড় মিথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে - "গরিবের দুঃখে আমার বুক ফাটে" - সত্যি সত্যিই ক'জনের ফাটে ভাই? যাইহোক, যারা বলার তারা বলুক, আমরা সাধারণ মানুষ কি ব্যক্তিগত জীবনে মিথ্যাকথা না বলার অভ্যেস করতে পারি না? আমি চেষ্টা করে দেখেছি, খুব খুব কঠিন জিনিস। চতুর্দিকে মিথ্যে শুনতে শুনতে আর ছেলেবেলা থেকে অকারণে "খুচরো নেই", "বাড়িতে নেই", "টেলিফোন খারাপ", "পেট খারাপ", ইত্যাদি মিথ্যেকথাগুলোকে পারিবারিক স্বীকৃতি পেতে দেখে আমাদের এমন মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে আমরা বেশিরভাগ মানুষই আদতে এক একটি compulsive lier তৈরি হয়ে গিয়েছি। কাউকে খুশি করার জন্য মিথ্যা বলছি, কাউকে দুঃখ না দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলছি, তাও নাহয় বোঝা গেল, কিন্তু অকারণে কেন? কোনো ট্রেনের অচেনা সহযাত্রীকে "আচ্ছা আবার দেখা হবে" বলে বিদায় দেওয়ার মধ্যেও যে মিথ্যে আছে, সেটা আমরা হয়তো বুঝতেও পারিনা, ওটাকে সামাজিকতা বলে সহজেই স্বীকার করে নিই। আর স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইচ্ছে করে মিথ্যে কথা বলা তো আছেই, সারাদিন ধরে ক্রমাগত বলেই চলেছি। আমি একদিন চেষ্টা করলাম একটাও মিথ্যে বলবো না, পারলাম না। আবার পরদিন চেষ্টা করলাম, পারলাম না। আবার একদিন করলাম, আবার ব্যর্থ। তারপর লিখতে শুরু করলাম - যেই মিথ্যে বলি অমনি কি বললাম আর কেন বললাম লিখে রাখি। কিছুদিন পর পড়তে গিয়ে দেখলাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যে কথা বলার প্রয়োজনই ছিল না, চুপ করে থাকলে বা সরে গেলেই হতো। সেদিন থেকে আমি বাকসংযমের উপকারিতা উপলব্ধি করতে পেরেছি। এখনো মাঝে মাঝে মিথ্যেকথা বলি, তবে আগের তুলনায় অনেক অনেক কম। হয়তো লুকিয়ে মিষ্টি খেয়ে ধরা পড়ে গেলে এখনো হাবেভাবে না জানার ভান করি আর মনেপ্রাণে চেষ্টা করি যাতে স্পষ্টভাবে "আমি খাইনি" বলতে না হয়, তবে বকুনি খাবার ভয়ে অনেকসময় বলেও ফেলি, which I regret later, এইরকম আরো কত কিই। অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মিথ্যে কথা বলা আর ক্ষমতা, যশ ও অর্থলাভের লোভের বশে রাজনীতি করা সমগোত্রীয় - যে কোনো ভদ্রলোকের জীবনে একেবারেই unacceptable - ওটা বর্জন করা গেছে অনেকদিন আগেই। কিন্তু মিথ্যেকে এখনো যাপন থেকে পুরোপুরি বর্জন করা যায়নি - তবে চেষ্টা চলছে।

No comments:

Post a Comment