Friday, July 21, 2023

দুর্ভাগা বাঙালি



চাল ডাল আলু পেঁয়াজ পেট্রোলের জন্য যদি রাজনৈতিক নেতাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়, সেটা জনগণের নিজেদের অক্ষমতা। রাজনৈতিক দল বা নেতাদের কাজ হলো রাষ্ট্রনির্মাণ, কর্মঠ নাগরিকদের দৈনন্দিন চাহিদা যোগানো নয় - জনগণ নিজেরা খেটেখুটে রোজগার করে নিজেদের চাহিদা নিজেরা মেটাবেন, এটাই তাঁদের সামাজিক কর্তব্য - কেবল অসুস্থ ও বৃদ্ধ অকর্মঠদের ভার রাষ্ট্র নেবে। 

পশ্চিমবঙ্গের জনগণ এই মূল পার্থক্যটি ভুলে গেছেন বলেই বহুদিন ধরে আলু পেঁয়াজের রাজনীতিকে মাথায় তুলে নাচ্ছেন। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। রাজ্যের সর্বনাশ হচ্ছে, যাদের নেতা হওয়ার যোগ্যতা নেই তারা ছড়ি ঘোরাচ্ছে আর জনগণ ক্ষুদ্র দৈনন্দিন স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে আসল রাজনৈতিক সচেতনতা হারিয়ে বসে আছেন। 

আমি এই রাজ্যের কোনো ভবিষ্যৎ দেখিনা। হয়তো ভারতের প্রধান বিচারপতিও দেখেন না। নইলে দুমাস আগে ঘটে যাওয়া মণিপুরের এক জঘন্য ঘটনায় উনি এত বিচলিত হন অথচ পশ্চিমবঙ্গে ঘটে চলা লাগাতার ঘটনাসমূহ সম্পর্কে ওঁর বা অন্য কোনো সমগোত্রীয় সাংবিধানিক পদাধিকারীর সেই আবেগ দেখা যায়না কেন ? 

নির্বাচকরা কেন দলদাস হবেন ? উল্টে দল নির্বাচকদের কৃতদাস হবে, তবেই তো সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে - এই সাধারণ কথাটা বুঝতে কি খুব বেশি বুদ্ধি লাগে? এখানে তো যাকেই দেখি তিনিই কোনো না কোনো দলীয় লাইন নিয়ে পড়ে আছেন, নাগরিক হিসেবে স্বাধীনভাবে চিন্তার যেন কোনো অবসরই নেই ! যে রাজ্যের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুণপোকার মতন আলু-পেঁয়াজ-পেট্রোলের রাজনীতি ঢুকে গেছে, সেই নির্বোধ নাগরিকদের কূপমণ্ডূক মানসিকতা পাল্টানো আর অশিক্ষিত আম পাকিস্তানিদের হিন্দু ও ইহুদিবিদ্বেষ থেকে মুক্ত করা প্রায় একইরকমের দুঃসাধ্য। এই অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে এক কণা আলোর রশ্মি দেখতে পেলে অবশ্যই স্বস্তি পেতাম, কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না যে। 

বড় কষ্ট হয়, বিশ্বাস করুন, খুব কষ্ট হয়। সেই অতীশ দীপঙ্করেরও আগের আমল থেকে নিয়ে এই সেদিনের স্বামী বিবেকানন্দ ঋষি অরবিন্দ পর্য্যন্ত আলোর দিশারীদের স্বজাতকে যখন ফুটপাথে বাবু হয়ে বসে ভিক্ষার মাংস ভাত খেয়ে তৃপ্ত হতে দেখি, বড় কষ্ট হয় গো। একইরকমের কষ্ট হয় যখন 'ওরা ৫০০ দিয়েছে, আমরা ২০০০ দেবো' বলে ভিক্ষান্নের পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা দেখি, যার মধ্যে না আছে কোনো নীতি, না কোনো আদর্শ, না স্বচ্ছতা। ভাগ্য পরিবর্তন যে হবে, তার সঠিক দিশা কোথায় ? সবই তো সেই একই চাল ডাল তেলের তাৎক্ষণিক ক্ষুদ্র রাজনীতির চর্বিত চর্বন, সামগ্রিক চিত্র এবং বাঙালির গাড্ডায় যাওয়া ভবিষ্যৎ নিয়ে সোজা কথা সোজাভাবে বলার লোক কোথায় ?

No comments:

Post a Comment