ইঁট কাঠ পাথর কংক্রিট মিশিয়ে একটা বাড়ি তৈরি হতে পারে কিন্তু সুখী গৃহকোন বা ঘরকন্না তৈরি হয় ঈশ্বরের আশীর্বাদ, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য, মায়ের স্নেহ ভালোবাসা আর অপরিসীম ত্যাগ, বাপের কর্তব্যবোধ আর ছেলেমেয়েদের নির্ভরশীলতা ও ভক্তি শ্রদ্ধা মিশিয়ে। প্রত্যেক বাড়িরই একটা নিজস্ব পারিবারিক ধারা, একটা বিশিষ্ট সংস্কৃতি আছে, যা পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে জীবনে চলার পথে সদর্থক দৃষ্টিকোণ জোগায় আর একে অপরের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গোটা পরিবার একটা complete composite unit হিসেবে যাতে অনায়াসে function করতে পারে, তার foundation গড়ে দেয়। এই যে sense of belonging, এই যে নিজেদের পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রবণতা, এই যে একটাই unit হিসেবে নিজেদের ভাবা, এসব ছাড়া-ছাড়া ভাব থাকলে আসে না, আসতে পারেনা - যে কোনো broken familyর দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়।
ঠিক সেইরকমই আমাদের দেশ। যেদিন পরিবারের একটা অংশ নিজেদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চায়, সেইদিনই তাদের মধ্যে পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব দেখা দিতে শুরু করে, তারা পরিবারের ভালোর মধ্যে আর নিজেদের ভালো দেখতে পায়না। 'পরিবার' শব্দটির বদলে 'দেশ' শব্দটি ব্যবহার করলেও ঠিক এই একই ব্যাপার লক্ষ্য করা যাবে - দেশীয় মূল্যবোধহীন কিছু লোক একটা অদ্ভুত negative দেশবিরোধী ক্ষতিকারক মানসিক অবস্থানের কারণে নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের গায়ে পাথর ছুঁড়ে ক্ষতি করে অল্হাদিত হয়, যেমন পাগলের গো-বধে আনন্দ। এই একই মানসিকতা আমরা দেখেছিলাম সিএএ নিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ওপর অকারণ বিধ্বংসী রোষবর্ষণের সময়ও। সে সময় না হয় ইচ্ছাকৃতভাবে অশিক্ষিতদের ভুল বুঝিয়ে তাতানো হয়েছিল, তাও যাহোক একটা justification পাওয়া যায়, কিন্তু এবারে?
আমাদের দেশটি কেবলমাত্র একটি বাসভূমি নয়, ইনি আমাদের মা। ঠিক যেমন একটা বাড়ি কেবল বাড়ি নয়, সেটি একটি শান্তিপূর্ণ আশ্রয়স্থল। মা যেমন আমাদের প্রতিপালন করেন, আমাদের দেশ মাতৃকাও ঠিক সেভাবেই আমাদের খাওয়ান, পরান, দুহাত দিয়ে আগলে রাখেন। ভারতবর্ষ কোনো inanimate object নয়। ভারত হলো আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রাণশক্তির ধারকক্ষেত্র, আমাদের জন্মভূমি, আমাদের ধাত্রীভূমি, আমাদের কর্মভূমি, পুণ্যভূমি। আর সেজন্যই সনাতন পরম্পরায় তিনি জীবন্ত, মহাশক্তির অংশ, সাক্ষাৎ জননী। এই যে মায়ের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে আশীর্বাদ নেওয়ার ভারতীয় পরম্পরা, এটা সনাতন পারিবারিক সংস্কৃতি এবং ধর্মবোধ থেকেই তৈরি হয়েছে এবং সেই চিরন্তন মাতৃরূপ আমরা দেশমাতৃকার মধ্যেও দেখি।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে শ্রীরামচন্দ্রের সামাজিক পরিচয় কি? না কৌশল্যানন্দন আর জানকীবল্লভ। লক্ষণের কি? সুমিত্রানন্দন। শ্রীকৃষ্ণের কি? দেবকিনন্দন ও যশোদানন্দন। কর্ণের কি? রাধাসুত। পাণ্ডব কারা? কুন্তিপুত্র। এটাই শাশ্বত ভারতবর্ষ, যেখানে নারীর পরিচয়ে পরিচিত হওয়া এককালে পুরুষের সৌভাগ্য বলে গণ্য করা হতো। তাই বিরজা হোম করে সংসার ত্যাগ করার পরেও সন্ন্যাসী নিজের ইষ্ট, গুরু আর অন্যান্য সন্ন্যাসী ছাড়া পূর্বাশ্রমের মধ্যে একমাত্র জন্মদাত্রী মাজননীকেই প্রণাম করতে পারেন। চতুর্দিকে কেবল শক্তির প্রকাশ - শক্তি ছাড়া আর কোথাও কিছুই নেই। পঞ্চকোষেও সেই শক্তির প্রকাশ, আবার আমার দেশমাতৃকাও সেই শক্তিরই রূপ, তাই এক অবিচ্ছেদ্য অনন্ত শক্তির manifestation হিসেবে আমি আর আমার জন্মভূমি এক এবং অবিচ্ছেদ্য, ঠিক যেমন সারা বিশ্ব আমার কুটুম্ব। এই identity relationship construct একমাত্র সনাতন সংস্কৃতিরই অংশ, যা আর কারো মধ্যে নেই। যাদের ধর্মবোধ নেই তাদের মাতৃবোধও নেই, তাই মায়ের জাতের ওপর অত্যাচার করতে তাদের বুক কাঁপে না। ফলে মায়ের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে বেচে দিতেও তাদের দ্বিধা হয় না, যেমন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের গায়ে ঢিল ছুঁড়ে তার ক্ষতি করতে তাদের মনে একটুও বাঁধে না, বরং পৈশাচিক উল্লাস হয়।
প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেবেন আমি জানি না, হয়তো নেবেন, হয়তো নেবেন না। তবে মালদার কুমারগঞ্জ থেকে গোটাকতক দুষ্কৃতিকে ধরে জেলে পুড়ে বা তাদের সম্পত্তি ক্রোক করে বা বুলডোজার চালিয়ে হয়তো সাময়িকভাবে ভয় দেখানো যেতে পারে, তাদের মনে প্রাণে 'বন্দে মাতরম' মন্ত্র প্রোথিত হবে না। ওটাই কিন্তু একমাত্র permanent solution - অসীম বলশালিনী মাতৃশক্তিকে পুরুষের চেয়ে হীনমন্য, subservient, dependent, obedient প্রাণী হিসেবে নয়, মা হিসেবে ভাবতে শেখানো আর মা হিসেবে বিনত অবনত অনুগত হয়ে শ্রদ্ধা করতে শেখানো। বাধ্য যদি করতেই হয়, এইখানটায় করতে হবে, আর না বদলাতে চাইলে এমন exemplary punishment দিতে হবে যাতে আচ্ছা-সে-আচ্ছা ক্রিমিনালেরও প্রাণ কেঁপে উঠে। নতুন যে ভারতবর্ষ জেগে উঠছে তার একটাই মহামন্ত্র - 'বন্দে মাতরম'। বন্দে ভারত, বন্দে মাতরম।
No comments:
Post a Comment