Tuesday, January 24, 2023

কংগ্রেস

অনেকদিন রাজনীতি নিয়ে কিছু লিখিনি কিন্তু বিবিসির একটা বেআইনি কাজকে সমর্থন করে কিছু অপগন্ডের আশা জেগে উঠছে দেখে ভাবলাম মনের কথাটা বলেই ফেলি। অবশ্য একই কথা সুপ্রিম কোর্টের কলিজিয়ামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যেখানে জজ সাহেবরা নিজেরা নিজেরাই সংবিধান সংশোধন করে নিয়েছেন আর রাজনৈতিক কারণেই কেউ কেউ সেটাকে সমর্থনও করছেন!

কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির রাজনীতিতে আমার বিন্দুমাত্র কৌতুহল নেই কারণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি যে 'হামাম মে সব নাঙ্গে হ্যায়'। কিন্তু আমার দেশের ব্যাপারে আমার যথেষ্ট চিন্তা আছে এবং একটা credible opposition এর অভাবে শাসকদলের লাগামছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ও আছে। 

প্রথমেই বুঝে নেওয়া দরকার যে নেহেরুর কংগ্রেস আর ইন্দিরার কংগ্রেস এক নয়, যেমন নরসিংহ রাওয়ের কংগ্রেস আর এখনকার সোনিয়া-রাহুলের কংগ্রেসও এক নয়। নেহেরু বিচারধারায় প্রায়-বামপন্থী ছিলেন, ইন্দিরা ক্ষমতার জন্য দেশের ভেতরে ও দেশের বাইরের বামপন্থী শক্তিকে চতুরতার সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন মাত্র।

তারপর নরসিংহ রাও যদিও কংগ্রেসকে বামপন্থার বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো থেকে প্রায় বের করে এনেছিলেন, সোনিয়া কংগ্রেসকে রাওমুক্ত করার জন্যই নিজের আধিপত্য বজায় রেখেই শাশুড়ির মতোই বামপন্থাকে ব্যবহার করেছিলেন। মনমোহন সিংয়ের সময় বিচারব্যবস্থা নিয়ে কংগ্রেসি মন্ত্রীরা সংসদে যে ধরণের সমালোচনা করেছিলেন এবং সে সময়ের বিরোধী দলনেতা অরুন জেটলির সমর্থন পেয়েছিলেন, আজ নিজেরা শুনলে হয়তো অবাক হবেন।

রাহুল গান্ধীর ব্যাপারটা একদম অন্যরকম কারণ তাঁর নিজের কোনো স্বাধীন চিন্তা নেই, বৌদ্ধিকস্তরে তিনি সম্পূর্ণভাবে পরনির্ভর অথচ পাহাড়প্রমাণ অহংকারের অধিকারী। তাই কাজের লোকেরা সবাই তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অকেজো বামপন্থীরা তাঁকে ঘিরে ফেলে নিশ্চিন্তে নিজেদের এজেন্ডা চালাতে পারছে আর তিনি কাঠপুতুলের মতো তাদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে কংগ্রেসকে দিনে দিনে আরো অপ্রাসঙ্গিক করে তুলছেন। 

আচ্ছা, ভারতের কতজন নাগরিক নিউ ইয়র্ক টাইমস বা ওয়াশিংটন পোস্ট বা দ্য ওয়ের পড়েন অথবা বিবিসি বা আল জাজিরা দেখেন? পয়সা দিয়ে ওখানে মিথ্যে ন্যারেটিভ ছাপিয়ে বা মিথ্যে প্রোপাগান্ডামূলক ডকুমেন্টরি চালিয়ে কি দেশের অগুনিত সাধারণ নাগরিকের প্রাত্যহিক জীবনের সদর্থক অভিজ্ঞতাকে নস্যাৎ করে দেওয়া যাবে? এতে একমাত্র বিদেশি ভারতবিরোধী শক্তির হাতে কিছু প্রোপাগান্ডার অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়, আর কিছুই না।

বেছে বেছে সেনাদিবসের দিনেই যদি দিগ্বিজয় সিং বালাকোট হামলার সত্যতা নিয়ে আবার প্রশ্ন তুলে বসেন, যখন কিনা সেই অপারেশনের প্রধান কান্ডারীকেই কংগ্রেস নিজেদের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করে কিছুদিন আগেই প্রচারের বন্যা বইয়ে দিয়েছে, জয়রাম রমেশের ঠাকুর্দার সাধ্য আছে সেই দেশবিরোধী কংগ্রেসকে অবনমনের হাত থেকে বাঁচানোর? 

নিছক রাজনৈতিক কারণে হটাৎ করে গণবেশ পরে ময়দানে হাজির হয়ে গেলেই যেমন কেউ স্বয়ংসেবক হয়ে যান না, ঠিক তেমনই বামপন্থীদের দ্বারা চালিত হলেই কেউ বামমনস্ক হয়ে যান না এবং সেটা তাঁর দামি পোশাকআশাক আর অসংলগ্ন কথাবার্তায় ফুটেও ওঠে। দুটোই সমান মেকি এবং ভারতে সুস্থ, স্বচ্ছ, মতবাদভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে ক্ষতিকারক। 

কংগ্রেসের উচিত তারা যা নন সেটা সাজার বৃথা চেষ্টা ত্যাগ করা, ঠিক যেমন বিজেপির উচিত তারা যা নন, অন্যের দেখাদেখি তাই হয়ে ওঠার চেষ্টা না করা। গণতন্ত্রে বিভিন্ন বিচারধারা থাকবে, খোলাখুলি মতের আদানপ্রদান হবে, দেশের স্বার্থ কেবল ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয়স্বার্থের উর্দ্ধে হবে তাই নয়, সর্বোপরি হবে - তবে না দেশের মানুষের উপকার হবে। 

কংগ্রেস ভেবে দেখুক সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক অপপ্রচারকারী, শত্রুর বন্ধু আর নিন্দুকের ভূমিকা পালন করবে না রাষ্ট্রের উন্নতি ও বৈভবের কারণ হয়ে উঠবে। কংগ্রেসে কি চায় তা গৌণ, দেশের মানুষ কি চান সেটাই মুখ্য। দেশের মানুষ যদি কোনো রাজ্যে বিজেপিকে না চান, কংগ্রেস বা অন্য কোনো দল যদি নির্বাচিত হয়, ক্ষতি কি? তেমনিই দেশের মানুষ যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এইমুহূর্তে কেবলমাত্র মোদিজীকেই চান, অন্য কাউকে নয়, তাঁদের মতামতকে অসম্মান করার অধিকার কারো আছে কি?

বামপন্থীরা মনুষ্যত্বের শত্রু, এদের চেয়ে দোগলা, হিংস্র আর মিথ্যেবাদী রাজনৈতিক মতাবলম্বী সারা বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। শ্রেণীর নামে সারা বিশ্ব জুড়ে কত কোটি কোটি মানুষকে যে এরা খুন করেছে, তার ইয়ত্তা নেই, হিটলার এদের এক একটি রত্নের তুলনায় দুগ্ধপোষ্য শিশু। এদেরকে ব্যবহার করা এক জিনিস আর এদের দ্বারা চালিত হওয়া অন্য জিনিস। এদের রাস্তা যদি সঠিক হতো তাহলে মাত্র সত্তর বছরের মধ্যে সারা বিশ্বজুড়ে মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে এদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতেন না। 

এদের খপ্পরে পড়ে কংগ্রেস যা করছে ভুল করছে, ভবিষ্যতে যা করবে তাও ভুল করবে। এতদিনে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেছে - রাহুলমুক্ত হতে না পারলে দেশের রাজনীতিতে কংগ্রেসের কোনো সদর্থক ভূমিকা থাকবে না। ব্যাপারটা দুঃখের হলেও সত্যি। ততদিন মিথ্যের বেসাতি চলতে থাকবে, যা দেখে ঘোড়াতেও হাসছে। আমি আশা করবো যে অদূর ভবিষ্যতে সারা দেশজুড়ে একটা মস্ত বড় রাজনৈতিক মন্থন হবে আর across the spectrum যা কিছু মেকি, যা কিছু অসৎ, যা কিছু মিথ্যা সব মানুষের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে আস্তাকুঁড়ে স্থান পাবে।

No comments:

Post a Comment