আজ ১লা মে, রামকৃষ্ণ মিশনের শুভ প্রতিষ্ঠা দিবস। এই উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব মহাসমাধিতে প্রবেশ করলেন ১৬ই অগাস্ট ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে, তাঁর অধিকাংশ সন্তানরা সংসার ত্যাগ করে ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে বরানগরে টাকির জমিদারদের একটি জরাজীর্ণ বাগান বাড়ি ভাড়া করে একসাথে থাকতে শুরু করলেন।
কয়েকমাস পর বাবুরাম মহারাজ অর্থাৎ স্বামী প্রেমানন্দজীর মায়ের আমন্ত্রণে তাঁর আঁটপুরের পৈতৃকভিটায় তাঁরা নয়জন গুরুভাই বেড়াতে গেলেন এবং সেখানে ২৪শে ডিসেম্বর ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের রাতে স্বামী বিবেকানন্দজীর প্রেরণায় সবাই একসাথে সন্ন্যাসদীক্ষা নিলেন।
স্বামীজী বরানগর মঠ থেকে প্রবজ্যায় বেরিয়ে গেলেন ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে আর তারপর ধীরে ধীরে একমাত্র ঠাকুরের নিত্যপূজার পূজারী স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজী ছাড়া বাকি পার্ষদরাও যে যার মতন এক এক করে বেরিয়ে পড়লেন প্রবজ্যায়, তবে সবাই মাঝেমধ্যে মঠে আসতেন - যেতেন।
১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে মঠ স্থানান্তরিত হলো আলমবাজারের এক কুখ্যাত ভুতুড়ে বাড়িতে। স্বামী অভেদানন্দজী তপস্যা শেষ করে সেই বছরই মঠের নতুন ঠিকানায় ফিরে এলেন আর ১৮৯২-৯৪ একটানা দুবছর সেই মঠবাড়িতে কাটিয়ে গেলেন ১৮৯১ সালে পোর্বন্দরে স্বামীজীর সাথে হটাৎ দেখা হয়ে যাওয়া স্বামী ত্রিগুনাতীতানন্দজীও।
তারপর ৩১শে মে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে স্বামীজী বোম্বে থেকে জাহাজে শিকাগোর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন আর পাশ্চাত্যজয় করে দক্ষিণ ভারত কাঁপিয়ে কলকাতায় ফিরলেন চার বছর পর ১৯শে ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে বা হয়তো কিছু আগে-পরে স্বামী ব্রহ্মানন্দজী সহ মোটামুটি ঠাকুরের অন্য সব সন্ন্যাসী সন্তানেরাও নিজেদের প্রবজ্যা সেরে মঠে ফিরে এসেছিলেন।
অবশেষে ১লা মে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুরের সন্ন্যাসী ও অন্তরঙ্গ গৃহী শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতার বাগবাজারে, ৭নং গিরিশ এভিনিউস্থিত শ্রী বলরাম বসুর বাসভবনে স্বামীজী প্রতিষ্ঠা করলেন রামকৃষ্ণ মিশন, আজ যার ১২৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে।
প্রাথমিক উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট : to spread the teachings of Vedanta as embodied in the life of Sri Ramakrishna and to improve the social conditions of the Indian people, অর্থাৎ শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে প্রতিভাত বৈদান্তিক ভাবধারার প্রচার এবং ভারতের দরিদ্রনারায়ণের সামাজিক উত্থান। অবশ্যই এর বিশ্বজনীন উদ্দেশ্যও আছে, যা মূলতঃ শিবজ্ঞানে জীবসেবা ও ধর্ম সেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ মানুষ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যর ওপর আধারিত, যার কার্যপ্রণালী বলরামবাবুর বাড়িতেই ৫ই মের দ্বিতীয় বৈঠকে স্থিরীকৃত হয় এবং এখনো বলবৎ আছে।
১৮৯৮-৯৯ কালখন্ড জুড়ে বিভিন্ন সময়ে স্বামীজী মিশনের পরিবর্ধিত নিয়মাবলী স্বামী সুবোধানন্দজীকে ডিক্টেশনের মাধ্যমে গোটাটা লিখিয়ে দিয়েছিলেন, যা পরে ৪ঠা মে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সরকারি আইন মোতাবেক পঞ্জিকৃত হয়।
স্বামীজী নিজের হাতে রামকৃষ্ণ মিশনের যে প্রতীক তৈরি করে দিয়েছিলেন, যার নীচে 'तन्नो हंस: प्रचोदयात्' (তন্নো হংসঃ প্রচোদয়াৎ) লিখেছিলেন, তার ব্যাখ্যাও তিনি নিজেই দিয়েছিলেন, “The wavy waters in the picture are symbolic of Karma, the lotus of Bhakti, and the rising-sun of Jnana. The encircling serpent is indicative of Yoga and awakened Kunadalini Shakti, while the swan in the picture stands for Paramatman. Therefore, the ideal of the picture is that by the union of Karma, Jnana, Bhakti and Yoga, the vision of the Paramatman is obtained.” অর্থাৎ তরঙ্গায়িত জল কর্মের প্রতীক, পদ্ম ভক্তির প্রতীক। উদীয়মান সূর্য জ্ঞান, কুণ্ডলিত সর্প যোগ ও কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণের প্রতীক; যেখানে রাজহাঁস হ'লো পরমাত্মার প্রতীক। সুতরাং, ছবিটার সামগ্রিক ভাবনা হ'লো কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি ও যোগের সমন্বয়ের মাধ্যমে পরমাত্মাকে উপলব্ধি করা যায়।
'তন্নো হংসঃ প্রচোদয়াৎ" শব্দবন্ধটি বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় তৎ + নহ্ + হংস + প্রচোদয়াৎ। 'তৎ' মানে তিনি, 'নহ্' মানে আমার, 'হংসঃ' মানে এক্ষেত্রে পরমহংসদেব আর 'প্রচোদয়াৎ' মানে উদ্ভাসিত করুন। অর্থাৎ, হে পরমহংসদেব, আমার হৃদয়কে আপনি উদ্ভাসিত করুন। এর আরো নানান বিস্তারিত শাস্ত্রসম্মত ব্যাখ্যা থাকতে পারে, আমি এটির অর্থ এইভাবেই বুঝি।
No comments:
Post a Comment