Thursday, February 3, 2022

সৃষ্টিতত্ত্ব

সৃষ্টির তত্ত্ব একটু একটু করে বোঝবার চেষ্টা করা হচ্ছে আর মা যেটুকু বুঝতে দিচ্ছেন, সেটুকুই আপাতত বোঝা যাচ্ছে। আদি থেকে শুরু করাই শিষ্ঠাচার। আক্ষরিক অর্থে আদ্যাশক্তি মানে আদি শক্তি আর শিব মানে সাক্ষাৎ শুভ, যিনি আদি যোগীও বটেন। শক্তি মানে ব্রহ্মের সগুণ রূপ অর্থাৎ যে মহামায়ারূপকে ব্যবহার করে ব্রহ্ম এক থেকে ছদ্ম-বহুরূপ ধারণ করেন। এই কাজটি মহামায়া করেন কিভাবে? তিনি প্রথমে একটা মায়ার ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেন, তারপর তাতে জড় এবং চেতন সৃষ্টি করেন, তারপর তিনটি গুণ অর্থাৎ সত্ত্ব (জ্ঞান), রজঃ (অহংকার) আর তমঃ (অন্ধকার) তৈরি করে সেই ব্রহ্মান্ডে ছড়িয়ে দেন, আর সেই গুণগুলি অনুভব এবং গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন ধরণের মায়াশরীরের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অনুযায়ী যথোচিতভাবে পাঁচটা জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচটা কর্মেন্দ্রিয় আর মন, বুদ্ধি, অহংকার ও চিত্ত - এই চারটে অন্তরিন্দ্রিয়কে সক্রিয় করে দেন। এখান থেকেই ভেদাভেদের খেলা শুরু হয়ে যায়, যে যার পছন্দের ভাব বেছে নিতে শুরু করে। ফলে কেউ দেবতা হন, কেউ মানুষ, কেউ রাক্ষস আর কেউ বা খিচুড়ি। 


এটা অনেকটা গায়ে সেন্ট মাখার মতন। সবাই জানেন চিরকাল গন্ধটি থাকবে না, তবু মাখা হয় - ওই সাময়িক সুখের জন্য। যার যা গন্ধ পছন্দ, সে সেই গন্ধটি গায়ে মাখে আর তাতে সে নিজেও যেমন আমোদিত হয়, আশেপাশের অন্যরাও তার পছন্দ বেশ টের পায়। অন্য কারো সেই গন্ধ ভালো লাগতেও পারে, আবার নাও লাগতে পারে। সেই অনুযায়ী কেউ হয়তো সুখ পান আর কেউ অস্বস্তিতে দূরে সরে যান। এটাই মহামায়ার খেলা। নিজেই মানুষের নাক সৃষ্টি করেন, নিজেই নানারকমের গন্ধ সৃষ্টি করেন, তারপর সাময়িক সুখের জন্য মানুষকে গন্ধ বেছে নেওয়ার choice-ও দেন। সে যখন নিজের সুখের জন্য সেই choice excercise করে অন্য কোনো মানুষের অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে, তখন সেই বাজে কর্মফলের ভার কিন্তু একান্তভাবেই তার নিজের হয়ে যায়। ওই সেই দস্যু রত্নাকরের গল্পের মতন, পরিবারের সবাই তার বেআইনি রোজগারে প্রতিপালিত কিন্তু দুষ্কর্মের দায় শুধুই তার, সেই পাপের ভাগ নিতে পরিবারের কেউ রাজি নন।


এইভাবে কর্মফলের debit credit-এর হিসেব চলতে চলতে প্রারব্ধ তৈরি হয়। সেই প্রারব্ধ অনুযায়ী জীব বারেবারে জন্ম আর মৃত্যুর বৃত্তে ক্রমাগত ঘুরতে থাকে যতক্ষণ না সে তিতিবিরক্ত হয়ে এই বৃথা চক্কর কাটা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজতে শুরু করে। খুঁজতে খুঁজতে তার realisation হয় যে যে ব্রহ্মরূপ মহাশক্তি বা ব্রহ্মময়ীর ইচ্ছাতে সে বদ্ধজীব হয়ে রয়েছে, একমাত্র তাঁর কৃপাতেই সে মুক্ত হতে পারে। তখন সে ব্যাকুল হয়ে ব্রহ্মময়ীর পা দুটি জড়িয়ে ধরে অনুনয় বিনয় করতে থাকে, যাকে আমরা সাধারণ লোকে সাধনা বলি। তারপর স্বামীজীর ভাষায়, 'Maya is the energy of the universe, potential and kinetic. Until Mother releases us, we cannot get free.'


আসলে ব্রহ্মের নির্গুণ থেকে সগুণ হওয়ার উদ্দেশ্য কি? একটু আধটু শাস্ত্র পড়ে আর সাধু-মহাত্মাদের শ্রীমুখের বাণী শুনে যেটুকু অনুধাবন করা গেছে, তাতে তাঁর একটাই উদ্দেশ্য - নিজের ঈশ্বরত্বকেই উপভোগ করা। একা একা থাকতে থাকতে ভদ্রলোক বোধহয় বড্ড বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তাই প্রথমে নিজেরই অনেকগুলো প্রতিচ্ছবি তৈরি করলেন আর তাদের দেখে দেখে কিছুদিন বেশ আনন্দ পেলেন। তিনি হাত নাড়লে তারাও হাত নাড়ে, তিনি চোখ বুজলে তারাও চোখ বোজে আবার এও জানে যে তিনি ছাড়া তাদের আলাদা অস্তিত্ব নেই। ফলে কিছুদিন তাঁর থেকে আলাদা হয়ে জীবন কাটানোর পরই তারা যখন তপস্যা টপস্যা করে তাঁতেই আবার merge করে যেতে লাগলো, তখন তাঁর মজা শেষ - সত্যযুগটা ব্রহ্মের জন্য বড়ই বোরিং হয়ে গেল। সত্যযুগ এই কারণে যে তখনো সত্য আর অসত্য অর্থাৎ নিত্য আর অনিত্যের মধ্যে পার্থক্য তেমন তৈরি হয়নি।


তখন ব্রহ্ম বুঝলেন যে এর চেয়ে ঢের বেশি মজা হবে যদি প্রতিচ্ছবিগুলোকে যথাস্থানে রেখে নিজেরই সগুণ রূপের আড়ালে নিজের নির্গুণ রূপটিকে লুকিয়ে ফেলা যায় আর তারপর তাঁকে দেখতে না পেয়ে confused হয়ে তারা কে কিরকম অদ্ভুত ব্যবহার করতে থাকে, সেটা যদি তাদেরই হৃদকমলে বসে নিঃশব্দে উপভোগ করা যায়। যাঁর প্রতিচ্ছবি, তিনিই যেহেতু আয়নার সামনে থেকে সরে গেলেন, প্রতিচ্ছবিরা কিন্তু আর বাস্তবিক রইলো না, তাদের বাহ্যিক existence-টাই মিথ্যে হয়ে গেল। আসলেরই প্রতিচ্ছবি হয়, প্রতিচ্ছবি কখনো আসল হয়না। এবার যুগে যুগে ধাপে ধাপে তারা ব্রহ্ম অর্থাৎ তাদের স্বরূপের থেকে আরো দূরে, আরো দূরে সরে যেতে লাগলো, নিত্যকে ভুলতে শুরু করল আর মায়ার তৈরি করা ইন্দ্রিয়ের বশে পড়ে অনিত্যকে সত্য ভেবে নিয়ে নিজেদের জন্য কর্মফলরূপী নানারকমের উৎপাত সৃষ্টি করতে লাগলো। 


তারপর ব্রহ্ম কিছু শুদ্ধস্বত্তাকে (যাঁদের আমরা ঋষি বলি) বেছে নিয়ে তাঁদের মনে এই পরমসত্য জাগরিত করলেন যে 'ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা' - তাঁরা মন্ত্ররূপে এই সত্যের যুক্তি-কাঠামোটা মানসচক্ষে দেখলেন এবং তা বেদের (বেদ মানে জ্ঞান) শেষে বেদান্ত (বেদের অন্ত বা পরমজ্ঞান) বা উপনিষদরূপে গ্রন্থিত হলো। ত্রেতায় সেইকথাই মানুষকে মনে করিয়ে দিতে ব্রহ্ম স্বয়ং অবতাররূপ ধারণ করে শ্রীরামচন্দ্র হয়ে এলেন, দ্বাপরে এলেন শ্রীকৃষ্ণ হয়ে আর কলিতে, যে যুগে স্রষ্টা আর সৃষ্টির মধ্যে বিচ্ছেদ সবচেয়ে বেশি, বারেবারে এলেন বুদ্ধ, যীশু, শ্রীচৈতন্য আর সবার শেষে শ্রীরামকৃষ্ণ হয়ে। তাঁরা প্রত্যেকে যুগোপযোগী করে একই কথা বলে গেলেন - নিজের স্বরূপ অর্থাৎ ব্রহ্মের সাথে আবার যোগাযোগ স্থাপন করো, একমাত্র তাহলেই এই meaningless existence থেকে মুক্তি পাবে। স্বামীজী ৬ই জুলাই ১৮৯৫ সালে তাঁর Inspired Talks-এ বলছেন, 'In one sense Brahman is known to every human being; he knows, “I am”; but man does not know himself as he is. We all know we are, but not how we are.'। তাহলে ব্রহ্মের অবুঝ প্রতিচ্ছবিরা self-realise করবে কিভাবে? শ্রীকৃষ্ণ বললেন জ্ঞান দিয়েও করা যায়, কর্ম দিয়েও করা যায়, ভক্তি দিয়েও করা যায়, আবার ধ্যান দিয়েও করা যায় - যোগচতুষ্টয়ের মধ্যে যেটা তোমার পছন্দ, সেই পথ তুমি বেছে নাও। আর যে এরজন্য খাটতে চায় তার হাত ধরে ব্রহ্মের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য গুরুরূপী কিছু মহাত্মাকে তিনি আগে থেকেই পাঠিয়ে রেখেছিলেন।


সনাতন ধর্মে নিরাকারকে সাকার রূপে কল্পনা করার একটা খুব চমৎকার tradition আছে, তাতে স্বরূপের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে খুব সুবিধা হয় কারণ অব্যক্তকে ধারণা করা কঠিন, বিশেষতঃ যেহেতু তিনি মায়ার আড়ালে লুকিয়ে আছেন। তাই ঠাকুর শ্রীমকে বলছেন, "আর তোমায় বলছি, রূপ, ঈশ্বরীয় রূপ অবিশ্বাস করো না। রূপ আছে বিশ্বাস কর! তারপর যে রূপটি ভালবাস সেই রূপ ধ্যান করো"। স্বামী ঈশাত্মানন্দজী মহারাজ প্রভু জগন্নাথদেবের দারুব্রহ্ম রূপটি বড় চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেন। জগতের নাথ তো সর্বত্র আছেন, ফলে তাঁর এক জায়গা থেকে আর একজায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই, তাই পা নেই। তাঁর ইচ্ছামাত্রই সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয় হয়, ফলে কোনকিছু করার জন্য তাঁর হাতের প্রয়োজন নেই। আর আমরা যে যেখানে যা কিছু করি বা ভাবি বা বলি (কায়-মন-বাক্য) সব তাঁর গোচরে আসে, তিনি আমাদের মধ্যেই সদা সর্বদা জাগ্রত, ফলে তাঁর আঁখিপলকেরও প্রয়োজন নেই। এই যে নিত্যকে অনিত্যের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা, এটা হিন্দুদের একটা মস্ত বড় hallmark। এইরকমই একটি ঈশ্বরীয় রূপে আমরা দেখি মহাদেব শিব শুয়ে আছেন আর ঘোরশ্যামবর্ণা আদ্যাশক্তি মহামায়া তাঁর বুকের ওপর দাঁড়িয়ে, গলায় কাটা মুন্ডমালা, এক হাতে সদ্যছিন্ন নরমুন্ড, আর এক হাতে খড়্গ, অন্যদুটি হাতের একটিতে বর আর অন্যটিতে বরাভয়। 


এই যে দক্ষিণাকালিকা রূপে শক্তির একাধারে ভয়ঙ্করী ও কল্যাণকারী একটা মূর্তি, এর পেছনে কিন্তু মুক্তির সুন্দর একটা ধারণা কাজ করে। শিব হলেন শুভবুদ্ধি, যেটি না জাগলে জীবনের আসল উদ্দেশ্য যে স্বরূপের সাথে যোগস্থাপন, সেই বোধ জাগা সম্ভব নয়। আবার শিব হলেন নির্গুণ ব্রহ্মের প্রতীক, শান্ত, সমাহিত, মহাযোগী। শিব কি করেন, না মায়ার দৌড় রুখে দেন। সেই মায়া যেহেতু একইসাথে বন্ধনকারিণী আবার মুক্তিদায়িনী সেহেতু মানুষ একবার জীবনের আসল উদ্দেশ্য ঠিকঠিক বুঝতে পারলেই তাঁর জ্ঞানরূপী কৃপার খড়্গ দিয়ে তিনি তার বন্ধনের অন্ধকার, প্রারব্ধ আর মিথ্যা অহংকারকে কেটে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে মুক্তির পথ খুলে দেন। আসলে তো শিবও ব্রহ্ম, কালীও ব্রহ্ম, ব্রহ্ম ছাড়া নিত্যসত্য যে আর কিছু নেই। তাই গুরুর আদেশে কালী সম্পর্কে সভায় বলতে উঠে নিবেদিতা বলছেন, "কালী ওই সদাশিবের দৃষ্টির সৃষ্টি। নিজেকে আড়াল করে সাক্ষীরূপে তিনি দেখছেন দেবাত্মশক্তিকে। শিবই কালী, কালীই শিব"।


শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে এই বিষয়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ব্যাখ্যা আছে, তারিখ ২২শে জুলাই, ১৮৮৩। মাষ্টারমশাই লিখছেন, 'সন্ধ্যার পর ঠাকুরবাড়িতে আরতি হইতেছে। সন্ধ্যা সমাগমে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের ঘরে ঠাকুরদের নাম করিতেছেন। ঘরে ধূনা দেওয়া হইল। ঠাকুর বদ্ধাঞ্জলি হইয়া ছোট তক্তপোশটির উপর বসিয়া আছেন। মার চিন্তা করিতেছেন। বেলঘরের শ্রীযুক্ত গোবিন্দ মুখুজ্জে ও তাহার বন্ধুগণ আসিয়া প্রণাম করিয়া মেঝেতে বসিলেন। মাস্টারও বসিয়া আছেন। রাখালও বসিয়া আছেন। বাহিরে চাঁদ উঠিয়াছে। জগৎ নিঃশব্দে হাসিতেছে। ঘরের ভিতর সকলে নিঃশব্দে বসিয়া ঠাকুরের শান্তমূর্তি দেখিতেছেন। ঠাকুর ভাবাবিষ্ট। কিয়ৎক্ষণ পরে কথা কহিলেন। এখনও ভাবাবস্থা।' 


শ্রীরামকৃষ্ণ (ভাবস্থ) — বল, তোমাদের যা সংশয়। আমি সব বলছি।


গোবিন্দ ও অন্যান্য ভক্তেরা ভাবিতে লাগিলেন।


গোবিন্দ — আজ্ঞা, শ্যামা এরূপটি হল কেন?


শ্রীরামকৃষ্ণ — সে দূর বলে। কাছে গেলে কোন রঙই নাই। দীঘির জল দূর থেকে কালো দেখায়, কাছে গিয়ে হাতে করে তোল, কোন রঙ নাই। আকাশ দূর থেকে যেন নীলবর্ণ। কাছের আকাশ দেখ, কোন রঙ নাই। ঈশ্বরের যত কাছে যাবে ততই ধারণা হবে, তাঁর নাম, রূপ নাই। পেছিয়ে একটু দূরে এলে আবার “আমার শ্যামা মা!” যেন ঘাসফুলের রঙ। শ্যামা পুরুষ না প্রকৃতি? একজন ভক্ত পূজা করেছিল। একজন দর্শন করতে এসে দেখে ঠাকুরের গলায় পৈতে! সে বললে, তুমি মার গলায় পৈতে পরিয়েছ! ভক্তটি বললে, “ভাই, তুমিই মাকে চিনেছ। আমি এখনও চিনতে পারি নাই তিনি পুরুষ কি প্রকৃতি। তাই পৈতে পরিয়েছি!”


“যিনি শ্যামা, তিনিই ব্রহ্ম। যাঁরই রূপ, তিনিই অরূপ। যিনি সগুণ, তিনিই নির্গুণ। ব্রহ্ম শক্তি — শক্তি ব্রহ্ম। অভেদ। সচ্চিদানন্দময় আর সচ্চিদানন্দময়ী।”


গোবিন্দ — যোগমায়া কেন বলে?


শ্রীরামকৃষ্ণ — যোগমায়া অর্থাৎ পুরুষ-প্রকৃতির যোগ। যা কিছু দেখছ সবই পুরুষ-প্রকৃতির যোগ। শিবকালীর মূর্তি, শিবের উপর কালী দাঁড়িয়া আছেন। শিব শব হয়ে পড়ে আছেন। কালী শিবের দিকে চেয়ে আছেন। এই সমস্তই পুরুষ-প্রকৃতির যোগ। পুরুষ নিষ্ক্রিয়, তাই শিব শব হয়ে আছেন। পুরুষের যোগে প্রকৃতি সমস্ত কাজ করছেন। সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করছেন!


“রাধাকৃষ্ণ-যুগলমূর্তিরও মানে ওই। ওই যোগের জন্য বঙ্কিমভাব। সেই যোগ দেখাবার জন্যই শ্রীকৃষ্ণের নাকে মুক্তা, শ্রীমতীর নাকে নীল পাথর। শ্রীমতীর গৌর বরণ মুক্তার ন্যায় উজ্জ্বল। শ্রীকৃষ্ণের শ্যামবর্ণ, তাই শ্রীমতীর নীল পাথর। আবার শ্রীকৃষ্ণ পীতবসন ও শ্রীমতী নীলবসন পরেছেন।


“উত্তম ভক্ত কে? যে ব্রহ্মজ্ঞানের পর দেখে, তিনিই জীবজগৎ, চতুর্বিংশতি তত্ত্ব হয়েছেন। প্রথমে ‘নেতি’ ‘নেতি’ বিচার করে ছাদে পৌঁছিতে হয়। তারপর সে দেখে, ছাদও যে জিনিসে তৈয়ারি — ইট, চুন, সুড়কি — সিঁড়িও সেই জিনিসে তৈয়ারি। তখন দেখে, ব্রহ্মই জীবজগৎ সমস্ত হয়েছেন।


“শুধু বিচার! থু! থু! — কাজ নাই।

(ঠাকুর মুখামৃত ফেলিলেন।)


“কেন বিচার করে শুষ্ক হয়ে থাকব? যতক্ষণ ‘আমি তুমি’ আছে, ততক্ষণ যেন তাঁর পাদপদ্মে শুদ্ধাভক্তি থাকে।”


(গোবিন্দের প্রতি) — কখনও বলি — তুমিই আমি, আমিই তুমি। আবার কখনও ‘তুমিই তুমি’ হয়ে যায়। তখন ‘আমি’ খুঁজে পাই না।


“শক্তিরই অবতার। এক মতে রাম ও কৃষ্ণ চিদানন্দসাগরের দুটি ঢেউ।


“অদ্বৈতজ্ঞানের পর চৈতন্যলাভ হয়। তখন দেখে, সর্বভূতে চৈতন্যরূপে তিনি আছেন। চৈতন্যলাভের পর আনন্দ। অদ্বৈত, চৈতন্য, নিত্যানন্দ।”

No comments:

Post a Comment