Saturday, December 31, 2022

কল্পতরু


তাঁর শরীরটাই কেবল চোখের সামনে নেই, ফলে ইচ্ছে করলেই আমরা আর তাঁকে বাইরে দর্শন করতে পারিনা। কিন্তু সূক্ষ্মশরীরে তিনি রয়েছেন আমাদের চেতনায়, আমাদের গোটা অস্তিত্ব জুড়ে, ফলে তিনি সর্বদা ধ্যানগম্য। যেই আমরা অন্তর্মুখী হৈ এবং তাঁকে স্মরণ করি অমনি তাঁর অমৃতস্পর্শ হৃদয়ে অনুভব করা সহজেই সম্ভব হয়। তিনি নিজের মুখে হয়তো সকলের সাথে কথা বলেন না কিন্তু লিখিত আকারে তাঁর বাণী আমরা নিরন্তর শুনতে পাই কথামৃত বা লীলাপ্রসঙ্গ বা তাঁর অন্তরঙ্গ পার্ষদদের স্মৃতিকথার মাধ্যমে। 

তিনি যে এখনো সূক্ষ্মশরীরে সাক্ষাৎ আছেন তার অজস্র প্রমাণ ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে - বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীতেও বহু মানুষ তাঁকে নিজেদের চোখ দিয়ে দেখেছেন, কেউ কেউ হয়তো এখনো দেখেন, তাঁর নির্দেশ পান। রাজা মহারাজের শিষ্য এবং সেবক সুয্যি মহারাজ অর্থাৎ পরম পূজ্যপাদ স্বামী নির্বাণানন্দজী মহারাজের যখন শেষের দিক, তখন তাঁর দিনক্ষণ ইত্যাদির বোধ চলে গিয়েছিল। এমন হতো যে তিনি হয়তো তিনদিন ধরে ঘুমাচ্ছেন আবার তারপর টানা তিনদিন সমানে জেগে আছেন। এ হেন সুয্যি মহারাজ হঠাৎ তাঁর নিজের এক জন্মদিনে সেবককে বলছেন তাঁকে চান টান করিয়ে দাঁড়ি কামিয়ে পরিষ্কার জামা পরিয়ে দিতে কারণ সেদিন অনেক লোক তাঁকে দেখতে আসবেন, খুব আনন্দ হবে। 

সেবক সব জেনেও ইচ্ছে করেই জিজ্ঞেস করলেন যে আজ কি কোনো বিশেষ দিন? তখন সুয্যি মহারাজ উত্তর দিলেন যে ঠাকুর এসে তাঁকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বলেছেন যে আজ মহারাজের জন্মদিন, শিষ্যরা সব আসবেন, খুব আনন্দ হবে, তাই তিনি যেন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেন। তিনি পাত্তা না দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কিন্তু ঠাকুর দ্বিতীয়বার তাঁকে ঠেলে তুলে একই কথা বলাতে, তাঁর মনে হয়েছে যে সত্যি সত্যিই আজ তাঁর জন্মদিন এবং তাই তাঁর ফিটফাট হয়ে থাকা প্রয়োজন। শেষের দিকে মাঝেমাঝেই মহারাজ তাঁর সাথে ঠাকুরের সূক্ষ্মশরীরের কথোপকথন প্রকাশ করে ফেলতেন, এ সব এখন যাঁরা বেলুড় মঠের সিনিয়র সাধু, তাঁরা ব্রহ্মচারী অবস্থায় নিজেদের কানে শুনেছেন। 

এগুলো কোনোটাই miracle নয়, এ বাস্তব সত্যি। ঐ যে সেদিন বরানগরে সেই আমগাছের তলায় দাঁড়িয়ে ঠাকুর সবাইকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন 'চৈতন্য হোক', সেটা কি দেশ কালের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল? অবতারতত্ত্ব কি এতোই হালকা আর এতটাই অল্প তার দায়রা? হয় কখনো? সেই কবে শ্রীকৃষ্ণ শরীরে এসেছিলেন, আজও সারা বিশ্বজুড়ে তাঁর নাম নিয়ে মানুষ জীবনের দিশা খুঁজে পাচ্ছেন। শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রেও তো আমরা তাই দেখি। কোথায় আমেরিকা, কোথায় ইউরোপ, কোথায় আফ্রিকা, কোথায় অস্ট্রেলিয়া আর কোথায়েই বা বাকি এশিয়া - সর্বত্র তাঁর মন্দির, সর্বত্র প্রতিদিন বেদান্তের চর্চা হচ্ছে, সর্বত্র মানুষ প্রতিদিন তাঁর পুণ্যনামে আকৃষ্ট হয়ে জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছেন। 

এখন তাঁকে চোখে দেখতে গেলে সঙ্ঘগুরুর মধ্যে তাঁর সচল বিগ্রহ যে কেউ যে কোনোদিন চাইলেই দেখতে পারেন আর সাধনজীবনের যে কোনো প্রশ্নের উত্তরও তাঁকে বেলুড় মঠের ঠিকানায় চিঠি লিখলেই জবাবে আসে। আজকের এই বিশেষ দিন, যাকে ভক্তরা কল্পতরু উৎসব বলেন, সেটি কেবল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আনন্দ উৎসবই নয়, সেটি গোটা প্রাণী জগৎ যাতে আত্মদর্শন করে জীবনের উদ্দেশ্য সফল করতে পারে, তার জন্য একজন জাগ্রত, present and contemporary অবতারের শুভ আশীর্বাদ। তিনি বর্তমান, তাঁর aura বর্তমান, তাঁর উপস্থিতি বর্তমান - He is a living God. এখনো বহুদিন ঠাকুরের সূক্ষ্মশরীর থাকবে, ফলে তাঁর আশীর্বাদ এখনো অনেক প্রজন্ম ধরে মানুষের ওপর বর্ষিত হবে, যেমনটি এই মুহূর্তে আমাদের সকলের ওপর হচ্ছে। খালি আমাদের মাথা পেতে সেটি গ্রহণ করার অপেক্ষা মাত্র। 

জয় শ্রীগুরুমহারাজজী কি জয়। জয় মহামায়ী কি জয়। জয় স্বামীজী মহারাজজী কি জয়।

Friday, December 30, 2022

নতুন ভারত


মাত্র কয়েক শ বছর আগেও, ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে, আমাদের দেশে জনসংখ্যা আজকের তুলনায় এক ভগ্নাংশ হওয়া স্বত্তেও সে সময়ে দেশের মোট সাড়ে সাত লক্ষ গ্রামে সাত লক্ষ বত্রিশ হাজার গুরুকুল ছিল, ভারতবাসী মোটেও অশিক্ষিত ছিলেন না। ইংল্যান্ডে ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে যখন প্রথম পাব্লিক স্কুল খোলে, ভারতে তখন already সাত লক্ষের ওপর গুরুকুল বর্তমান আর ম্যাকলে যখন উত্তরভারতে G.W. Luther আর দক্ষিণভারতে Thomas Munroe কে দিয়ে সার্ভে করিয়েছিলেন তখন তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী সে সময়ে উত্তর ও দক্ষিণভারতে সাক্ষরতার হার ছিল যথাক্রমে ৯৭% এবং ১০০%। তখনো জাতের নামে বজ্জাতি শুরু হয়নি। 

তার আগের কথা, অর্থাৎ নালন্দা আর তক্ষশীলার মতো বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কথা তো নাহয় ছেড়েই দিলাম, যার মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা বহু দেশকে জীবনের রাস্তা দেখাতো, গ্রামেই দেশজ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এক ধর্ম আধারিত সুখী জীবনযাপনের সমস্ত ব্যবস্থা মজুত ছিল। মাত্র কয়েক শ বছর আগেও ভারতে কেউ বেরোজগার ছিলেন না, কোনোদিন কোনো দুর্ভিক্ষ হয়নি আর আজকের ভাষায় যাকে আমরা বিদেশিমুদ্রা অর্জন বলি, তাতেও পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি এলেম আমাদেরই ছিল। 

আজ, এত ইংরিজি শিক্ষা, শিল্পায়ন, উন্নত জীবনধারা ইত্যাদির পর সেদিনের চেয়ে দশগুন বেশি জনসংখ্যার জন্য সারা দেশে মোট ইস্কুলের সংখ্যা কত? না পনেরো লক্ষ নয় হাজার - গ্রামের দিকে ১২.৫ লক্ষ আর শহরের দিকে ২.৫ লক্ষ। এখন, আধুনিক বিদেশি শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত, অতীতের 'native backwardness'কে ঝেড়ে ফেলে পাশ্চাত্যের 'enlightened forwardness'কে আঁকড়ে ধরে 'উন্নত' হয়ে ওঠা দেশে ২৫% মানুষ নিরক্ষর, ৮% মানুষ সম্পূর্ণ বেকার (underemployed কত ঈশ্বরই জানেন) আর সরকার বিনা পয়সায় রেশন না দিলে ১২.৫% মানুষ না খেতে পেয়ে মরে যাবেন। 

তাহলে মাত্র কয়েক শ বছর আগেকার আত্মনির্ভর ভারত কোথায় হারিয়ে গেল? দুর্ভাগ্যবশত বিদেশি ঔপনিবেশিক শক্তি এবং মার্ক্সবাদী মিথ্যুকদের fake propagandaর আড়ালে তাকে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল, যাকে জাতীয়তাবাদীরা আবার ধুলোটুলো ঝেড়ে নতুন করে সামনে নিয়ে আসছেন। আবার নতুন করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন ভারতে পর্যটক বা ছাত্র হয়ে আসা বিদেশিদের লেখাপত্তর প্রকাশিত হচ্ছে, OECD দেশগুলির সহায়তায় Prof. Angus Maddison-এর মতন বিদেশি রিসার্চারদের গবেষণার ভিত্তিতেই ডঃ শশী থারুর বা ডঃ জয়শঙ্করের মতন ভারতীয় বোদ্ধারা অক্সফোর্ড কেমব্রিজ বা হার্ভার্ডে গিয়ে সত্যিটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন and the world is taking note of it. 

প্রাক ঔপনিবেশিক ভারত মানেই যেন অশিক্ষিত, না খেতে পাওয়া, পন্থান্ধ, কুসংস্কারগ্রস্ত, জাত-পাত দীর্ন, নোংরা regressive একটা দেশ, যাকে সাদা চামড়ারা এসে মানুষ করার অনেক চেষ্টা করেও হতোদ্যম হয়ে শেষে খ্যামা দিয়েছে - এমনই একটা গল্প প্রচার করা হয়েছে এতদিন, মার্ক্সীয় ভারতধারণা যার থেকে আলাদা কিছু নয়। ভুল, সম্পুর্ন ভুল। কোটি কোটি বছর ধরে দৈহিক বিবর্তনের পর মানব এসেছে। আর যেদিন থেকে পৃথিবীতে মানব এসেছে সেইদিন থেকে বিবর্তনের ধারাটি বৌদ্ধিক হয়ে গেছে। প্রস্তর যুগ থেকে নিয়ে আজকের যুগ পর্য্যন্ত গোটা মানবসভ্যতার বৌদ্ধিক বিকাশে যদি সবচেয়ে বেশি কারো contribution থেকে থাকে তাহলে সেটি এই ভারতীয় সভ্যতার, যাদের সম্পদ লুট করার জন্য ইচ্ছে করে সেই জাতিকেই যারপরনাই vilify করা হয়েছে। 

মহাদেবের কৃপায় এতবছর পর সঠিক দিশা পেয়ে ভারত যে এখন আবার নতুন করে জাগছে, আত্মানুসন্ধান করছে, এতে গোটা বিশ্বেরই কল্যাণ হবে কারণ ভারত আবার মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রচুর value add করতে শুরু করবে, যেমনটি সে ঘুমিয়ে পড়ার আগে বহু হাজার হাজার বছর ধরে করে এসেছে। আমার খুব বড় একটা regret যে মোদিজির সরকারের আট-নয় বছর হয়ে গেল, এখনো আমাদের বাচ্চাদের সেই পুরনো ম্যাকলের মিথ্যাই পড়ানো হচ্ছে, নতুন শিক্ষানীতি অত্যন্ত শ্লথ গতিতে লাগু হচ্ছে। সেদিন বিক্রম সম্পথের অভিমত শুনছিলাম, ওনারও একই বক্তব্য। শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনটি সরকারের অনেক আগে এবং অনেক দ্রুত সেরে ফেলা উচিত ছিল।

Thursday, December 29, 2022

শরণাগতি


দুদিকে যেন দুটো সমান্তরাল জগৎ - বাইরে আর ভেতরে, শরীরে আর মনে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আর বোধগ্রাহ্য অবস্থার। দুদিকেই জীবনধারণ, তবে আপাতদৃষ্টিতে দুরকমের মনে হলেও, আসলে হয়তো নিরবিচ্ছিন্ন। সামনে যা দেখছি, শুনছি, চাখছি, অনুভব করছি তা তো সত্যি বটেই, সেসবের জন্য ভেতরে যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, সেটাও তো একইরকমের সত্যি, অস্বীকার করার উপায় নেই। 

বাড়ির বাইরে দুটো লোক তারস্বরে চিৎকার করে ঝগড়া করছে, ইচ্ছে না থাকলেও তাদের বৃত্তান্ত শুনতে হচ্ছে, যা পড়ছি তাতে মনোনিবেশ করায় ব্যাঘাত ঘটছে, বিরক্ত হচ্ছি, মনে হচ্ছে বাইরে গিয়ে বলি বাবারা, একটু অন্যত্র গিয়ে চেঁচান - সবটাই তো সত্যিকারের experience। আমি তো চাইলেও আর নিজেকে পারিপার্শ্বিক থেকে সম্পূর্ণভাবে insulate করে ফেলতে পারছি না, যে কোনো কিছুই আর মনকে effect করে না, তাই সবটাই আমার নিজস্ব সত্যিকারের অনুভূতি। ঝগড়া হচ্ছে বাড়ির বাইরে, ঝগড়া করছে অন্য কেউ আর প্রভাবিত হচ্ছি আমি - যার সঙ্গে সেই ব্যক্তিদ্বয় বা ঘটনার কোনো সম্পর্কই নেই - এটাকে মিথ্যা বলে এড়িয়ে যাই কিভাবে?

আবার, মন্দিরে গেছি, চোখের সামনে চাঁদোয়ার তলায় ফুলমালাশোভিত ঠাকুরকে দেখতে পাচ্ছি, প্রণাম করছি, তাঁর সামনে বসে আছি যাতে তাঁর নজর পড়ে আমার ওপর, চোখ বন্ধ করে তাঁর কথা চিন্তা করছি, একসময় নিজের ওপর তাঁর দৃষ্টি যেন feel করতে পারছি, এক গভীর প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে আমার মন - এটা যেমন সত্যি তেমনি ধ্যানে বসে আমি নিজের শরীরের বাইরে থেকে নিজেরই বুকের মধ্যে সেই ঠাকুরকে পদ্মাসনে বসা দেখছি - ভেতর বাইরে সব একাকার হয়ে যাচ্ছে - এও তো সত্যিকারের অনুভব। তবে এই দুটি ঘটনার মধ্যে একটা মূল পার্থক্য আছে - ঝগড়া আমার মনকে কষ্ট দিচ্ছে আর ঠাকুরের দর্শন বা ধ্যান আমায় আনন্দ দিচ্ছে। আর সাথে সাথে কোন অভিজ্ঞতাটি আমি চাইছি আর কোনটি চাইছি না, অর্থাৎ আমার বাইরের অভিজ্ঞতাকে নিয়ে ভেতরে যে reaction তৈরি হয় সেটার acceptance ও rejection যেন মনের মধ্যে একটা অদৃশ্য ফিল্টারে ছেঁকে একেবারে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

এর আর একটা দিক আছে। ইন্দ্রিয় দিয়ে যা কিছু আমরা শুষে নিচ্ছি, তা আদৌ প্রয়োজনীয় কিনা, হলেও কতটা, সেই প্রশ্ন মনকে বারেবারে নাড়া দেয়। কত rubbish ঢুকে মনকে clog করে দিচ্ছে, ভাবলে আশ্চর্য্য হতে হয় বৈকি। বাইরে ঝগড়া হচ্ছে দেখছি, শুনছি কিন্তু মনের ভেতরে গ্রহণ করেছি না - এই অবস্থায় পৌঁছনোর তীব্র ইচ্ছা তখন তৈরি হয়। অর্থাৎ যেটা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় সেটা আমি ইচ্ছা করলেই বাইরের দরজায় আটকে দিতে পারি আর যেটা প্রয়োজনীয়, কেবল সেটুকুকেই ভেতরে ঢুকতে দিতে পারি, এই ক্ষমতা যাতে তৈরি হয়, সেই দিকে নজর ঘুরে যায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যেখানে যা ঘটেছে সবই সত্যি, কিন্তু সব সত্যিতে তো আর আমার কাজ নেই, আমি শুধু সেটুকুই নেবো যেটুকু আমার কাজে লাগবে। 

এইখানে আবার তৃতীয় প্রশ্নটি জাগে - হ্যাঁগা, সেই কাজটি কি? সেটা নির্ভর করে আমি এই জীবনটাকে কোন দিকে নিয়ে যেতে চাই, তার ওপর। মাষ্টারমশাই সংসারী ছিলেন তাই ঠাকুর মাস্টারমশাইকে সংসারে থেকে তিনটি কাজ করতে বলেছিলেন - সাধুসঙ্গ, নির্জনবাস আর বিচার। সাধুসঙ্গ মানে সাধুর সঙ্গে সুখদুঃখের গুলতানি করা নয়, সাধুর ভাব গ্রহণ করা। নির্জনবাস মানে me time, সেটা হিমালয়ের বনে গিয়েও হতে পারে অথবা ঘরের কোণে - আসল নির্জনতা তো মনে। আর বিচার মানে হলো সৎ আর অসৎ-এর মধ্যে কি সৎ বুঝে নিয়ে তার ওপর বিশ্বাস অর্থাৎ ইষ্টের ওপর সম্পুর্ন নির্ভরতা - আমি যন্ত্র তিনি যন্ত্রী, এই ভাবকে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে হৃদয়ঙ্গম করা। এখন, আমি যদি আমার জীবনটাকে ঠাকুরের দেখানো পথে চালিত করতে চাই তাহলে আমার জীবনে প্রয়োজন একরকম হবে আর যদি রাস্তায় বেরিয়ে ঝগড়া শুনতে চাই এবং ফোড়ন কেটে তাতে আরো ইন্ধন জোগাতে চাই, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অন্যরকম হবে। প্রয়োজন যেহেতু আমার, কাজও যেহেতু আমি করবো, ফলে দায়ও আমার।

এর একটা চতুর্থ dimension ও আছে - আমি চাইলেই যে course control করতে পারবো, তার স্থিরতা কি? হ্যাঁ, এইটা একটা মস্ত বড় সমস্যা বটে। আমার ক্ষেত্রে যেমন, কত চাইছি বৈষয়িক বিষয় একেবারে ঝেড়ে ফেলে ঝামেলামুক্ত হতে কিন্তু হচ্ছি কই? কারণ আগের আগের জন্মে যেসব জট পাকিয়ে রেখে এসেছি সেসব তো আমাকেই খুলতে হবে, তাই না? একে বলে প্রারব্ধ। এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হলো মায়ের কৃপা - ক্রমাগত প্রার্থনা আর পীড়াপীড়িতে বিরক্ত হয়ে মা যদি একবার ছুট দিয়ে দেন, ব্যাস, কেল্লা ফতে। তবে এ এক মারাত্মক আবদার কিন্তু, বহুজন্মের তপস্যার ফলে কেউ কেউ সন্ন্যাসী হন, আর তাঁদের মধ্যেও এমন blissful state of existence মাত্র কয়েকজনের কপালেই জোটে। এমন বেয়াড়া আবদার বাপের কাছে করলে লাঠিপেটা খেতে হতে পারে। সেই জন্যই তো মায়ের কাছে যত বাজে আবদার - সাধনভজন কিছু নেই তবু ওই শান্ত অবস্থা চাই! 

এইবার ভেতর আর বাইরের মূল বিষয়। একবার স্বামী ব্রহ্মানন্দজীকে পায়েস খেতে দেওয়া হয়েছে, তাতে মহারাজ একটি চুল দেখতে পেয়ে খুব রেগে গেছেন। যেই জানতে পেরেছেন যে তাঁরই শিষ্য সুয্যি মহারাজ অর্থাৎ স্বামী নির্বাণানন্দজী সেটি রেঁধেছেন, রাগের চোটে রান্নাঘরে গিয়ে তাঁকে খুব করে মারছেন আর তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই মার খাচ্ছেন। স্বামী প্রেমানন্দজী গোলযোগ শুনে দেখতে এসে সুয্যি মহারাজকে বলছেন, "ওরে সুয্যি দাঁড়িয়ে আছিস কেন, পালা পালা"। সুয্যি মহারাজ যে উত্তরটি দিয়েছিলেন, সেটি এই ক্ষেত্রে শেষ কথা - "যেখান থেকে পালাবার ছিল পালিয়েই তো এসেছি, আর কোথায় পালাবো?"। ব্যাস, এই একটা কথাতেই জীবনের direction কি হওয়া উচিত তা যেন একেবারে জলের মতন স্বচ্ছ হয়ে যায়।

ভেবে দেখলে মায়ের কাছে যে কৃপা চাইছি সেটি আসলে শরণাগতি। সাধুর ভাব কি? শরণাগত, যাতে বাকি দুনিয়াদারী সব অপ্রাসঙ্গিক। নির্জন মন কেমন? শরণাগত, যেখানে দুনিয়াদারী ঢুকতে পারেনা। আর বিশ্বাস? সেও শরণাগতি - সব ছেড়ে তোমার আশ্রয়ে এসেছি, তুমি যেমন রাখবে তেমন থাকবো, যেখানে রাখবে সেখানে থাকবো আর আমি তোমায় ভুলে গেলেও তুমি আমায় ভুলো না। রাজা মহারাজ কেন শিষ্যকে মেরেছিলেন? গুরু বা ইষ্টকে কোনো কিছু নিবেদন করার আগে নিজেকে যেভাবে মন প্রাণ দিয়ে প্রস্তুত করতে হয়, সুয্যি মহারাজ সেদিন সেটি ভুলে গিয়েছিলেন। গুরু কিন্তু তাঁকে ভোলেননি। ভক্তের ওপর নিজের অধিকার তাই জোর করে কায়েম করেছিলেন। নিজের শরীর যাওয়ার ঠিক আগে রাজা মহারাজ তাঁর এই শিষ্যকে আশীর্বাদ করেছিলেন এই জীবনেই তাঁর ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হবে। পরবর্তীকালে গুরুর কৃপায় পরম পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী নির্বাণানন্দজী মহারাজের সত্যিসত্যিই তাই হয়েছিল।

Sunday, December 18, 2022

মন বিষানোর খেলা

সৌরভ গাঙ্গুলির কিশোরী কন্যার নাম করে ইনস্টাগ্রামে দেওয়া খুসওয়ান্ত সিংয়ের একটি উদ্ধৃতি হটাৎ করেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে সৌরভ টুইট করেছেন যে ওটি ওঁর কন্যার নয়, তার এখনো এসব বিষয় বোঝার মতন বয়স হয়নি এবং তাকে বিতর্কের বাইরে রাখাই উচিত। কন্যার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে উনি পিতার উপযুক্ত কর্তব্য করেছেন, এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু বিতর্কের পেছনে এতটাই নোংরা এক অবক্ষয়ি রাজনীতি আছে, যে সর্বস্তরের অভিভাবকের পক্ষে সেটির উদ্দেশ্য এড়ানো সম্ভব নয়।

খুসওয়ান্তের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতি বিদ্বেষ সর্বজনবিদিত। উনি চিরকাল ওঁর বিভিন্ন লেখায় এবং ২০০৩এর এই উদ্ধৃত বইতেও, ওনার কল্পনায় যা সঙ্ঘের দৃষ্টিতে এক আদর্শ ভারতের চিত্র হওয়া উচিত, সেই সম্পর্কে পাঠককে ভয় দেখিয়ে এসেছেন। ভারতের পূর্বগরিমার প্রতি সঙ্ঘের শ্রদ্ধা ও সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র্ববাদের প্রতি বিশ্বাসকে ওনার মনে হতো পশ্চাদগামী। যেমন উনি কল্পনা করতেন যে দেশে সঙ্ঘের প্রভাব বিস্তৃত হলে এলোপ্যাথিক ডাক্তারের বদলে হয়তো মানুষ বৈদ্য দেখাতে বাধ্য হবেন ইত্যাদি, যেটি সানার নাম করে দেওয়া উদ্ধৃতির মধ্যেও আছে। ভদ্রলোক ২০১৪ মার্চ মাসে মারা যান, ফলে প্রথমবার বিজেপির বিপুল জয় এবং ২০১৯শে দ্বিতীয়বার বিপুলতর জয় উনি দেখে যেতে পারেননি। একজন সঙ্ঘপ্রচারক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যে ওঁর ভারতবর্ষ সারা বিশ্বের মধ্যে এলোপ্যাথিক ওষুধ রপ্তানিতে আজ অন্যতম প্রধান শক্তি, সেটাও ভদ্রলোক দেখে যেতে পারেননি। 

যাইহোক, প্রশ্নটা খুসওয়ান্ত সিংকে নিয়ে নয়, প্রশ্নটা হলো এক মারাত্মক মানসিকতাকে নিয়ে, যা সুপরিকল্পিতভাবে কোনো কিশোর-কিশোরীর অপরিণত নিষ্পাপ মনে বৈচারিক চেতনা গড়ে ওঠার আগেই তাকে বিষিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। যেহেতু সানার নাম করে পোস্ট করা হয়েছে, তাই উদাহরণস্বরূপ ওর বয়সীদের প্রতিনিধি হিসেবে ওর নাম করেই বলছি যে আমি নিশ্চিত সানা গাঙ্গুলি সঙ্ঘের দীর্ঘ ৯৪ বছর ধরে মানুষ গড়ার ইতিহাস জানে না, জানে না অবিভক্ত কম্যুনিস্ট পার্টি থেকে যুক্তফ্রন্ট হয়ে বামফ্রন্টের মেকি বামপন্থার ইতিহাস, জানে না idea of India আর idea of Bharat-এর মধ্যে মূল বৈচারিক পার্থক্য কোথায়। এই বয়সে, এবং যে বিত্তশালী পরিবেশে ও বড় হচ্ছে, তাতে ওর এতসব জানার কথাও নয়। তাহলে হটাৎ কেন ওর নামে এই পোস্টটা দেওয়া হলো? কারণ একজন বিখ্যাত কিশোরীর নাম ভাঙিয়ে catch them young নামক রাজনৈতিক কালসর্প অবচেতনের লোহার বর্ম ভেদ করে যথাস্থানে পৌঁছবার ফন্দি এঁটেছে। যে মন দেশের পক্ষে ভালো মন্দ বিচার করার মতন পরিণতই নয়, তাতে রং লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা তাকে সারা জীবনের মতন অযৌক্তিক করে দেবে, তার নাকের ওপর রঙিন চশমাটা একদম চিরস্থায়ী করে দেবে। 

আপাতদৃষ্টিতে অপরিণত মন বিষানোর কাজটা হয়তো সোজা কিন্তু এর ফল বড় মারাত্মক। সেই কারণেই আজ যখন সারা দেশে ডানপন্থার জয়জয়কার, যে বাঙালির হাত ধরে আধুনিক ভারতে এই মতবাদের হাতেখড়ি, জাতীয়স্তরে তার নীতি নির্ধারণের জায়গায় আজ আর সেই বাঙালির অস্তিত্বই নেই। কারণ বাঙালির প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ডানপন্থীদের সম্পর্কে ঠিক সেই ভুল কথাগুলোই বোঝানো হয়েছে যা খুসওয়ান্ত সিং লিখেছেন। সানা গাঙ্গুলি একটি বাচ্চা মেয়ে হলেও, বিখ্যাত ব্যক্তির সন্তান বলেই এত হৈচৈ হচ্ছে। নাহলে কোনো অনামা বাচ্চা নিজের খেয়ালে কোথায় কি লিখলো না লিখলো বা বললো না বললো, তা নিয়ে কেউ মাথাই ঘামাত না। 

সব কিশোর-কিশোরী কিন্তু সানার মতন বিখ্যাত নয়। তারা নিজেদের মধ্যে কি আলোচনা করছে তা হয়তো তাদের অভিভাবকরাও খেয়াল করেছেন না। নীরবে সারা দেশ জুড়ে ভবিষ্যতের বিদ্বেষের রাজনীতির বীজ বোনা হয়ে চলেছে, অথচ আমরা বাবা-মায়েরা হয়তো জানতেই পারছি না। আমাদের সন্তান যেন সুস্থ চেতনার অধিকারী হয়, তারা বড় হয়ে যেন নিরপেক্ষভাবে যে কোনো বিষয়কে স্বচ্ছ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে নিজের হিতে, সমাজের হিতে সঠিক নির্ণয় নিতে পারে, অভিভাবক হিসেবে সেটাই তো আমরা চাই। এটা প্রত্যেক শিশুর অধিকারও বটে। 

আজ হটাৎ যখন যাদবপুরে আজাদীর স্লোগান শুনি তখন আমাদের মধ্যে অনেকেরই মনে হয় এরা কোন বিকৃত শিক্ষাব্যবস্থার শিকার? এদের দুর্বিনীত অভব্য অছাত্রসুলভ আচরণ অভিভাবকদের অনেককেই বিস্মিত করে। এগুলো কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নিজেদের সন্তানের প্রতি আমাদের আরো বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। ওদের ওপর কোনো কিছুই চাপিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। চারদিকে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা আর নিয়মিতভাবে জল আর সার দেওয়া, এটুকুই তো যথেষ্ট। বাকি মহীরুহ তার ব্যাপ্তিকে নিজের বীজের মধ্যেই লুকিয়ে নিয়ে এসেছে, সে ঠিক তার মতন করে বেড়ে উঠে একদিন সবাইকে ফুল দেবে, ফল দেবে, প্রয়োজনে ছায়াও দেবে।

Tuesday, December 13, 2022

একটু ঘুরে আসি

বয়সের সাথে সাথে মানুষের মন বোধহয় আরো বেশি নরম হয়ে পড়ে, আরো বেশি সংবেদনশীল, আরো আবেগপ্রবণ, মানসিকভাবে অনেক বেশি vulnerable - অন্ততঃ নিজের ক্ষেত্রে আমি সেটাই লক্ষ্য করছি। অজস্র শোক পেয়েছি জীবনে, অনেক আঘাত, তবে সে সবে খুব যে একটা প্রভাবিত হয়েছি এতকাল, তেমনটা কিন্তু নয়। হয়তো ছোটবেলা থেকেই দুঃখকষ্ট সয়ে সয়ে সহ্যশক্তি অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল, যে কোনো অবস্থাতেই একা লড়াই করার মানসিকতা, ঘুরে দাঁড়াবার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ইত্যাদির ফলে কম বয়সে আঘাত কাটিয়ে ওঠাও সহজতর ছিল। এতদিন অতি নিকটজনের বিচ্ছেদও আমায় এতটা দিশাহারা করে দিতে পারেনি, চট করে সামলে উঠেছি। এবার আর যেন পেরে উঠছি না। কত চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই শোকের বৃত্ত থেকে বেরোতে পারছি না। ঘুরে ফিরে বারেবারে বুকের ফাঁকা জায়গাটায় এক একটা ঢেউ ধাক্কা মারছে আর ভেতরটা পুরো হায় হায় করে উঠছে। একজন শ্রদ্ধেয় মহারাজ কথামৃতকার শ্রীমকে quote করে গতকাল তাঁর পোস্টে লিখেছিলেন 'ত্যাগের পথে বিঘ্ন, স্নেহ। স্নেহতেই সংসার চলছে। সংসারই স্নেহ। এইটি ঈশ্বরের চাতুরী। এ দিয়ে তিনি জগৎকে বেঁধে রেখেছেন।' পড়ার পর থেকে আমি ভাবছিলাম যে এ একেবারে সত্যি কথা, এ কথায় তো কোনো ভুল নেই। খালি মুশকিল হলো, যখন কিছুই পড়িনি, মায়া কি জানতাম না, তখন মন অনেক শক্ত এবং নির্দয় ছিল আর এখন যখন কিছু কিছু পড়া হয়েছে, অহংকার সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, তখন মনটা যেন মাখা সন্দেশের মতন নরম তুলতুলে হয়ে গেছে যাতে স্নেহের অন্ত নেই - এবার কি করি? এখন কারো কষ্ট দেখলে বা কষ্টের কথা শুনলে ঝপ করে চোখে জল এসে যায়, কাউকে কোনো দুস্থের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখলে চোখ ভিজে যায়, এমনকি রেডিওতে দুঃখের গল্প শুনলেও কান্না পায়, কিসের মায়া আর কিসের কি? যাইহোক, আমার আর এই বাড়িভর্তি স্মৃতির আবহাওয়ার মধ্যে থাকতে ভালো লাগছে না তাই আগামীকাল আমি আর গিন্নি দিন কয়েকের জন্য পালাচ্ছি। গতকাল শেষকৃত্য করতে নিয়ে যাওয়ার আগে লাড্ডুকে একটা সেন্ট মাখিয়ে দিয়েছিলাম। আজ সকালে ওই ঘরের দরজাটা খুলতেই সেই সেন্টের গন্ধটা ধক করে নাকে এসে লাগলো। আসলে ওই গন্ধটা থেকে পালাচ্ছি। পালাচ্ছি সকাল আর বিকেলের চায়ের সাথে বিস্কুটের প্যাকেটের প্রথম চারটে বিস্কুট থেকেও, যেগুলোকে আমরা বলতাম লাড্ডুট্যাক্স। পালাচ্ছি নিজেদের থেকে, নিজেদের যন্ত্রণাদায়ক familiar living space থেকে আর নিজেদের এতদিনের অভ্যেস থেকে - যে অভ্যেসের বশে এখনো ভুল করে বেশি ভাত ফুটিয়ে ফেলা হচ্ছে বা ভুল করে ওর জলের পাত্র ভরে দেওয়া হচ্ছে। অনেকগুলো নাম ছিল ছেলেটার - গুবলেট, পায়ে-পায়ে, লাড্ডুলিং, লেডো, গাবলু, আর ও সবেতেই বাঁই বাঁই করে লেজ নাড়িয়ে সারা দিতো। আমি লবির সোফাটায় বসে বই পড়ছি, ও পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে আর ওর দোদুল্যমান লেজটা সোফার গায়ে লেগে লেগে ক্রমাগত ফট ফট করে আওয়াজ করছে - পালাচ্ছি সেই আওয়াজ থেকেও।