Saturday, July 2, 2022

সর তন সে যুদা

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে গত ২১শে জুন শ্রী উমেশ প্রহ্লাদরাও কোলেকেও উদয়পুরের কানহাইয়াজী মতোই একই কারণে একইভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনাটি আমরা কেউ জানতে পারিনি কারণ তৎকালীন হিন্দুবিরোধী রাজ্যসরকার খবরটা চেপে দিয়েছিলেন। আজ NIA তদন্তে নেমেছে, ওখানেও সত্য উদ্ঘাটিত হবে। 

মুস্কিলটা হলো, এই যে আমাদের দেশে পরের পর 'সর তন সে যুদা' ঘটে চলেছে, সেই নৃশংসতার মূলে যাওয়ার বদলে একশ্রেণীর সাংবিধানিক পাদাধিকারী পর্য্যন্ত সস্তা হাততালি কুড়োবার আশায় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের তামাশার পাত্র করে বসছেন। তাঁরা কেউই হয় বুঝছেন না বা বুঝতে চাইছেন না যে এর প্রভাব কত সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

যা ঘটেছে, বা বলা ভালো ঘটানো হচ্ছে, তার পেছনে যে অপ্রকৃতিস্থ মানসিকতা কাজ করছে, সেটা সেই আদি অকৃত্তিম ভয় দেখিয়ে বশ্যতা স্বীকার করিয়ে খারাপকে ভালো বলানোর আপ্রাণ অপচেষ্টা, যা ভারতীয় সংস্কৃতির একেবারে পরিপন্থী। আমাদের সভ্যতায় ভদ্রতা, নম্রতা, সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদিকে চারিত্রিক উৎকর্ষ বলে গণ্য করা হয় কারণ মান্যতা এই, যে গাছ যত ফলবতী হয় তত সে নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাই আমরা বিবাদে নয়, সংবাদে বিশ্বাসী। সমালোচনা বা নিন্দাকে আমরা অপমান বলে মনে করিনা, বরং তাকে গঠনমূলকভাবেই দেখা হয়।

আমাদের সমাজে প্রবাসীর দৃষ্টিতে যাঁকে দীনহীন বলে মনে হতে পারে বাস্তবিকই তিনি হয়তো সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং তাঁর সান্নিধ্য ও মার্গদর্শন পেলে আমরা গৌরবান্বিত বোধ করি। সনাতন ধর্ম-সংস্কৃতিতে সর্বত্যাগীরা দয়াপরবশ হয়ে ভিক্ষা গ্রহণ করে সামাজিক জীবকে ধন্য করেন, যা বিশ্বের আর কোনো সভ্যতায় বোধহয় নেই। এই যে আমরা বাকি সমস্ত অপেক্ষাকৃত নব্যসংস্কৃতির চেয়ে আলাদা, এটাই আমাদের শক্তি, দুর্বলতা নয়। এর জোরেই আমরা আজও বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে একমাত্র জীবন্ত আদিসভ্যতা। 

আমাদের ভাষাগুলিতে যেহেতু মূলত আমাদেরই মানসিকতা প্রতিফলিত, তাই হয়তো আমাদের দেশের হাজারো ভাষার মধ্যে blasphemy শব্দটির কোনো প্রতিশব্দ নেই। আমরা স্বভাবত জ্ঞানপিপাসু, আমরা অন্যের মতকে তার দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে সর্বদা আগ্রহী। আমরা হিন্দু কারণ আমাদের মনের জানলা দরজা সবসময়ই খোলা। আমরা হিন্দু কারণ আমরা নতুনকে জানতে আগ্রহী। আমরা হিন্দু কারণ আমরা অন্যের ভালোটা শিখতে চাই আর অন্যকেও নিজেদের ভালোটি দিতে চাই। আমরা সহ্যশীল, উদার, গ্রহণক্ষম এবং ধারণক্ষম।

না জানি কত হাজার হাজার বছরের পুরানো ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে এই পুণ্যভূমিতে কত শত পূজাপদ্ধতির জন্ম হয়েছে, উত্থান হয়েছে, পতন হয়েছে, পুনরুত্থান হয়েছে, পরিমার্জন হয়েছে, পরিবর্ধন হয়েছে কিন্তু একটাই বস্তু অপরিবর্তিত থেকেছে - ধর্মবোধ। গোলমাল হয়েছে লুটেরাদের দ্বারা বাইরে থেকে আমদানি করে নিয়ে আসা কিছু মতবাদের ক্ষেত্রে। ঠিক যেমন তাদের কুবুদ্ধির ফসল blasphemy-র কোনো ভারতীয় প্রতিশব্দ নেই তেমনি এদেশের আধ্যাত্মিক চেতনাদ্ভুত সনাতন ধর্মেরও কোনো বিজাতীয় প্রতিশব্দ নেই। সনাতন ধর্মবোধ বিশ্বজনীন হলেও একান্তই এদেশীয়। 

দুর্ভাগ্যবশত, কিছু লোকের ধর্মবোধ পছন্দ নয়, তারা মতপন্থ বা পূজাপদ্ধতিকেই ধর্ম বলে ভুল করেন। আমাদের জীবনদর্শন তাদের ঘোর অপছন্দের কারণ আমরা পন্থ নির্বিশেষে সনাতন ধর্মের অনুসারী। বিগত হাজার বছর ধরে বহু বহুবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করে, লুন্ঠন করে, মন্দির ধ্বংস করে, বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে দিয়ে, জোর করে পন্থ পরিবর্তন করিয়ে, অমানুষিক নির্যাতন করে, অশেষ সন্ত্রাস করেও তারা আমাদের মূল যাপন পাল্টাতে পারেনি এবং সেই ক্ষোভ তাদের মনের মধ্যে প্রায় স্থায়ী বাসা বেঁধে ফেলেছে। লুটেরারা হয়তো চলে গেছে কিন্তু তাদের সেই অন্যেকে জোর করে বশ্যতা স্বীকার করানোর মানসিকতার রেশ তারা ছড়িয়ে দিয়ে গেছে আমাদেরই কারো কারো মধ্যে। যখনই ভারতের শত্রুরা কেউ তাতে হওয়া দেয়, অমনি তারা নির্বোধের মতন কুকাজ করে ফেলে। 

ওরা মনে করে হিন্দুরা ভীরু। ওরা ভীরুতা আর ধর্মভীরুতার পার্থক্য বোঝেনা। ওরা ভাবে যে কারো মাথা কেটে ওরা বাকিদের  মানতে বাধ্য করাতে পারবে যে ওদের মতবাদই হলো সর্বোপরি, আর সেই মতবাদ কোনো আলোচনা বা বাদ-সংবাদের বিষয় নয়, কেবল মুখবুজে মেনে চলার বিষয়। এর অন্যথা হলেই বলপ্রয়োগ করা ওদের পন্থসম্মত অধিকার।

এই গোঁড়ামি আমাদের প্রাচীন সভ্যতার সংস্কার ও সংস্কৃতির অংশ নয়, এ আমদানি করে একশ্রেণীর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বিজাতীয় অসহিষ্ণুতা। এখানে ২০০২তে গোধরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা শবরমতী এক্সপ্রেসের তীর্থযাত্রীপূর্ন দুটি বগিকে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়াই হোক বা ২০২২শে অমরাবতী আর উদয়পুরের 'সর তন সে যুদা'ই হোক, প্রতিক্ষেত্রেই উপলক্ষটা বড় কথা নয়, বুকের মধ্যে পুষে রাখা অক্ষমতার যন্ত্রণায় তাড়িত হয়ে হঠাৎ হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠার প্রবণতাটাই আসল।

এখন প্রশ্ন হলো, চিরকালের জন্য এই ধরণের হিংসা বন্ধ করতে হলে সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিকরূপে প্রতিহিংসার পথ ধরলে কি স্থায়ী সমাধান বেরোবে নাকি নিজেদের পূর্বপুরুষের সনাতন সংস্কৃতিকে ভোলানোর যে অবতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে, সেটা ভেঙে দিতে পারলেই আসল সুরাহা হবে - সমাজকে এবং রাজনৈতিক নেতাদের এই মূল নির্ণয়টি নিতে হবে। গণতন্ত্রে বৃহত্তর সমাজ যা চাইবে রাজনৈতিক দল আখেরে তা করতে বাধ্য তবে আমি মনে করি দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রশক্তির প্রয়োগ সংযত ও শুধুমাত্র দৃষ্টান্তস্বরূপ হওয়া উচিত আর সভ্য সমাজে ভিড়তন্ত্রের কোনো স্থান নেই।

সাময়িক প্রতিক্রিয়ার বদলে সমাজ যদি সরকারের ওপর এই চাপটি দেন যে এমনটা বাধ্যতামূলক করা হোক যে প্রত্যেকটি ভারতীয় শিশু ১২ ক্লাস অবধি একই পাঠ্যক্রম পড়বে এবং কোনো সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আলাদা পন্থীয় শিক্ষাক্রম রাখা যাবে না, তাহলেই বোধহয় অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দ্বিতীয় যেটা করা দরকার তা হলো যে কোনো পন্থগুরু তাঁর পন্থীয় ভাষণে কি কি বলতে পারবেন না, সেটা একেবারে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া এবং তা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হচ্ছে কিনা সেবিষয়ে কড়া নজর রাখা ও প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। তৃতীয়, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো গবেষণার নামে চলা সমস্ত গোঁড়ামির দোকান চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া। একশ্রেণীর নাগরিককে শেখানো হচ্ছে যে হিন্দু সভ্যতার সঙ্গে তাঁদের নাড়ির যোগ নেই, তাঁরা আমাদের থেকে আলাদা। মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে গত ২১শে জুন শ্রী উমেশ প্রহ্লাদরাও কোলেকেও উদয়পুরের কানহাইয়াজী মতোই একই কারণে একইভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনাটি আমরা কেউ জানতে পারিনি কারণ তৎকালীন হিন্দুবিরোধী রাজ্যসরকার খবরটা চেপে দিয়েছিলেন। আজ NIA তদন্তে নেমেছে, ওখানেও সত্য উদ্ঘাটিত হবে। 

মুস্কিলটা হলো, এই যে আমাদের দেশে পরের পর 'সর তন সে যুদা' ঘটে চলেছে, সেই নৃশংসতার মূলে যাওয়ার বদলে একশ্রেণীর সাংবিধানিক পাদাধিকারী পর্য্যন্ত সস্তা হাততালি কুড়োবার আশায় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের তামাশার পাত্র করে বসছেন। তাঁরা কেউই হয় বুঝছেন না বা বুঝতে চাইছেন না যে এর প্রভাব কত সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

যা ঘটেছে, বা বলা ভালো ঘটানো হচ্ছে, তার পেছনে যে অপ্রকৃতিস্থ মানসিকতা কাজ করছে, সেটা সেই আদি অকৃত্তিম ভয় দেখিয়ে বশ্যতা স্বীকার করিয়ে খারাপকে ভালো বলানোর আপ্রাণ অপচেষ্টা, যা ভারতীয় সংস্কৃতির একেবারে পরিপন্থী। আমাদের সভ্যতায় ভদ্রতা, নম্রতা, সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদিকে চারিত্রিক উৎকর্ষ বলে গণ্য করা হয় কারণ মান্যতা এই, যে গাছ যত ফলবতী হয় তত সে নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাই আমরা বিবাদে নয়, সংবাদে বিশ্বাসী। সমালোচনা বা নিন্দাকে আমরা অপমান বলে মনে করিনা, বরং তাকে গঠনমূলকভাবেই দেখা হয়।

আমাদের সমাজে প্রবাসীর দৃষ্টিতে যাঁকে দীনহীন বলে মনে হতে পারে বাস্তবিকই তিনি হয়তো সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং তাঁর সান্নিধ্য ও মার্গদর্শন পেলে আমরা গৌরবান্বিত বোধ করি। সনাতন ধর্ম-সংস্কৃতিতে সর্বত্যাগীরা দয়াপরবশ হয়ে ভিক্ষা গ্রহণ করে সামাজিক জীবকে ধন্য করেন, যা বিশ্বের আর কোনো সভ্যতায় বোধহয় নেই। এই যে আমরা বাকি সমস্ত অপেক্ষাকৃত নব্যসংস্কৃতির চেয়ে আলাদা, এটাই আমাদের শক্তি, দুর্বলতা নয়। এর জোরেই আমরা আজও বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে একমাত্র জীবন্ত আদিসভ্যতা। 

আমাদের ভাষাগুলিতে যেহেতু মূলত আমাদেরই মানসিকতা প্রতিফলিত, তাই হয়তো আমাদের দেশের হাজারো ভাষার মধ্যে blasphemy শব্দটির কোনো প্রতিশব্দ নেই। আমরা স্বভাবত জ্ঞানপিপাসু, আমরা অন্যের মতকে তার দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে সর্বদা আগ্রহী। আমরা হিন্দু কারণ আমাদের মনের জানলা দরজা সবসময়ই খোলা। আমরা হিন্দু কারণ আমরা নতুনকে জানতে আগ্রহী। আমরা হিন্দু কারণ আমরা অন্যের ভালোটা শিখতে চাই আর অন্যকেও নিজেদের ভালোটি দিতে চাই। আমরা সহ্যশীল, উদার, গ্রহণক্ষম আর ধারণক্ষম।

না জানে কত হাজার হাজার বছরের পুরানো ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে এই পুণ্যভূমিতে কত শত পূজাপদ্ধতির জন্ম হয়েছে, উত্থান হয়েছে, পতন হয়েছে, পুনরুত্থান হয়েছে, পরিমার্জন হয়েছে, পরিবর্ধন হয়েছে কিন্তু একটাই বস্তু অপরিবর্তিত থেকেছে - ধর্মবোধ। গোলমাল হয়েছে লুটেরাদের দ্বারা বাইরে থেকে আমদানি করে নিয়ে আসা কিছু মতবাদের ক্ষেত্রে। ঠিক যেমন তাদের কুবুদ্ধির ফসল blasphemy-র কোনো ভারতীয় প্রতিশব্দ নেই তেমনি এদেশের আধ্যাত্মিক চেতনাদ্ভুত সনাতন ধর্মেরও কোনো বিজাতীয় প্রতিশব্দ নেই। সনাতন বোধ বিশ্বজনীন হলেও একান্তই এদেশীয়। 

দুর্ভাগ্যবশত, কিছু লোকের ধর্মবোধ পছন্দ নয়, তারা মতপন্থ বা পূজাপদ্ধতিকেই ধর্ম বলে ভুল করেন। আমাদের জীবনদর্শন তাদের ঘোর অপছন্দের কারণ আমরা পন্থ নির্বিশেষে সনাতন ধর্মের অনুসারী। বিগত হাজার বছর ধরে বহু বহুবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করে, লুন্ঠন করে, মন্দির ধ্বংস করে, বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে দিয়ে, জোর করে পন্থ পরিবর্তন করিয়ে, অমানুষিক নির্যাতন করে, অশেষ সন্ত্রাস করেও তারা আমাদের মূল যাপন পাল্টাতে পারেনি এবং সেই ক্ষোভ তাদের মনের মধ্যে প্রায় স্থায়ী বাসা বেঁধে ফেলেছে। লুটেরারা হয়তো চলে গেছে কিন্তু তাদের সেই অন্যেকে জোর করে বশ্যতা স্বীকার করানোর মানসিকতার রেশ তারা ছড়িয়ে দিয়ে গেছে আমাদেরই কারো কারো মধ্যে। যখনই ভারতের শত্রুরা কেউ তাতে হওয়া দেয়, অমনি তারা নির্বোধের মতন কুকাজ করে ফেলে। 

ওরা মনে করে হিন্দুরা ভীরু। ওরা ভীরুতা আর ধর্মভীরুতার পার্থক্য বোঝেনা। ওরা ভাবে যে কারো মাথা কেটে ওরা বাকিদের  মানতে বাধ্য করাতে পারবে যে ওদের মতবাদই হলো সর্বোপরি, আর সেই মতবাদ কোনো আলোচনা বা বাদ-সংবাদের বিষয় নয়, কেবল মুখবুজে মেনে চলার বিষয়। এর অন্যথা হলেই বলপ্রয়োগ করা ওদের পন্থসম্মত অধিকার।

এই গোঁড়ামি আমাদের প্রাচীন সভ্যতার সংস্কার ও সংস্কৃতির অংশ নয়, এ আমদানি করে একশ্রেণীর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বিজাতীয় অসহিষ্ণুতা। এখানে ২০০২তে গোধরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা শবরমতী এক্সপ্রেসের তীর্থযাত্রীপূর্ন দুটি বগিকে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়াই হোক বা ২০২২শে অমরাবতী আর উদয়পুরের 'সর তন সে যুদা'ই হোক, প্রতিক্ষেত্রেই উপলক্ষটা বড় কথা নয়, বুকের মধ্যে পুষে রাখা অক্ষমতার যন্ত্রণায় তাড়িত হয়ে হঠাৎ হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠার প্রবণতাটাই আসল।

এখন প্রশ্ন হলো, চিরকালের জন্য এই ধরণের হিংসা বন্ধ করতে হলে সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিকরূপে প্রতিহিংসার পথ ধরলে কি স্থায়ী সমাধান বেরোবে নাকি নিজেদের পূর্বপুরুষের সনাতন সংস্কৃতিকে ভোলানোর যে অবতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে, সেটা ভেঙে দিতে পারলেই আসল সুরাহা হবে - সমাজকে এবং রাজনৈতিক নেতাদের এই মূল নির্ণয়টি নিতে হবে। গণতন্ত্রে বৃহত্তর সমাজ যা চাইবে রাজনৈতিক দল আখেরে তা করতে বাধ্য তবে আমি মনে করি দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রশক্তির প্রয়োগ সংযত ও শুধুমাত্র দৃষ্টান্তস্বরূপ হওয়া উচিত আর সভ্য সমাজে mobocracy-র কোনো স্থান নেই।

সাময়িক প্রতিক্রিয়ার বদলে সমাজ যদি সরকারের ওপর এই চাপটি দেন যে এমনটা বাধ্যতামূলক করা হোক যে প্রত্যেকটি ভারতীয় শিশু ১২ ক্লাস অবধি একই পাঠ্যক্রম পড়বে এবং কোনো সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আলাদা পন্থীয় শিক্ষাক্রম রাখা যাবে না, তাহলেই বোধহয় অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দ্বিতীয় যেটা করা দরকার তা হলো যে কোনো পন্থগুরু তাঁর পন্থীয় ভাষণে কি কি বলতে পারবেন না, সেটা একেবারে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া এবং তা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হচ্ছে কিনা সেবিষয়ে কড়া নজর রাখা ও প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। তৃতীয়, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো গবেষণার নামে চলা সমস্ত গোঁড়ামির দোকান চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া। একশ্রেণীর নাগরিককে শেখানো হচ্ছে যে হিন্দু সভ্যতার সঙ্গে তাঁদের নাড়ির যোগ নেই, তাঁরা আমাদের থেকে আলাদা।।মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে গত ২১শে জুন শ্রী উমেশ প্রহ্লাদরাও কোলেকেও উদয়পুরের কানহাইয়াজী মতোই একই কারণে একইভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনাটি আমরা কেউ জানতে পারিনি কারণ তৎকালীন হিন্দুবিরোধী রাজ্যসরকার খবরটা চেপে দিয়েছিলেন। আজ NIA তদন্তে নেমেছে, ওখানেও সত্য উদ্ঘাটিত হবে। 

মুস্কিলটা হলো, এই যে আমাদের দেশে পরের পর 'সর তন সে যুদা' ঘটে চলেছে, সেই নৃশংসতার মূলে যাওয়ার বদলে একশ্রেণীর সাংবিধানিক পাদাধিকারী পর্য্যন্ত সস্তা হাততালি কুড়োবার আশায় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের তামাশার পাত্র করে বসছেন। তাঁরা কেউই হয় বুঝছেন না বা বুঝতে চাইছেন না যে এর প্রভাব কত সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

যা ঘটেছে, বা বলা ভালো ঘটানো হচ্ছে, তার পেছনে যে অপ্রকৃতিস্থ মানসিকতা কাজ করছে, সেটা সেই আদি অকৃত্তিম ভয় দেখিয়ে বশ্যতা স্বীকার করিয়ে খারাপকে ভালো বলানোর আপ্রাণ অপচেষ্টা, যা ভারতীয় সংস্কৃতির একেবারে পরিপন্থী। আমাদের সভ্যতায় ভদ্রতা, নম্রতা, সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদিকে চারিত্রিক উৎকর্ষ বলে গণ্য করা হয় কারণ মান্যতা এই, যে গাছ যত ফলবতী হয় তত সে নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাই আমরা বিবাদে নয়, সংবাদে বিশ্বাসী। সমালোচনা বা নিন্দাকে আমরা অপমান বলে মনে করিনা, বরং তাকে গঠনমূলকভাবেই দেখা হয়।

আমাদের সমাজে প্রবাসীর দৃষ্টিতে যাঁকে দীনহীন বলে মনে হতে পারে বাস্তবিকই তিনি হয়তো সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং তাঁর সান্নিধ্য ও মার্গদর্শন পেলে আমরা গৌরবান্বিত বোধ করি। সনাতন ধর্ম-সংস্কৃতিতে সর্বত্যাগীরা দয়াপরবশ হয়ে ভিক্ষা গ্রহণ করে সামাজিক জীবকে ধন্য করেন, যা বিশ্বের আর কোনো সভ্যতায় বোধহয় নেই। এই যে আমরা বাকি সমস্ত অপেক্ষাকৃত নব্যসংস্কৃতির চেয়ে আলাদা, এটাই আমাদের শক্তি, দুর্বলতা নয়। এর জোরেই আমরা আজও বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে একমাত্র জীবন্ত আদিসভ্যতা। 

আমাদের ভাষাগুলিতে যেহেতু মূলত আমাদেরই মানসিকতা প্রতিফলিত, তাই হয়তো আমাদের দেশের হাজারো ভাষার মধ্যে blasphemy শব্দটির কোনো প্রতিশব্দ নেই। আমরা স্বভাবত জ্ঞানপিপাসু, আমরা অন্যের মতকে তার দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে সর্বদা আগ্রহী। আমরা হিন্দু কারণ আমাদের মনের জানলা দরজা সবসময়ই খোলা। আমরা হিন্দু কারণ আমরা নতুনকে জানতে আগ্রহী। আমরা হিন্দু কারণ আমরা অন্যের ভালোটা শিখতে চাই আর অন্যকেও নিজেদের ভালোটি দিতে চাই। আমরা সহ্যশীল, উদার, গ্রহণক্ষম আর ধারণক্ষম।

না জানে কত হাজার হাজার বছরের পুরানো ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে এই পুণ্যভূমিতে কত শত পূজাপদ্ধতির জন্ম হয়েছে, উত্থান হয়েছে, পতন হয়েছে, পুনরুত্থান হয়েছে, পরিমার্জন হয়েছে, পরিবর্ধন হয়েছে কিন্তু একটাই বস্তু অপরিবর্তিত থেকেছে - ধর্মবোধ। গোলমাল হয়েছে লুটেরাদের দ্বারা বাইরে থেকে আমদানি করে নিয়ে আসা কিছু মতবাদের ক্ষেত্রে। ঠিক যেমন তাদের কুবুদ্ধির ফসল blasphemy-র কোনো ভারতীয় প্রতিশব্দ নেই তেমনি এদেশের আধ্যাত্মিক চেতনাদ্ভুত সনাতন ধর্মেরও কোনো বিজাতীয় প্রতিশব্দ নেই। সনাতন বোধ বিশ্বজনীন হলেও একান্তই এদেশীয়। 

দুর্ভাগ্যবশত, কিছু লোকের ধর্মবোধ পছন্দ নয়, তারা মতপন্থ বা পূজাপদ্ধতিকেই ধর্ম বলে ভুল করেন। আমাদের জীবনদর্শন তাদের ঘোর অপছন্দের কারণ আমরা পন্থ নির্বিশেষে সনাতন ধর্মের অনুসারী। বিগত হাজার বছর ধরে বহু বহুবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করে, লুন্ঠন করে, মন্দির ধ্বংস করে, বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে দিয়ে, জোর করে পন্থ পরিবর্তন করিয়ে, অমানুষিক নির্যাতন করে, অশেষ সন্ত্রাস করেও তারা আমাদের মূল যাপন পাল্টাতে পারেনি এবং সেই ক্ষোভ তাদের মনের মধ্যে প্রায় স্থায়ী বাসা বেঁধে ফেলেছে। লুটেরারা হয়তো চলে গেছে কিন্তু তাদের সেই অন্যেকে জোর করে বশ্যতা স্বীকার করানোর মানসিকতার রেশ তারা ছড়িয়ে দিয়ে গেছে আমাদেরই কারো কারো মধ্যে। যখনই ভারতের শত্রুরা কেউ তাতে হওয়া দেয়, অমনি তারা নির্বোধের মতন কুকাজ করে ফেলে। 

ওরা মনে করে হিন্দুরা ভীরু। ওরা ভীরুতা আর ধর্মভীরুতার পার্থক্য বোঝেনা। ওরা ভাবে যে কারো মাথা কেটে ওরা বাকিদের  মানতে বাধ্য করাতে পারবে যে ওদের মতবাদই হলো সর্বোপরি, আর সেই মতবাদ কোনো আলোচনা বা বাদ-সংবাদের বিষয় নয়, কেবল মুখবুজে মেনে চলার বিষয়। এর অন্যথা হলেই বলপ্রয়োগ করা ওদের পন্থসম্মত অধিকার।

এই গোঁড়ামি আমাদের প্রাচীন সভ্যতার সংস্কার ও সংস্কৃতির অংশ নয়, এ আমদানি করে একশ্রেণীর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বিজাতীয় অসহিষ্ণুতা। এখানে ২০০২তে গোধরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা শবরমতী এক্সপ্রেসের তীর্থযাত্রীপূর্ন দুটি বগিকে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়াই হোক বা ২০২২শে অমরাবতী আর উদয়পুরের 'সর তন সে যুদা'ই হোক, প্রতিক্ষেত্রেই উপলক্ষটা বড় কথা নয়, বুকের মধ্যে পুষে রাখা অক্ষমতার যন্ত্রণায় তাড়িত হয়ে হঠাৎ হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠার প্রবণতাটাই আসল।

এখন প্রশ্ন হলো, চিরকালের জন্য এই ধরণের হিংসা বন্ধ করতে হলে সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিকরূপে প্রতিহিংসার পথ ধরলে কি স্থায়ী সমাধান বেরোবে নাকি নিজেদের পূর্বপুরুষের সনাতন সংস্কৃতিকে ভোলানোর যে অবতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে, সেটা ভেঙে দিতে পারলেই আসল সুরাহা হবে - সমাজকে এবং রাজনৈতিক নেতাদের এই মূল নির্ণয়টি নিতে হবে। গণতন্ত্রে বৃহত্তর সমাজ যা চাইবে রাজনৈতিক দল আখেরে তা করতে বাধ্য তবে আমি মনে করি দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রশক্তির প্রয়োগ সংযত ও শুধুমাত্র দৃষ্টান্তস্বরূপ হওয়া উচিত আর সভ্য সমাজে mobocracy-র কোনো স্থান নেই।

সাময়িক প্রতিক্রিয়ার বদলে সমাজ যদি সরকারের ওপর এই চাপটি দেন যে এমনটা বাধ্যতামূলক করা হোক যে প্রত্যেকটি ভারতীয় শিশু ১২ ক্লাস অবধি একই পাঠ্যক্রম পড়বে এবং কোনো সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আলাদা পন্থীয় শিক্ষাক্রম রাখা যাবে না, তাহলেই বোধহয় অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দ্বিতীয় যেটা করা দরকার তা হলো যে কোনো পন্থগুরু তাঁর পন্থীয় ভাষণে কি কি বলতে পারবেন না, সেটা একেবারে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া এবং তা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হচ্ছে কিনা সেবিষয়ে কড়া নজর রাখা ও প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। তৃতীয়, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো গবেষণার নামে চলা সমস্ত গোঁড়ামির দোকান চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া। একশ্রেণীর নাগরিককে শেখানো হচ্ছে যে হিন্দু সভ্যতার সঙ্গে তাঁদের নাড়ির যোগ নেই, তাঁরা আমাদের থেকে আলাদা। হিন্দুরা নিজেদের সমাজ নিজেরাই সংস্কার করেন অথচ একই পূর্বপুরুষের বংশধর হওয়া স্বত্তেও এঁদের কাছে সমাজসংস্কার পাপ। এই ভ্রান্ত ধারণাটি একবার ভেঙে দিতে পারলেই কাজের কাজ হয়ে যাবে। 

No comments:

Post a Comment