Tuesday, April 5, 2022

চৈতি

চিলেকোঠায় আমার ঘরের দক্ষিণদিকের কপাট হাট করে খোলা আছে এখন। তার ঠিক বাইরেই চৈত্রের খ্যাপা পবন হুহু করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর পর্দা উড়িয়ে হুড়মুড় করে নির্বিচারে ঢুকে পড়ছে অন্দরেও। কার্নিশে গিন্নির গোটাকতক শখের ফুলগাছ সাজানো ছিল ছোট ছোট টবে, একটু আগেই বাতাসের বেগের সঙ্গে যুঝতে না পেরে বেচারারা সশব্দে গড়িয়ে পড়লো ছাদের মেঝেতে। ছুটে গিয়ে তাদের তুলে, ঝেড়েঝুরে মেঝেতেই বসিয়ে দিয়ে এলাম। হটাৎ কেমন যেন একটা বেপরোয়া ভাব লক্ষ্য করছি চতুর্দিকে - গাছগাছালির পাতাগুলো সরসর করে আওয়াজ করে যেন হওয়ার বেগে ছুটে যেতে চাইছে। রোদ্দুর আজ অতটা কড়া নয়, তবুও আলোয় ভেসে যাচ্ছে ঘরের বাইরেটা, ফুলগুলোর সোনামুখ সব একেবারে চকচক করছে। একটা ঘুঘু গলা ফুলিয়ে ফুলিয়ে পাঁচিলের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে করতে কাকে যেন ক্রমাগত ডেকে চলেছে, কাঠবেড়ালিটাও তিড়িংবিরিং করে একবার এদিকে ছুটছে তো একবার ওদিকে, সব মিলিয়ে কেমন যেন ভয়ানক ব্যস্তসমস্ত সবাই। আমি নেওয়ারের খাটটা টেনে কপাটের মুখোমুখি নিয়ে এসেছি। হওয়ার দাপটে আমার ধুতিটা গোল হয়ে ফুলে ফুলে উঠছে। ছাদের বাগান থেকে গন্ধরাজের সুগন্ধ ভেসে এসে ম ম করছে আশপাশ। শুয়ে শুয়ে এই জেগে ওঠা জগৎটাকে দেখছি আর রবীন্দ্রনাথের বরযাত্রী কবিতাটি মনে পড়ছে,
পবন দিগন্তের দুয়ার নাড়ে
চকিত অরণ্যের সুপ্তি কাড়ে।
      যেন কোন্‌ দুর্দম
      বিপুল বিহঙ্গম
গগনে মুহুর্‌মুহু পক্ষ ছাড়ে।
পথপাশে মল্লিকা দাঁড়ালো আসি,
বাতাসে সুগন্ধের বাজালো বাঁশি।
      ধরার স্বয়ম্বরে
      উদার আড়ম্বরে
আসে বর অম্বরে ছড়ায়ে হাসি।
অশোক রোমাঞ্চিত মঞ্জরিয়া
দিল তার সঞ্চয় অঞ্জলিয়া।
      মধুকরগুঞ্জিত
      কিশলয়পুঞ্জিত
উঠিল বনাঞ্চল চঞ্চলিয়া।
কিংশুককুঙ্কুমে বসিল সেজে,
ধরণীর কিঙ্কিণী উঠিল বেজে।
      ইঙ্গিতে সংগীতে
      নৃত্যের ভঙ্গিতে
নিখিল তরঙ্গিত উৎসবে যে।

No comments:

Post a Comment