আজ সকাল থেকে টিভির পর্দায় দুটি ঘটনা একসাথে ভেসে উঠছিল - আমাদের প্রজাতন্ত্রের নতুন প্রথম নাগরিক হিসেবে মহামহিম রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মুর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আর আকন্ঠ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত রাজ্যমন্ত্রীসভার কার্যত দুনম্বর বর্তমান শিল্প এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ও শাসকদলের মহাসচিব শ্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে হেফাজতে নিয়ে প্রবর্তন নির্দেশনালয়ের ভুবনেশ্বর যাত্রা। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কখনো এটা কখনো ওটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল দুটি ক্ষেত্রেই কি অদ্ভুত সমাপতন।
একদিকে সমস্ত ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রতিকূলতাকে জয় করে বছরের পর বছর ধরে মানুষের সেবায় নিযুক্ত থেকে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ অলঙ্কৃত করতে চলা একজন নির্মল স্বচ্ছ সৎ বিনয়ী মাতৃস্থানীয়া ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব আর অন্যদিকে লিপ্সা লোভ লালসা আর রিপুর তাড়নায় অবদমিত একজন অভিযুক্ত কলঙ্কিত উদ্ধত জনপ্রতিনিধি, যিনি মানুষের সেবা করার কর্তব্যকে অবহেলা করে অন্যায়ভাবে তাঁদের সাথে চরম প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ।
একদিকে একজন দরিদ্র প্রান্তিক মানুষ, যাঁর মতন লক্ষ লক্ষ আদিবাসী জীবনযুদ্ধে হেরে গিয়ে এই সমাজের একেবারে নিচের পরতে কোথায় যেন প্রতিনিয়ত হারিয়ে যান, তিনি কেবলমাত্র তাঁর চরিত্রবল এবং স্থির সংকল্পের কারণে আজ সর্বজনবন্দিত। আর একজন সমাজের উচ্চশ্রেণীর উচ্চশিক্ষিত মানুষ, কেবলমাত্র নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থকে সর্বোপরি ভেবে যুবসমাজের সাথে এমন বেইমানি করলেন বলে অভিযোগ যে গোটা দেশ আজ তাঁর কথিত কান্ডকারখানা দেখে ছিঃ ছিঃ করছে।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে মহামহিম আজ বলেছেন, "আমার এই জীবনে আমি বুঝেছি মানুষের জন্য কাজ করাই হলো আসল কথা। জগন্নাথক্ষেত্রের কবি ভিমভইয়ের কবিতা থেকে একটি লাইন আমি বলছি: 'মো জীবন পাছে নারকে পডি থাউ জগৎ'। এর অর্থ, নিজের জন্য কাজ না করে জগতের জন্য কাজ করো"। এই যাঁর মানসিকতা, তাঁকে যে সারা দেশ মাথায় তুলে রাখবে, সেটাই তো স্বাভাবিক ও কাম্য। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দের জীবনদর্শনও একইরকমের ছিল। এই হলো শাশ্বত ভারতের সনাতন সংস্কৃতিতে বর্ণিত আদর্শ রাজধর্ম, যার প্রতিফলন আমরা আজ দেশের শীর্ষতম পদাধিকারীদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। এর সুপ্রভাব ক্রমশঃ সমাজের সর্বস্তরে চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামতে বাধ্য।
যিনি বহু মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হন, প্রিয় হন, সম্মানীয় হন, যিনি সমাজে ব্যাপকরূপে প্রভাবশালী হন, তাঁর ওপর যে ঈশ্বরের বিশেষ কৃপা আছে, এটি বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। এটি বহুজন্মলব্ধ প্রারব্ধ থেকেই আসে। দেখা যায় যে কেউ সেই কৃপার সদ্ব্যবহার করেন, কেউ বা দুর্ব্যবহার। নিজের জীবনকে কেউ কিভাবে চালনা করবেন, সেটা কিন্তু একেবারেই তাঁর নিজস্ব বিষয়, যার দায় সম্পূর্ণভাবে তাঁরই। যখন রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মুর মতো ঈশ্বরভক্তকে দেখি ধর্মপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ক্রমশঃ আরো বেশি বেশি করে সেবাব্রতী হয়ে উঠতে, তখন কত আনন্দ হয়। আর একইসাথে, যখন ঠিক এর উল্টোটা হতে দেখি তখন সত্যিই খুব দুঃখ হয়। বহু ভাল কর্মফল জমলে পরে জীবসেবা করার সুযোগ মেলে। আগের আগের সমস্ত জন্মের সুকর্মকে নস্যাৎ করে দিয়ে সেই সুযোগকে যখন কেউ নিজের দোষে দুর্যোগে পর্যবসিত করে নিজেরই হাতে ইতরযোনি প্রাপ্তির দরজা খুলে ফেলেন, তখন বুকটা হায় হায় করে ওঠে। এতটা এগিয়ে এসে শেষে সেই কুহকিনী মায়ার গাড্ডাতেই পড়তে হলো? বড্ড করুণা হয় গো, বড্ড করুণা হয়।
No comments:
Post a Comment