ভারত রুশ থেকে কাঁচা তেল আর সার কিনে সারা বিশ্বকে চিনের ত্রাস থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে, নইলে শি শিং পিং একজন আধুনিক হিটলার হওয়ার জন্য একেবারে পা বাড়িয়েই ছিলেন। চুক্তি ভেঙে নিজেদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়া ন্যাটোকে আটকানোর জন্য মিলিটারি একশন রুশকে নিতেই হতো, আর এগোলেই যে আমেরিকা এবং তার উপনিবেশের তরফ থেকে তাগড়া প্রতিবন্ধন নেমে আসবে, সেটাও পুতিনসাহেব খুব ভালোভাবেই জানতেন। অলিমপিক্সকে উপলক্ষ করে বেজিংয়ে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সময় শি শিন পিং পুতিনসাহেবকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন কারণ তিনি এক ঢিলে তিন পাখি শিকার করার ধান্দা করেছিলেন - এক, রুশের ঘাড়ে বন্ধুক রেখে আমেরিকা ও গুষ্ঠীর বিরুদ্ধে তোপ দাগা, দুই, রুশকে সম্পূর্ণভাবে চিনের ওপর নির্ভরশীল করে তুলে তাকে একটা ভ্যাসেল স্টেট বানিয়ে ফেলা আর তিন, রুশকে নিউট্রালাইজ করে আফগানিস্তানকে কব্জা করে পাকিস্তানের মাধ্যমে ভারতের প্রগতিকে ব্যাহত করা।
কিন্তু একটি ছোট্ট ছয়ঘন্টার ঝটিকা সফর এবং একজন সাদা দাঁড়ি সাদা চুলওলা বৃদ্ধের পরামর্শ ও নির্ণয় চিনের সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে চারটি আমূল পরিবর্তন সূচিত করেছে:
১. এই যুদ্ধের বাজারেও সস্তায় ভারতের জ্বালানি এবং সারের প্রয়োজন মেটানো সুনিশ্চিত করে বিশ্বের অর্থনীতিকে অপেক্ষাকৃতভাবে স্থিতিশীল রেখেছে;
২. রুশকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে ভবিষ্যতে রুশি জমি ব্যবহার করে ইউরোপের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে চিনের তান্ডবনৃত্যের সম্ভাবনা বন্ধ করে দিয়েছে;
৩. সুইফট ইত্যাদি ব্যবস্থাকে আটকে দিয়ে এবং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধনকে হাতিয়ার করে আমেরিকার গুষ্টি এতদিন অন্য দেশের অর্থনীতির ব্যান্ড বাজানোর যে ক্ষমতা উপভোগ করে এসেছে, উন্নয়নশীল বিশ্বের বিরুদ্ধে তা যেন জীবনে কোনোদিন কেউ প্রয়োগ করেও সফল না হতে পারে, ভারত ডিজিটাল ইকোনমি এবং ডি-ডলারাইসেশনের মাধ্যমে সেটা সুনিশ্চিত করছে;
৪. নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে এবং নিউক্লিয়ার স্টাইক আটকে দিয়ে ভারত নিজের ধকে গ্লোবাল সাউথকে সঠিক পথ দেখিয়ে তাদের অবিসংবাদী নেতা হিসেবে উঠে এসেছে।
ভারতের ভূমিকায় ভূরাজনীতিতে কতকিছু বদলে যাচ্ছে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
১. ইউরোপ, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া স্পষ্ট করে ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছে এবং ভারতের সাথে engagement ক্রমশ বাড়াচ্ছে;
২. তেল এবং গ্যাস নির্ভর দেশগুলিও বুঝতে পারছে যে ভবিষ্যতে বিশ্ব যত renewable energyর দিকে এগোবে তত পেট্রোডলারের প্রয়োজন কমবে এবং এক্ষুনি ভারতের হাত ধরে না ফেলতে পারলে পরে ব্যাথা আছে;
৩. আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়নকে ব্যালেন্স করার জন্য একসময় জাপানকে তুলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বানিয়েছিল, তারপর জাপানকে ছেড়ে চিনকে তুলে ওই জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল, এবার চিনের debt trap থিওরি এবং aggression দেখে ভবিষ্যতে নিজেদেরই অবস্থা ঢিলে হয়ে যাবে বলে counter balance হিসেবে ভারতের উত্থান মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। মুস্কিল একটাই - এই পাকাচুল বৃদ্ধের ভারত কারো জো হুজুরি করেনা, ফলে আমেরিকাকে reluctantly এমন অনেককিছুই আজ গিলতে হচ্ছে, যা তার মোটেও পছন্দ নয়;
৪. রুশ ধীরে ধীরে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, ফলে রুশের circle of influenceএ থাকা Central Asian দেশগুলিও এখন ভারতের অনেক বেশি কাছাকাছি এসে গেছে, যা ভবিষ্যতে সরাসরি ইউরোপের সাথে বাণিজ্যের জন্য ল্যান্ডরুট তৈরি করাতে সহায়ক হবে;
৫. পাকিস্তান একেবারে তামাদি হয়ে গেছে কারণ ওদের তোল্লা দেওয়ার সমস্ত রাস্তা ভারত নিজের নতুন ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বন্ধ করে দিয়েছে, এবং সেই সাথে CPECতেও তালা পড়ে গিয়ে চিনের এদিক্কার জমি দখলের প্ল্যানও চৌপট হয়ে গেছে;
৬. সাপ্লাই চেনকে কারো সঙ্গে চেন দিয়ে বেঁধে রাখলে তার disruption কি যে ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে, সেটা বিশ্বজুড়ে চিন এবং ইউক্রেনের গ্রাহকরা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন। প্রথমে ভ্যাক্সিন নিয়ে ছুঁচ হয়ে ঢুকে ধীরে ধীরে মিশরকে আটা সাপ্লাই করার রাস্তা ধরে আপাতত ফক্সকন অবধি এসে পৌঁছানো গেছে, ভবিষ্যতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠাটা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
৭. ভারত যে কেবল economic superpower বা military superpower হয়েই সন্তুষ্ট থাকবে না, বিশ্বজুড়ে সে তার softpower এবং moralityকে হাতিয়ার করে যে একটি সত্যিকারের superpower হয়ে উঠবে, G20র উপস্থাপনায় তার ইঙ্গিত ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ভারত এমন এক মহাশক্তি হবে যে জোর করে কারো ঘাড়ে কোনকিছু চাপিয়ে দেবে না, যে নমনীয় হবে, মানবিক হবে, ভরসার পাত্র হবে। এটাই স্বামীজী আর শ্রীঅরবিন্দের স্বপ্নের ভারত, যা আমাদের জীবদ্দশাতেই সত্যি হতে চলেছে।
No comments:
Post a Comment