মাত্র কয়েক শ বছর আগেও, ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে, আমাদের দেশে জনসংখ্যা আজকের তুলনায় এক ভগ্নাংশ হওয়া স্বত্তেও সে সময়ে দেশের মোট সাড়ে সাত লক্ষ গ্রামে সাত লক্ষ বত্রিশ হাজার গুরুকুল ছিল, ভারতবাসী মোটেও অশিক্ষিত ছিলেন না। ইংল্যান্ডে ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে যখন প্রথম পাব্লিক স্কুল খোলে, ভারতে তখন already সাত লক্ষের ওপর গুরুকুল বর্তমান আর ম্যাকলে যখন উত্তরভারতে G.W. Luther আর দক্ষিণভারতে Thomas Munroe কে দিয়ে সার্ভে করিয়েছিলেন তখন তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী সে সময়ে উত্তর ও দক্ষিণভারতে সাক্ষরতার হার ছিল যথাক্রমে ৯৭% এবং ১০০%। তখনো জাতের নামে বজ্জাতি শুরু হয়নি।
তার আগের কথা, অর্থাৎ নালন্দা আর তক্ষশীলার মতো বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কথা তো নাহয় ছেড়েই দিলাম, যার মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা বহু দেশকে জীবনের রাস্তা দেখাতো, গ্রামেই দেশজ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এক ধর্ম আধারিত সুখী জীবনযাপনের সমস্ত ব্যবস্থা মজুত ছিল। মাত্র কয়েক শ বছর আগেও ভারতে কেউ বেরোজগার ছিলেন না, কোনোদিন কোনো দুর্ভিক্ষ হয়নি আর আজকের ভাষায় যাকে আমরা বিদেশিমুদ্রা অর্জন বলি, তাতেও পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি এলেম আমাদেরই ছিল।
আজ, এত ইংরিজি শিক্ষা, শিল্পায়ন, উন্নত জীবনধারা ইত্যাদির পর সেদিনের চেয়ে দশগুন বেশি জনসংখ্যার জন্য সারা দেশে মোট ইস্কুলের সংখ্যা কত? না পনেরো লক্ষ নয় হাজার - গ্রামের দিকে ১২.৫ লক্ষ আর শহরের দিকে ২.৫ লক্ষ। এখন, আধুনিক বিদেশি শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত, অতীতের 'native backwardness'কে ঝেড়ে ফেলে পাশ্চাত্যের 'enlightened forwardness'কে আঁকড়ে ধরে 'উন্নত' হয়ে ওঠা দেশে ২৫% মানুষ নিরক্ষর, ৮% মানুষ সম্পূর্ণ বেকার (underemployed কত ঈশ্বরই জানেন) আর সরকার বিনা পয়সায় রেশন না দিলে ১২.৫% মানুষ না খেতে পেয়ে মরে যাবেন।
তাহলে মাত্র কয়েক শ বছর আগেকার আত্মনির্ভর ভারত কোথায় হারিয়ে গেল? দুর্ভাগ্যবশত বিদেশি ঔপনিবেশিক শক্তি এবং মার্ক্সবাদী মিথ্যুকদের fake propagandaর আড়ালে তাকে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল, যাকে জাতীয়তাবাদীরা আবার ধুলোটুলো ঝেড়ে নতুন করে সামনে নিয়ে আসছেন। আবার নতুন করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন ভারতে পর্যটক বা ছাত্র হয়ে আসা বিদেশিদের লেখাপত্তর প্রকাশিত হচ্ছে, OECD দেশগুলির সহায়তায় Prof. Angus Maddison-এর মতন বিদেশি রিসার্চারদের গবেষণার ভিত্তিতেই ডঃ শশী থারুর বা ডঃ জয়শঙ্করের মতন ভারতীয় বোদ্ধারা অক্সফোর্ড কেমব্রিজ বা হার্ভার্ডে গিয়ে সত্যিটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন and the world is taking note of it.
প্রাক ঔপনিবেশিক ভারত মানেই যেন অশিক্ষিত, না খেতে পাওয়া, পন্থান্ধ, কুসংস্কারগ্রস্ত, জাত-পাত দীর্ন, নোংরা regressive একটা দেশ, যাকে সাদা চামড়ারা এসে মানুষ করার অনেক চেষ্টা করেও হতোদ্যম হয়ে শেষে খ্যামা দিয়েছে - এমনই একটা গল্প প্রচার করা হয়েছে এতদিন, মার্ক্সীয় ভারতধারণা যার থেকে আলাদা কিছু নয়। ভুল, সম্পুর্ন ভুল। কোটি কোটি বছর ধরে দৈহিক বিবর্তনের পর মানব এসেছে। আর যেদিন থেকে পৃথিবীতে মানব এসেছে সেইদিন থেকে বিবর্তনের ধারাটি বৌদ্ধিক হয়ে গেছে। প্রস্তর যুগ থেকে নিয়ে আজকের যুগ পর্য্যন্ত গোটা মানবসভ্যতার বৌদ্ধিক বিকাশে যদি সবচেয়ে বেশি কারো contribution থেকে থাকে তাহলে সেটি এই ভারতীয় সভ্যতার, যাদের সম্পদ লুট করার জন্য ইচ্ছে করে সেই জাতিকেই যারপরনাই vilify করা হয়েছে।
মহাদেবের কৃপায় এতবছর পর সঠিক দিশা পেয়ে ভারত যে এখন আবার নতুন করে জাগছে, আত্মানুসন্ধান করছে, এতে গোটা বিশ্বেরই কল্যাণ হবে কারণ ভারত আবার মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রচুর value add করতে শুরু করবে, যেমনটি সে ঘুমিয়ে পড়ার আগে বহু হাজার হাজার বছর ধরে করে এসেছে। আমার খুব বড় একটা regret যে মোদিজির সরকারের আট-নয় বছর হয়ে গেল, এখনো আমাদের বাচ্চাদের সেই পুরনো ম্যাকলের মিথ্যাই পড়ানো হচ্ছে, নতুন শিক্ষানীতি অত্যন্ত শ্লথ গতিতে লাগু হচ্ছে। সেদিন বিক্রম সম্পথের অভিমত শুনছিলাম, ওনারও একই বক্তব্য। শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনটি সরকারের অনেক আগে এবং অনেক দ্রুত সেরে ফেলা উচিত ছিল।
No comments:
Post a Comment