Blog Archive

Tuesday, May 3, 2022

অক্ষয়তৃতীয়া

সংশ্লিষ্ট সকল সনাতনীকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক শুভেচ্ছা। এই তিথিতে যা কিছু শুভকর্ম করা হয়, তার ফল হয় অক্ষয় পূণ্যদায়িনী। এই তিথিতে যা জ্ঞান আহরণ করা হয়, তাও অক্ষয় প্রভাব ফেলে বুদ্ধিতে, চিত্তে। আজকের এই বিশেষ দিনে দানের ফলও অক্ষয় হয়। এই তিথিতে পুণ্যতোয়া, পুণ্যসলিলা ভগবতীদেবী গঙ্গা মর্ত্যে অবতরণ করেন। তারপর থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অক্ষয় জলসম্ভার সমেত মর্ত্যবাসীর জীবনদায়িনী তথা পাপনাশিনী নদীরূপে তিনি প্রবাহমানা। তাই আজ অনুশোচনা, প্রায়শ্চিত্ত ও প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে পাপস্খলনের দিনও বটে।

বহুযুগ আগে এই শুভদিনের একটি বিশেষ ঘটনার বিবরণ ভাগবৎ পুরাণে লেখা আছে। 

দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ তখন দ্বারকার অধিনায়ক। বাল্যসখা সুদামা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বৃন্দাবন থেকে সুদূর দ্বারকায় এলেন কিছু অর্থসাহায্য চাইতে। দরিদ্র সুদামা কৃষ্ণের জন্য কাপড়ের পুটুলিতে বেঁধে এনেছিলেন তিনমুঠো চালভাজা। প্রাসাদের দ্বারীরা তো তাঁকে দূরছাই করে তাড়িয়েই দিচ্ছিল কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ জানতে পেরে বন্ধুর জন্য যে রাজাতিথেয়তার আয়োজন করলেন, তাতে মুগ্ধ হয়ে সুদামা আর নিজের দৈন্যাবস্থার কথা মুখ ফুটে বলতেই পারলেন না। এমনকি কৃষ্ণের প্রাসাদে সম্পদের বৈভব দেখে, তাঁর জন্য আনা কাপড়ে বাঁধা সামান্য চালভাজাটুকুও লজ্জায় আর দিতে পারেননি সুদামা। কিন্তু ভক্তবৎসল ভগবান বাসুদের যে ভাবগ্রাহী। তিনি ভাবটুকু গ্রহণ করেন, কেবল ভেট নয়। তাই নিজেই সেই চালভাজা চেয়ে খেয়ে পরম তৃপ্তি প্রকাশ করলেন। আর সুদামা নিজের মুখে কিছু না চাইলেও, বাড়িতে ফিরে দেখেন যে তার ক্ষুদ্র কুঠিরের পরিবর্তে বৃহৎ এক অট্টালিকা দাঁড়িয়ে আছে! ভগবান অযাচিত করুণাভরে সবকিছু সাজিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁর একান্ত প্রিয় সখা তথা ভক্তপ্রবর সুদামাকে। এই লীলার দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে, ভক্তের চাওয়ার অপেক্ষা করেন না ভগবান। অহৈতুকী অযাচিত কৃপা তিনি নিজে থেকেই করেন তাঁর ভক্তের প্রতি। 

যিনি সকল গুনের আকর, তাঁর মতো সুহৃদ, তাঁর মতো ভক্তবৎসল পরমবান্ধব আর কে কোথায় আছেন? তাঁর কাছে ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করলে তিনি ভক্তের মনোবাঞ্চা সবসময়ই পূর্ণ করেন। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণও আছে। সবাই জানেন যে কৌরব রাজসভায় রথী-মহারথীদের সামনে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের করুণায় সে চেষ্টা সফল হয়নি। পাঞ্চালীর কাতর প্রার্থনা শুনে তাঁর লজ্জা নিবারণ করেছিলেন বাসুদেব। সেই দিনটিও ছিল অক্ষয় তৃতীয়া। আজ ভগবৎকৃপা প্রার্থনা করার অন্যতম উৎকৃষ্ট সেই দিন, যার আধ্যাত্মিক প্রসাদলাভ জন্মজন্মান্তর ধরে অক্ষয় হয়।

No comments:

Post a Comment