Thursday, June 1, 2023

ইয়ে গান্ধী ঝুটা হ্যায়

একজন 'আম' ভারতীয় নাগরিক আর্মচেয়ার লালদের স্বপ্নের দেশ আমৃগা গেছেন, ওখানে তাঁর ভরণপোষণ করছে IAMC - Indian American Muslim Council - যার মধ্যে ভারতীয় মূলের সদস্য কম এবং পাকিস্তানী মূলের এবং Muslim Brotherhoodএর প্রতিনিধিত্বই বেশি, যাঁরা ভারতীয় জাতীয় সংগীত বাজলে উঠে দাঁড়িয়ে দেশকে সন্মান জানাতে বিমুখ।

এই 'আম' যখন 'খাস' ছিলেন তখনো যে ধরণের আমৃগী আতিথ্য পেতেন, মানে শহরের মেয়র টেওর এসে খাতিরদারি করতেন, পাকিস্তানিমূলের জামাত-এ-ইসলামীর সমর্থক ইমাম জাভেদ আহমেদের নেতৃত্বাধীন ICNA - Islamic Circle of North America লোক জোটাতে সাহায্য করতেন, ওদেশের রাজ্য ও জাতীয়স্তরের কয়েকজন মার্কামারা 'মানবাধিকারকর্মী' 'গণতন্ত্রপ্রেমী' জনপ্রতিনিধিরাও ওঁর সঙ্গে দেখা করে 'অনুপ্রেরণা' দিতেন, এবারেও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। 

উনি যথারীতি ভারতে ইসলামোফোবিয়া যে কি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তার বর্ণনা করছেন, তাঁর দল পরপর হিমাচল এবং কর্ণাটক জেতার পরেও ভারতে গণতন্ত্র কতটা বিপন্ন তা পাশ্চাত্যবাসীদের বুঝিয়ে বলছেন এবং দেশের লোককে ভুল বুঝিয়ে এখন কতটা বেশি হিন্দুত্ববাদী করা হচ্ছে তার প্রমাণ দিচ্ছেন, ইত্যাদি। উনি ওনার জন্য নির্দিষ্ট কাজ করছেন, তাতে আর কার কিই বা বলার থাকতে পারে? 

এর সাথেই ছোট্ট একটা খবর দিয়ে রাখা উচিত বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে আগামী বছর জানুয়ারি - ফেব্রুয়ারি নাগাদ জাতীয় নির্বাচন। আমৃগা অনেকদিন ধরেই চাইছে বাংলাদেশে একটা নিজস্ব মিলিটারি বেস তৈরি করতে কারণ মায়ানমারের মিলিটারি শাসকরা সব চীনের পোষ্য এবং ভবিষ্যতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চীন চাইলেই মায়ানমারের মধ্যে দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্য্যন্ত পৌঁছে যেতেই পারে। 

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমৃগা বাহাদুরকে সেই জায়গাটা দিতে নারাজ, উনি চীনকেও চটাতে চান না আর অন্যের যুদ্ধে আব্দুল্লা দিওয়ানাও হতে চান না। ওনার দলের শীর্ষনেতৃত্বের ওপর বাঙালিত্বের প্রভাব ইসলামিক কট্টরপন্থার চেয়ে ঢের বেশি, ফলে জামাত-এ-ইসলামীর থেকে ওনারা যতটা দূরে, ওঁর প্রধান প্রতিপক্ষরা ততটাই ওই জিহাদিদের কাছাকাছি। 

বস্তুতঃ, ওঁর প্রধান প্রতিপক্ষ পাকিস্তানি সেনা এবং ISIএরও খুবই ঘনিষ্ঠ। আর যেখানেই কট্টরতা, সেখানেই অস্থিরতা। আর যেখানেই অস্থিরতা সেখানেই দুহাতে দুই মোক্ষম অস্ত্র democracy আর human rights নিয়ে আমৃগা বাহাদুর আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঢুকে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। শেখ হাসিনার সরকারকে যে ভারত পছন্দ করে এবং সর্বতোভাবে সাহায্য করে, সেটা আমৃগা বাহাদুরের একেবারেই না-পসন্দ।

ইদানিং আমৃগা বাংলাদেশের democracy নিয়ে খুবই চিন্তিত এবং বেগম হাসিনাকে আগামী নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার দল যাতে অংশগ্রহণ করে, সেটা সুনিশ্চিত করতে বাণিজ্যকে হাতিয়ার করে বিস্তর চাপে রেখেছে। একইসাথে তারা ভারতকে NATO+ এ অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে যাতে বকলমে মায়ানমারের কাছাকাছি কোনো বাংলাদেশি পোর্টে NATOর কোনো বন্ধুদেশ একটা সামরিক বেস গড়ে তুলতে পারে।

বাংলাদেশে ভারতের permanent সামরিক বেস ১৯৭১এই গড়া উচিত ছিল, কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ। আর কয়েকদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী স্টেট ভিসিটে আমৃগা যাচ্ছেন, তাতে ভারত এবং আমৃগার মধ্যে যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের দেওয়াল এখনো দাঁড়িয়ে আছে, তাতে চিড় ধরবে কিনা দেখা যাক। এই যে মাঝেমাঝেই অমুক ইন্ডেক্স আর তমুক ইন্ডেক্সে অহেতুক মিথ্যে মান দিয়ে বালখিল্যের মতন চিমটি কাটা হয়, সেগুলো বন্ধ হলে খানিকটা আভাস পাওয়া যাবে।

অবশ্য আমৃগা ভারতীয় উপমহাদেশে IAMC নামক যে ইসলামী ব্রহ্মাস্ত্রটি ব্যবহার করে থাকে (বা ক্ষেত্রবিশেষে আমৃগাস্থিত The Federation of Indian American Christian Organizations - FIACONA), তাদের আতিথ্য উপভোগ করে এবং 'বন্ধুদের' দ্বারা 'অনুপ্রাণিত' হয়ে তার আগেই আমাদের 'আম' আদমি দেশে ফিরে আসবেন। 

আমৃগা কেবল নিজের interest দেখে, তাতে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান জিহাদিদের হাতে গিয়ে পড়লো বা না পড়লো তাতে তাদের কিছু আসে যায় না।  ভেতরে ও বাইরের জামাতিদের দিয়ে একদিকে যেমন ভারতকে প্রচন্ড চাপে রাখতে হবে যাতে একেবারে লাগামছাড়া হয়ে না যায়, অন্যদিকে চীনের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে ভারতের মতন একজন বলিষ্ঠ সহযোগীও চাই - কি বিড়ম্বনা! 

আর যদি দেশহিতে ভারত আমৃগার পছন্দের সময় মাঠে নামতে অস্বীকার করে, তাই আমৃগার পা-চাটা প্রধানমন্ত্রীও চাই আবার পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশে নিজেদের সামরিক বেসও চাই। এখন, আমৃগার এই গোটা planটাকে handle করার জন্য সবচেয়ে আগে চাই একজন conduit - তাই কখনো দাঁড়ি বাড়ছে কখনো কমছে, কখনো পৈতে দেখা যাচ্ছে কখনো টুপি। কিন্তু গোটাটা ঘেঁটে দিয়ে মাঝখানে একটা অসম্ভব জনপ্রিয় ঝঞ্ঝাটে বুড়ো ক্রমাগত ব্যাগড়া দেওয়ার ফলে আখেরে বাহাদুরের কাজের কাজ আর হচ্ছে কই?

No comments:

Post a Comment