তাঁর শরীরটাই কেবল চোখের সামনে নেই, ফলে ইচ্ছে করলেই আমরা আর তাঁকে বাইরে দর্শন করতে পারিনা। কিন্তু সূক্ষ্মশরীরে তিনি রয়েছেন আমাদের চেতনায়, আমাদের গোটা অস্তিত্ব জুড়ে, ফলে তিনি সর্বদা ধ্যানগম্য। যেই আমরা অন্তর্মুখী হৈ এবং তাঁকে স্মরণ করি অমনি তাঁর অমৃতস্পর্শ হৃদয়ে অনুভব করা সহজেই সম্ভব হয়। তিনি নিজের মুখে হয়তো সকলের সাথে কথা বলেন না কিন্তু লিখিত আকারে তাঁর বাণী আমরা নিরন্তর শুনতে পাই কথামৃত বা লীলাপ্রসঙ্গ বা তাঁর অন্তরঙ্গ পার্ষদদের স্মৃতিকথার মাধ্যমে।
তিনি যে এখনো সূক্ষ্মশরীরে সাক্ষাৎ আছেন তার অজস্র প্রমাণ ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে - বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীতেও বহু মানুষ তাঁকে নিজেদের চোখ দিয়ে দেখেছেন, কেউ কেউ হয়তো এখনো দেখেন, তাঁর নির্দেশ পান। রাজা মহারাজের শিষ্য এবং সেবক সুয্যি মহারাজ অর্থাৎ পরম পূজ্যপাদ স্বামী নির্বাণানন্দজী মহারাজের যখন শেষের দিক, তখন তাঁর দিনক্ষণ ইত্যাদির বোধ চলে গিয়েছিল। এমন হতো যে তিনি হয়তো তিনদিন ধরে ঘুমাচ্ছেন আবার তারপর টানা তিনদিন সমানে জেগে আছেন। এ হেন সুয্যি মহারাজ হঠাৎ তাঁর নিজের এক জন্মদিনে সেবককে বলছেন তাঁকে চান টান করিয়ে দাঁড়ি কামিয়ে পরিষ্কার জামা পরিয়ে দিতে কারণ সেদিন অনেক লোক তাঁকে দেখতে আসবেন, খুব আনন্দ হবে।
সেবক সব জেনেও ইচ্ছে করেই জিজ্ঞেস করলেন যে আজ কি কোনো বিশেষ দিন? তখন সুয্যি মহারাজ উত্তর দিলেন যে ঠাকুর এসে তাঁকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বলেছেন যে আজ মহারাজের জন্মদিন, শিষ্যরা সব আসবেন, খুব আনন্দ হবে, তাই তিনি যেন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেন। তিনি পাত্তা না দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কিন্তু ঠাকুর দ্বিতীয়বার তাঁকে ঠেলে তুলে একই কথা বলাতে, তাঁর মনে হয়েছে যে সত্যি সত্যিই আজ তাঁর জন্মদিন এবং তাই তাঁর ফিটফাট হয়ে থাকা প্রয়োজন। শেষের দিকে মাঝেমাঝেই মহারাজ তাঁর সাথে ঠাকুরের সূক্ষ্মশরীরের কথোপকথন প্রকাশ করে ফেলতেন, এ সব এখন যাঁরা বেলুড় মঠের সিনিয়র সাধু, তাঁরা ব্রহ্মচারী অবস্থায় নিজেদের কানে শুনেছেন।
এগুলো কোনোটাই miracle নয়, এ বাস্তব সত্যি। ঐ যে সেদিন বরানগরে সেই আমগাছের তলায় দাঁড়িয়ে ঠাকুর সবাইকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন 'চৈতন্য হোক', সেটা কি দেশ কালের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল? অবতারতত্ত্ব কি এতোই হালকা আর এতটাই অল্প তার দায়রা? হয় কখনো? সেই কবে শ্রীকৃষ্ণ শরীরে এসেছিলেন, আজও সারা বিশ্বজুড়ে তাঁর নাম নিয়ে মানুষ জীবনের দিশা খুঁজে পাচ্ছেন। শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রেও তো আমরা তাই দেখি। কোথায় আমেরিকা, কোথায় ইউরোপ, কোথায় আফ্রিকা, কোথায় অস্ট্রেলিয়া আর কোথায়েই বা বাকি এশিয়া - সর্বত্র তাঁর মন্দির, সর্বত্র প্রতিদিন বেদান্তের চর্চা হচ্ছে, সর্বত্র মানুষ প্রতিদিন তাঁর পুণ্যনামে আকৃষ্ট হয়ে জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছেন।
এখন তাঁকে চোখে দেখতে গেলে সঙ্ঘগুরুর মধ্যে তাঁর সচল বিগ্রহ যে কেউ যে কোনোদিন চাইলেই দেখতে পারেন আর সাধনজীবনের যে কোনো প্রশ্নের উত্তরও তাঁকে বেলুড় মঠের ঠিকানায় চিঠি লিখলেই জবাবে আসে। আজকের এই বিশেষ দিন, যাকে ভক্তরা কল্পতরু উৎসব বলেন, সেটি কেবল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আনন্দ উৎসবই নয়, সেটি গোটা প্রাণী জগৎ যাতে আত্মদর্শন করে জীবনের উদ্দেশ্য সফল করতে পারে, তার জন্য একজন জাগ্রত, present and contemporary অবতারের শুভ আশীর্বাদ। তিনি বর্তমান, তাঁর aura বর্তমান, তাঁর উপস্থিতি বর্তমান - He is a living God. এখনো বহুদিন ঠাকুরের সূক্ষ্মশরীর থাকবে, ফলে তাঁর আশীর্বাদ এখনো অনেক প্রজন্ম ধরে মানুষের ওপর বর্ষিত হবে, যেমনটি এই মুহূর্তে আমাদের সকলের ওপর হচ্ছে। খালি আমাদের মাথা পেতে সেটি গ্রহণ করার অপেক্ষা মাত্র।
জয় শ্রীগুরুমহারাজজী কি জয়। জয় মহামায়ী কি জয়। জয় স্বামীজী মহারাজজী কি জয়।
No comments:
Post a Comment