একটা কথা জেনে রাখবেন: যে মন্দিরে একবার দিব্যশক্তির প্রকাশ ঘটেছে, তার গর্ভগৃহ থেকে উৎপন্ন শক্তিপুঞ্জ যুগ যুগ ধরে আধ্যাত্মিক বিচ্ছুরণ ঘটাতে থাকে। সামান্য দুশো পাঁচশো হাজার বছরের ব্যবধানে কল্যাণকারী দৈবী প্রভা বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ন হয়না, তা সে মন্দির বাস্তবে থাকুক বা ধ্বংস হয়ে যাক, তাতে নিত্যপূজা হোক বা নাই হোক।
একটি বিশেষরূপে চিহ্নিত ক্ষেত্র একবার যখন মন্দির হিসেবে গড়ে ওঠে এবং তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠাকৃত হয়ে অথবা স্বয়ম্ভু অবস্থায় দেবতা কিছুদিন নিবাস করেন তখন স্থানমাহাত্মবলে সেই ক্ষেত্রটি চিরদিন মন্দিরই থাকে, আর সুপ্ত অথবা জাগ্রত অবস্থায় দেবতার প্রসাদও সেখানে অবিকৃতই থাকে। কার হাতে কখন তিনি কিভাবে পূজিত হবেন, সেটা অবশ্য তাঁর ইচ্ছা।
আমি নিজেই কতবার কত তীর্থে যাওয়ার সবরকম বন্দোবস্ত করেও শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি কারণ তিনি হয়তো তখন আমার পূজা নিতে চাননি, চেয়েছিলেন আরো প্রস্তুত হয়ে আসি। সাধারণের ক্ষেত্রে মন্দিরে প্রবেশের বিষয়টিও ঠিক তাই। তিনি রুষ্ট হয়েছিলেন, তাই তাঁর দরবারে প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছিলেন। আবার তিনিই হয়তো কৃপাবশতঃ নতুন করে প্রবেশাধিকার দিচ্ছেন, তাই এতসব কিছু হচ্ছে।
একমাত্র দেবতার নিজের ইচ্ছা ছাড়া কেউই তাঁর দর্শন পায়না, হাজার চেষ্টা করলেও নয়। হয়তো আবার সঠিক সময় এসেছে তাই তিনিই আবার পূর্বাবস্থায় প্রকাশিত হতে চাইছেন, কে জানে! তবে এই দর্শন আর অদর্শন সবটাই হলো প্রারব্ধজনিত, মানুষকে এবং সমাজকে তার কর্মফল ভুগতেই হয়। দেবতা যখন স্বয়ং অবতাররূপে শরীরধারণ করেন, তাঁকে পর্য্যন্ত শিষ্যদের কর্মফলের দায় নিয়ে কষ্ট ভুগতে হয়।
দেবতার বিচারপদ্ধতি কেমন তা শ্রীকৃষ্ণ নিজেই দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। পাণ্ডবরা বনবাস আর অজ্ঞাতবাস সেরে ১৩ বছর বাদে যখন ফিরে এলেন, তখন তাঁরা ইন্দ্রপ্রস্থ ফেরত চাইলেন কিন্তু কৌরবরা সটান না করে দিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ গিয়ে ওঁদের জন্য পাঁচটি মাত্র গ্রাম চেয়েছিলেন, তাও আবার রাজ্যের উপান্তে, সেটাও তাঁরা দিতে রাজি হলেন না, উল্টে শ্রীকৃষ্ণকেই গ্রেফতার করার চেষ্টা করলেন। আখেরে কি হলো সেটা সবারই জানা - চিরকালের জন্য গোটা রাজ্যটাই কৌরবদের হাতছাড়া হয়ে গেল আর যাঁদের প্রাপ্য তাঁরাই তা ফিরে পেলেন।
No comments:
Post a Comment