Thursday, April 14, 2022

হিন্দুমেলা ফিরে আসুক

বাঙালি বহুশতক ধরে মানসিকভাবে এবং জাতিগতভাবে পরের অধীন ছিল, ফলে বিজাতীয় চিন্তাধারা তার মননকে যত বেশি প্রভাবিত করেছে, দেশীয় সংস্কৃতি এবং তার নিজের জাতিস্বত্তা থেকে সে তত দূরে সরে গেছে। এটা সেই নবাবদের আমল থেকে শুরু হয়ে লাগাতার বাম শাসন অবধি চলেছে, মাঝে ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাও বাঙালির কম সর্বনাশ করেনি। বাঙালির যে নিজস্ব একটি গৌরবময় ইতিহাস ছিল, বঙ্গমাতার এক কৃতী সন্তান অতীশ দীপঙ্কর পায়ে হেঁটে তিব্বতে ভারতীয় দর্শনের আলো জ্বালাতে গিয়েছিলেন তো আর এক কৃতী সন্তান বিজয় সিংহ সাতশো বাঙালিকে সঙ্গে নিয়ে সিংহল জয় করে নিজের আধিপত্য স্থাপন করেছিলেন, সে কথা বাঙালি ভুলে গেছে। 

বাঙালি ভুলে গেছে ভারতের নৌসেনার ইতিহাসের সেই স্বর্ণাক্ষরে লেখা দিন যেদিন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ১০ই নভেম্বর ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে কেদার রায় আক্রমণকারী মগ রণবহরকে বিধস্ত করে দিয়েছিলেন। বাঙালি এও ভুলে গেছে যে জিনমিত্র, ধর্মপাল, বোধিধর্ম, মঞ্জুশ্রী, বোধিসেন, রামচন্দ্র কবি ভারতী প্রভৃতি বাঙালি ধর্মপ্রচারকরা এককালে গোটা এশিয়া জুড়ে নিজেদের কীর্তি স্থাপন করেছিলেন যার প্রভাব এখনো নেপাল থেকে নিয়ে তিব্বত, চীন, পূর্ব-উপদ্বীপ, জাভা এবং বালিতে দেখতে পাওয়া যায়। আজকের বাঙালির মতন এমন আত্মবিস্মৃত জাতি আর দুটি মেলা ভার। তাই নীরদচন্দ্র চৌধরী তাঁর বিখ্যাত বই 'আত্মঘাতী বাঙালি'তে লিখেছিলেন, 'যে হিন্দুশাসক ও অভিজাত সমাজ হিন্দু সভ্যতার অবলম্বন স্বরূপ ছিল, মুসলমানের আক্রমণে উহারা একেবারে বিনষ্ট না হইলেও, শক্তিহীন হইয়া পড়ে। এই অবস্থায় তাহাদের পক্ষে আর হিন্দু সভ্যতার প্রাচীন ধারা অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হয় নাই এবং এই নেতৃত্ব হারাইয়া ভারতবর্ষের সাধারণ জনসমষ্টি, সমস্ত মুসলমান যুগ ধরিয়া কি ধর্মে, কি সাহিত্যে, কি ভাষায়, কি আর্টে, কি আচার-ব্যবহারে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার একটি অপভ্রংশ সৃষ্টি ভিন্ন আর কিছু করিতে পারে নাই।'

প্রতিটি সভ্যতার মূলে থাকে তার সংস্কৃতি, যা দীর্ঘদিনের চর্চার মাধ্যমে পরিশীলিত হতে হতে সমাজে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে আত্মস্থাপিত হয়। তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জুড়ে থাকে জীবনদর্শন, যাকে আমরা এই হিন্দু সভ্যতায় ধর্ম বলি, যার মূল সূত্র হলো বহুত্ববাদ এবং বিরুদ্ধ মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা। দুর্ভাগ্যবশত, বাঙালির জীবনে এই হিন্দু ধর্মবোধ যত কমেছে তত বাঙালি তার বাঙালিত্ব এবং হিন্দুত্বকে হারিয়েছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সেকালের কয়েকজন আলোকপ্রাপ্ত বাঙালি মনীষী যেমন রাজনারায়ন বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নবগোপাল মিত্র প্রমুখরা বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন। অধ্যাপক অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, 'রাজনারায়ণ বসু ছিলেন হিন্দু পুনঃজাগরণের উদগাতা। ১৮৬৬ সালে তিনি ইংরেজি ভাষায় একটি পুস্তিকা রচনা করেন- ‘‘Society for the Promotion of National Feeling among the Educated Natives of Bengal’’ নামে। রাজনারায়ণ বসু-র চিন্তাভাবনারই বাস্তবায়ন ঘটান নবগোপাল মিত্র ‘হিন্দু মেলা’ আয়োজনের মাধ্যমে। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, হিন্দু মেলা বাংলায় জাতীয়তাবোধের বিকাশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ সালে ‘জাতীয় মেলা’ শুরু করেন। চৈত্র মাসের শেষ দিন আশুতোষ দেবের বেলগাছিয়া বাগানে প্রথম মেলাটি হয়।' 

পরেরবছর ১৮৬৮ সালে মেলার সম্পাদক গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়ে বলেন, "এই মিলন সাধারণ ধর্মকর্মের জন্য নহে, কোনো বিষয় সুখের জন্য নহে, কেবল আমোদ প্রমোদের জন্য নহে, ইহা স্বদেশের জন্য - ইহা ভারতভূমির জন্য"। তারপর ১৮৭০ সালে চতুর্থ বর্ষ থেকে মেলাটি ‘হিন্দু মেলা’ রূপে পরিচিত হয়। ওই মেলার সম্পাদক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেদিন বলেছিলেন, "অদ্যকার এই যে অপূর্ব সমারোহ ইহা এতদিন পরে ইহার প্রকৃত নাম ধারণ করিয়াছে, ইহা হিন্দুমেলা নামে আপনাকে লোক সমক্ষে পরিচয় দিতেছে...... এক্ষণে 'হিন্দুমেলা' এই সুস্পষ্ট নাম দ্বারা মেলার প্রকৃত মূর্তি প্রকাশ পাইতেছে।" হিন্দুমেলার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাঁর বক্তৃতায় গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, "ইহার আরও একটি মহৎ উদ্দেশ্য আছে, সেই উদ্দেশ্য আত্মনির্ভরতা। .... যাহাতে এই আত্মনির্ভরতা ভারতবর্ষে স্থাপিত হয়, ভারতবর্ষে বদ্ধমূল হয়, তাহা এই মেলার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য। স্বদেশের হিতসাধনের জন্য পরের সাহায্য না চাহিয়া যাহাতে আমরা আপনারাই তাহা সাধন করিতে পারি- এই ইহার প্রকৃত ও প্রধান উদ্দেশ্য।" এই মেলায় কুটির শিল্প-জাত দ্রব্য ও কৃষিজাত দ্রব্যাদি প্রদর্শিত হত। এর সঙ্গে থাকত শিল্প প্রদর্শনী ও কুস্তি, লাঠিখেলা ইত্যাদি ভারতীয় খেলাধুলার প্রতিযোগিতা। মেলায় সাহিত্য ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হত। ১৮৮০ সালে বন্ধ হয়ে যায় এই হিন্দুমেলা। কিন্তু ততদিনে তার ঈপ্সিত হিন্দু জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে গেছে তৎকালীন বঙ্গে। 

আমরা যদি ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুটি দশকের ঘটনাবলীর দিকে ফিরে দেখি, তাহলে দেখবো যে নবজাগরণের ভরকেন্দ্র কিন্তু ১৮৮০-১৯২০, এই চল্লিশ বছরের কালখণ্ডে। তার আগে থেকেই অবশ্য আত্মপর্য্যালোচনার একটি ধারা শুরু হয়েছিলো। বাংলার নবজাগরণের প্রাণপুরুষ রাজা রামমোহন রায় ১৮২৯ সালে সতীদাহপ্রথা বন্ধ করিয়েছেন, নির্ভীক এবং নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পুরোধা হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত পত্রিকা 'হিন্দু প্যাট্রিওট' এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে ১৮৫৩ সালে, বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করিয়েছেন ১৮৫৬ সালে, নীল বিদ্রোহ ঘটেছে ১৮৬৪ সালে আর আনন্দমঠ প্রকাশিত হয়েছে ১৮৮২ সালে। কিন্তু হিন্দুমেলা পরবর্তী কালখণ্ডে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে গেল ১৮৮৬ সালের ২৪শে ডিসেম্বরের রাত্রে। নয়জন ঈশ্বরকোটি বাঙালি যুবক আঁটপুরে তাঁদের সদ্য ব্রহ্মলীন গুরুদেব শ্রীরামকৃষ্ণের ইচ্ছা অনুসারে বিরোজা হোম করে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন আর বাংলার তথা ভারতের ইতিহাস চিরকালের জন্য বদলে গেল। তাঁদের নেতা স্বামী বিবেকানন্দ বেরিয়ে পড়লেন ভারতের অন্তরাত্মাকে উপলব্ধি করার উদ্দেশ্যে, তারপর একসময় পৌঁছে গেলেন শিকাগোর বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে এবং আধুনিক জগৎ নতুন করে শুনতে পেল ভারতের চিরন্তন উদ্ঘোষ: মানুষের জীবন 'আত্মনো মোক্ষার্থম্ জগদ্ধিতায় চ' (নিজের মোক্ষলাভ এবং জগতের মঙ্গলের জন্য)। ১৯০২ সালে শরীর ত্যাগ করলেন এই বীর সন্ন্যাসী। ইতিমধ্যে জন্ম হয়েছে আধুনিক বাংলার তিন পুরোধা পুরুষ স্বামী প্রণবানন্দ, সুভাষচন্দ্র এবং শ্যামাপ্রসাদের। সেই সময়ই বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের যুগ শুরু হচ্ছে, আর কিছু পরেই নোবেল পাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ।

এর মধ্যে ১৯০৩ সালে আরো একটি ঘটনা ঘটে গেল। রবীন্দ্রনাথের ভাগনি সরলাদেবী চৌধুরানী হিন্দু মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওই একই উদ্দেশ্য নিয়ে 'প্রতাপাদিত্য উৎসব' নামে একটি মেলার সভাপতিত্ব করলেন, যা পরাধীন বঙ্গে এক নবজাগরণ আর নবচেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। ওনার আত্মজীবনী 'জীবনের ঝরাপাতা'য় উনি লিখছেন, "যেসব ছেলেরা তখন আমার কাছে আসত তার মধ্যে মণিলাল গাঙ্গুলী বলে একটি ছেলে ছিল। সে Dawn পত্রিকার সম্পাদক সতীশ মুখুয্যের ভাগিনেয়।সতীশবাবুও মাঝে মাঝে এসেছেন। মণিলালের সাহিত্যের দিকে একটু ঝোঁক ছিল। তার পরিচালিত একটা সাহিত্য-সমিতি ছিল ভবানীপুরের ছেলেদের। সে একদিন আমায় অনুরোধ করলে তাদের সাম্বৎসরিক উৎসবের দিন আসছে আমি যেন তাতে সভানেত্রীত্ব করি। যদিও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে এসেছি -কিন্তু কলকাতা শহরে ছেলেদের সভায় উপস্থিত হওয়া ও সভানেত্রীত্ব  করা তখন আমার কল্পনার বাইরে। আমি ইতস্ততঃ করতে লাগলুম। সে আবার পীড়াপীড়ি করাতে আমি একটু ভেবে তাকে বললুম-"আচ্ছা, তোমাদের সভায় সভানেত্রীত্ব করতে যাব- এটাকে যদি তোমাদের সাহিত্যালোচনার সাম্বৎসরিক না করে সেদিন তোমাদের সভা থেকে "প্রতাপাদিত্য উৎসব কর, আর দিনটা আরও পিছিয়ে ১লা বৈশাখে ফেলে, যেদিন প্রতাপাদিত্যের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল।সভায় কোন বক্তৃতাদি রেখ না। সমস্ত কলকাতা ঘুরে খুঁজে বের কর কোথায় কোন বাঙালী ছেলে কুস্তি জানে,তলোয়ার খেলতে পারে,বক্সিং করে, লাঠি চালায়। তাদের খেলার প্রদর্শনী কর-আর আমি তাদের এক-একটি বিষয়ে এক-একটি মেডেল দেব। একটিমাত্ৰ প্রবন্ধ পাঠ হবে-সে তোমাদের সাহিত্য-সভার সাম্বৎসরিক রিপোর্ট নয় -প্রতাপাদিত্যের জীবনী। বই আনাও-পড় তাঁর জীবনী, তার সার শোনাও সভায়।" মনিলাল রাজি হল। তলোয়ার খেলা দেখানর জন্য তাদের পাড়ার বাঙালী হয়ে- যাওয়া রাজপুত ছেলে হরদয়ালকে জোগাড় করলে, কুস্তির জন্যে মসজিদবাড়ির গুহদের ছেলেরা এল, বক্সিংয়ের জন্য ভুপেন বসুর ভাইপো শৈলেন বসুর দলবল এবং লাঠির জন্য দু-চারজন লোক কোথা হতে সংগ্রহ হল। আমি যেভাবে বলেছিলুম,সেইভাবে সভার কার্যক্রম পরিচালিত হল"। দেখা যাচ্ছে এই মেলা প্রসঙ্গে বিপিন চন্দ্র পাল তাঁর Young India-তে টিপ্পনী করলেন, "As necessity is the mother of invention, Sarala Devi is the mother of Pratapaditya to meet the necessity of a hero for Bengali!"

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ১৯০৪ সালে ঘোর জাতীয়তাবাদী এই অগ্নিকন্যা বিপ্লবী যতীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার প্রথম গুপ্ত বিপ্লবী দল গঠনে সহায়তা করেন এবং স্বদেশী আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁতবস্ত্র প্রচার ও লক্ষ্মীর ভান্ডার স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে তাঁর প্রচেষ্টাতেই ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভারত স্ত্রী মহামন্ডল’। কলকাতায় এর আগেই, ১৯৩০ সালে, তিনি অনুরূপ একটি প্রতিষ্ঠান ‘ভারত স্ত্রীশিক্ষা সদন’ গড়ে তোলেন ও বাঙালি মহিলাদের মধ্যে তরবারি চালনা, লাঠি খেলা ইত্যাদি প্রচলিত করেন। আমরা দেখতে পাই যে বাংলার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সূত্রটি সেই হিন্দুমেলা থেকে শুরু হয়ে লাগাতার প্রভাব বিস্তার করে গেছে এবং বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার প্রভাব অনস্বীকার্য।

এখন প্রশ্ন হলো আজ এই হিন্দু মেলা বা পরবর্তীকালের প্রতাপাদিত্য উৎসবকে পুনরুজ্জীবিত করার কোনো প্রয়োজন আছে কিনা। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু বঙ্গবাসীকে তার হিন্দু ঐতিহ্য ভুলিয়ে দেওয়ার সুপরিকল্পিত প্রয়াস ঘটেছে, ফলে আজ তার ভাষা, কৃষ্টি, মেধা এবং সংস্কৃতি বিপন্ন। যে জাতি তার নিজের ইতিহাস ভুলে যায়, সেই অভাগা জাতির কোনো ভবিষ্যত থাকতে পারেনা। বরং তার বৌদ্ধিক শিরদাঁড়া ক্ষয়ে যেতে যেতে একসময়ে অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। আমরা আজ ইতিহাসের সেই সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি যখন বাঙালি জাতিতত্বের ভিত্তি কি, তার পর্য্যালোচনা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বাঙালির ভাষা, বাঙালির ভাষ্য, বাঙালির আচার-ব্যবহার এমনকি বাঙালির রাজনৈতিক চেতনায় পর্য্যন্ত বিজাতীয় তত্ত্ব আমদানি করা হয়েছে এবং বাঙালি বিশ্বজনীন হতে গিয়ে ক্রমশঃ আত্মবিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে। 

আজ প্রয়োজন বাঙালির শিকড়ে ফিরে যাওয়া এবং অনেকেই তা চাইছেন। হিন্দু বঙ্গনিবাসী যেদিন তার আত্মবিস্মৃতি কাটিয়ে উঠে বাংলার পূর্ব গৌরবগাথা সম্পর্কে অবহিত হবেন, সেদিন আবার ভারতের প্রমুখ প্রবুদ্ধ এবং আর্থিক শক্তি হিসেবে এই জাতির পুনরুত্থান ঘটবে। সাথে সাথে এ প্রশ্নও উঠছে যে জাতীয়তাবাদ আর রাষ্ট্রবাদের মধ্যে সংস্কৃতিকেন্দ্রিকতা কোন অবধারণায় বেশি প্রাসঙ্গিক আর সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র্ববাদের সাথে হিন্দুত্বের (Hinduness) ঐতিহাসিক এবং ব্যবহারিক - দুটি সম্পর্কই সুদৃঢ় না থাকলে, হিন্দুসংস্কৃতি তথা সভ্যতার স্থায়িত্ব ও ক্রমবিকাশ কিভাবে সম্ভব? যেভাবে হিন্দু সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনে হচ্ছে আজ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ব সুরক্ষিত না থাকলে আগামীদিনে পৃথিবীতে বহুত্ববাদ ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের অস্তিত্ব থাকবে কি? বঙ্গবাসী যদি তার জাতিসত্তাকে পুনরাবিষ্কার না করতে পারে, নিশ্চিতরূপে তাতে এক সভ্যতার সংকট সৃষ্টি হবে। সবদিক দিয়ে ভেবে দেখলে, বাঙালির এখন তার নিজস্ব আত্মগরিমার উৎসে ফিরে যাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। একমাত্র হিন্দুমেলার মতন উদ্যোগই আয়না হয়ে বঙ্গনিবাসী হিন্দুর সামনে তার প্রকৃত পরিচয়টুকু তুলে ধরতে পারে। তারপর বৃহত্তর সমাজ কিভাবে সেই পরিদৃশ্যকে ব্যবহার করবে সেটা নাহয় বাংলার আত্মসচেতন নাগরিকদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাক।

No comments:

Post a Comment