শ্রীমৎ স্বামী চেতনানন্দজীর একটি বক্তৃতায় তিনটি শব্দ শুনলাম - Faith, Hope and Love - বিশ্বাস, আশা আর ভালোবাসা। শুনে মনে হলো যে এগুলি একেবারে তিনটি essential element of living, যেগুলি না থাকলে মানুষের জীবনটাই অর্থহীন। কি বিশ্বাস? না নিজের অধ্যবসায়ের ওপর বিশ্বাস, নিজের গুরুবাক্যের ওপর বিশ্বাস আর এই জীবনেই ইষ্টদর্শন হবে সেই বিশ্বাস। কিসের আশা? গুরু আমায় কৃপা করবেন, ইষ্ট আমায় কৃপা করবেন, মা আমায় শরণাগতি দেবেন - সেই আশা।
আর ভালোবাসা। ঠাকুর বলেছেন এই কালে মনের পাপ পাপ নয়। পূর্ব জন্মের সংস্কারের ফলে হয়তো মনের মধ্যে কখনো কখনো বৃত্তি খেলে যাচ্ছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি পাপী, আমার কেবল সুকর্ম আছে। I am essentially Divine. সেইজন্য আমার গুরু আমায় এত ভালোবেসে আমার ভার নিয়েছেন, আমার ইষ্ট আমায় এত ভালোবেসে তাঁর নামরূপ দিয়েছেন আর মা তো আমায় অসম্ভব ভালোবাসেনই, যার প্রমান আমি প্রতিটি পদে পদে পাই। আমিও আমার গুরুকে, আমার ইষ্টকে আর আমার চিরকালের মাকে ভীষণ ভালোবাসি, প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। তাই আমার প্রতিদিনের মানসিক যাপন একটা ভালোবাসার অনন্দঘন আবহে ঘেরা আর সেই আনন্দ-অনুভূতিই আমি সমস্ত ধরণের পরিবেশের মধ্যে পেতে চাই।
কিরকম? ওই রবীন্দ্রনাথ একটি গানে বলেছেন না,
'তার অন্ত নাই গো যে আনন্দে গড়া আমার অঙ্গ।
তার অণু-পরমাণু পেল কত আলোর সঙ্গ,
ও তার অন্ত নাই গো নাই।
তারে মোহনমন্ত্র দিয়ে গেছে কত ফুলের গন্ধ
তারে দোলা দিয়ে দুলিয়ে গেছে কত ঢেউয়ের ছন্দ,
ও তার অন্ত নাই গো নাই।
আছে কত সুরের সোহাগ যে তার স্তরে স্তরে লগ্ন,
সে যে কত রঙের রসধারায় কতই হল মগ্ন,
ও তার অন্ত নাই গো নাই।'
তাই যেখানে বিশ্বাস নেই কেবল সন্দেহ আছে, সেখানে আমি নেই। যেখানে আশা নেই, কেবল নিরাশা আছে, সেখানে আমি নেই। আর যেখানে ভালোবাসা নেই, আনন্দ নেই, শান্তি নেই, কেবল পরনিন্দা আছে, ঈর্ষা আছে, অন্যকে ব্যবহার করা আছে, অহেতুক চেঁচামেচি আর বিতর্ক আছে, সেখানে আমি নেই। একদম ধারেকাছেও নেই। তার মানে কি আমি escapist? মোটেও না।
আমি নেই বলতে ওখানে আমার মন নেই, ওখানে আমার concentration নেই, ওর ওপর আমার focus নেই, কেবল motion আছে। আমায় যদি কোনো dispute resolution করতে কোর্টে যেতে হয় আমি যাবো, আমার তরফ থেকে যা defense তা পেশ করবো কিন্তু বিপক্ষ কি প্যাঁচ কষছে বা রায় কি হতে পারে তা নিয়ে সারাক্ষন মাথা ঘামাবো না, infact একেবারেই মাথা ঘামাবো না। I will go through the motion with sincerity but neither get affected nor involved at an emotional level. আমি জানি ওতে আনন্দ তো নেইই, ওতে permanent কোনোকিছুও নেই।
তাই যে মুহূর্তে কোর্ট থেকে বেরোবো সেই মুহূর্তেই আমি আমার যে নিজস্ব বিশ্বাস আশা আর ভালোবাসার bubbleটা আছে, যার দেওয়ালগুলো আমি জপ-ধ্যান দিয়ে একটু একটু করে গেঁথে তুলেছি, টুক করে তার মধ্যে নিশ্চন্তে ঢুকে পড়বো কারণ আমার জীবনের উদ্দেশ্য মামলা লড়া নয়, সৃষ্টির আনন্দকে অনুভব করা, উপলব্ধি করা আর ভোগ করা। আসলে পূর্বজন্মের বহু সুকৃতির ফলে এই যে হিন্দু শরীরটা পেয়েছি, এটা আমাকে আমার নিজের মনের মতো পথ বেছে নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই exhilarating অনুভূতিটা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যেই নেই।
আমার ওপর মায়ের এমন কৃপা যে কোনো পন্থীয় dictation মানার বাধ্যবাধকতাই আমার নেই। আমাকে না তো বাধ্যতামূলকভাবে বিশেষ কোনো Personal Godকে মানতে হয়, না তাঁর কোনো একজন বিশেষ অবতারকে আর না তাঁর কোনো একটি বিশেষ নির্দেশনাবলীসূচক গ্রন্থকে। আমি মুক্ত, স্বেচ্ছাধীন। অনেক পথ, অনেক অবতার আর অনেক গ্রন্থের মধ্য থেকে আমার যা ভালোলাগে, যাঁকে ভালোলাগে আর যে রাস্তা ধরে এগোতে আমি যখন comfortable, হিন্দু হওয়ার কারণে সবসময় সেটাই বেছে নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা আমার আছে and I must preserve this independence at any cost.
হিন্দুজীবন হলো সম্পূর্ণভাবে cerebral, হিন্দু শরীর পেলে temporary অকাজে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয়না। তবে শরীর থাকলে তবে তো মন থাকে আর মন থাকলে তবে তো উচ্চচিন্তা করা সম্ভব হয়, ফলে শরীর রক্ষা করার জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু তো করতেই হবে, সেটা জরুরিও। রোজগার নেই অথচ অর্থ বা সামগ্রী দিয়ে সাধুসেবা করবো - absurd ব্যাপার, utopian. তাই রোজগার করাটা অকাজ নয় কিন্তু এসব আমার রোজগার, আমি মালিক, আমার টাকা, আমি যা ইচ্ছে করবো, কার বাপের কি - এই ভাবনাটা অকাজ। ফলে জাগতিক বিষয়ে involvement ততটুকুই রাখতে হয় যতটুকু না হলেই নয়।
আসল কথা হলো জীবনকে সম্যকরূপে উপভোগ করা। আমি শুদ্ধ, আমি শরণাগত, আমি কৃপাপ্রাপ্ত, মা আমার হাত ধরে আছেন, আমার এ শরীর মন বোধ বুদ্ধি সবই অনন্দময়ীর সদানন্দময় আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলের ভাব তরঙ্গে তরঙ্গায়িত; আমার উৎপত্তি আনন্দ থেকে, আমার স্থিতি আনন্দে এবং লয়ও আনন্দেই হবে - এই অনুভূতিটা খুবই calming, খুবই ভরসার।
মা গো আনন্দময়ী নিরানন্দ করো না,
তোমার ও দুটি চরণ বিনে আমার মন
অন্য কিছু আর জানে না।
মা গো আনন্দময়ী নিরানন্দ করো না।।
No comments:
Post a Comment