Saturday, March 4, 2023

শিশুপাল

শিশুপাল এক মায়াশরীর। মায়ার বশবর্তী হলে যে ভুলগুলো হয়, শিশুপাল সেই ভুলগুলোই করতেন। সেই ভুল কি? নিজের স্বরূপ বিস্মৃত হয়ে natural spiritual progression এর বিরুদ্ধাচারণ করা এবং নিজের আত্মাকেই অপমান করা। 

শ্রীকৃষ্ণ কি আর শিশুপালের চেয়ে আলাদা? তিনিই তো পরমাত্মা, তিনি Omnipresent, Omnipotent and Omniscient, অর্থাৎ তিনি সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ, তাই তিনি সকলের মধ্যেই আছেন, শিশুপালের মধ্যেও আছেন। 

শ্রীকৃষ্ণ যখন সুদর্শনচক্র ধারণ করে শিশুপালের মুণ্ডচ্ছেদ করলেন তখন তিনি আসলে শিশুপালকে কৃপা করে তাঁকে তাঁর মায়ার বন্ধন ত্যাগ করতে সাহায্য করলেন, যা মোহজালে আবদ্ধ শিশুপালের পক্ষে নিজে থেকে করে ওঠা সম্ভবপর হচ্ছিল না।

আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একটি করে শিশুপাল লুকিয়ে আছেন, আমরাও মায়ার বশে নিজেদের স্বরূপকে ভুলে এমন সব আজেবাজে কাজ করে চলেছি যাতে নিজেরা নিজেদের হাতেই অপমানিত হচ্ছি অথচ blame করছি অন্যকে। এমত অবস্থায় আমাদের উপায় কি? 

উপায় হলো সকাল সন্ধ্যা নিয়ম করে জপ আর মনটা একটু বশে আসলে ধ্যান করা। মন শান্ত হলে ধ্যান হয়, ধ্যান করে মন শান্ত হয়না। তাই মা বলতেন কলিতে জপাৎ সিদ্ধি। জপের সময় আমরা যখন ইষ্টমূর্তিকে নিজেদের হৃদয়ে ধারণ করি তখন এক-দু-মুহূর্তের জন্য হলেও আমরা পরমাত্মার বাসস্থান হয়ে উঠি, তাই না? 

তিনি তো সর্বদাই সকলের হৃদয়ে বিদ্যমান, আমরা কেবল সেই সময়টুকুতে নিজেদের মধ্যে তাঁর presence feel করি। অর্থাৎ সেই কয়েক মুহূর্ত বা কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘন্টা, যাঁর যেমন অভ্যেস হয়েছে, তিনি তাঁর মায়াশরীরটিকে অতিক্রম করে একটি গর্ভগৃহ হয়ে ওঠেন আর এটাই স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক উত্তরণ। 

গুরু আর পরমাত্মা এক। যে মুহূর্তে গুরুদেব কৃপা করে কানে বীজমন্ত্র দিলেন, অমনি সুদর্শন তাঁর কাজ করে ফেললেন। সেইদিনই আমাদের ভেতরের শিশুপালবধ হয়ে গেল। তারপর কেবল ধীরে ধীরে স্বরূপের দিকে এগিয়ে যাওয়া একটা process, যা প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ আর আত্মার শান্তি জোগায়। মজার ব্যাপার হলো বাকি সবকিছু বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, কেবল এই তিনটি জিনিস ছাড়া।

মায়ার temporary ভালোলাগাকে ছেড়ে অনন্ত স্বরূপের দিকে মুখ ফেরানোর উপায় হলো internalisation of the external being through definite spiritual practices taught by the Guru এবং তাতে যে মানসিক স্থিরতার আবহ সৃষ্টি হয় সেটা permanent ভালোলাগার, আর কিছু না। শান্তম-শিবম-অদ্বৈতম।

জয় মা।

No comments:

Post a Comment