সৌভিককে কাল নিল না জীবনের ঝাল নিল, নাকি যেসব আলবালছালরা ওর মাতলামোকে তোল্লা দিত - তারা নিল জানিনা, কিন্তু বাংলা কবিতার ছাদে এমন একটা বিরাট ছেঁদা হয়ে গেল যে এখন ঐ ঘরে গেলেই সেই ফুটো দিয়ে অজাত কুজাতদের ডাঁই করা রাবিশ হুড়মুড়িয়ে গায়ে পড়তে পারে। বলে নাকি মরা মানুষের নিন্দে করতে নেই। করবো না তো কি করবো? ঈশ্বর ট্যালেন্ট একেবারে ভরে ভরে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, ছোকরা সম্পুর্ন নিজের দোষে তাকে নয়ছয় করে দিয়ে হটাৎ ফুটে গেল। কতদিন অফিস কেটে ভরদুপুরে ক্যাফেলায় এসে কোণের ওই বড় ফ্রেঞ্চ উইন্ডটার পাশে বসে বসে কবিতা লিখতো, টাটকা কবিতা পড়ে শোনাতো, শোনাতে শোনাতে হোঁচট খেলে কাটাকুটি করতো, আবার প্রথম থেকে শোনাতো, সেসব আজ হটাৎ হুশ হয়ে গেল। প্রচুর ঝগড়া হয়েছে সৌভিকের সঙ্গে আমার, প্রচুর বকেছি ওকে অপরিমিত মদ খাওয়ার জন্য, দুএকবার মনে হয়েছে গালে দুই থাপ্পড় বসিয়ে দিই। পিপির সঙ্গে বিচ্ছেদটা ওর নরম কবিমন মেনে নিতে পারেনি এটা যেমন সত্যি, ওর সঙ্গে ২৪ঘন্টা থাকাটাও যে একটা দুরূহ যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার, সেটাও তেমনিই সত্যি। ছেলেটা জীবনে সুখ পেল না, এই খেদ অবশ্যই রয়ে যাবে। আর সেই পরিস্থিতিটা শুধরানোর যে আর কোনো সুযোগ নেই, সেই খেদটা আমাদের মতন ওর বড় দাদাদের পক্ষে আরো অনেক বেশি বেদনাদায়ক হয়ে রয়ে গেল। ওর মা আগেই চলে গেছেন, বেঁচে গেছেন, কিন্তু বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা যে রয়ে গেলেন, কি যে দুঃখের সে আর বলার নয়। নিচে সৌভিকের লেখা একটা কবিতা দিলাম, যারা ওকে চিনতেন না, তাদের জন্য।
এখন, দিনরাত
বিবর্ণ বিকেলের কালচে রাজপথ
যেন অলস, পুরনো অজগর
সময়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে
আমরাও পুরনো হয়ে চলি
সরু গলি, কবেকার মরচে অ্যান্টেনা
সেইসব বাড়ীতে আর কেউ থাকেনা এখন
সাদাকালো ফটো-অ্যালবামে
শুধু পড়ে আছে কিছু
যুবতী বনভোজন, আর হুটোপাটি হাসিগান ছবি
কলকাতায় বসন্ত নেই বহুকাল
একটা গভীর, নীলচে শীতকাল
নিঝঝুম বসে আছে জানলায়
কোন আতসবাজী নেই একশো বছর
ইতিহাসনির্ভর আলতো টিকে থাকা -
বন্ধুদের কথা ভাবতে ভাবতে
একটা ধূসর, ঠান্ডা জামা পরে
আমি নিয়মমাফিক ভেসে যাচ্ছি দিনরাত.....
No comments:
Post a Comment