অনেকদিন মায়ের বাড়ি যাওয়া হয়নি, আগামীকাল যাবো। শেষ যেবার গিয়েছিলাম, সেবার এমন এক সঙ্গী ছিলেন যাঁর নিজের বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল প্রবল, ফলে যতক্ষণ মায়ের কাছে থাকার ইচ্ছে ছিল থাকতে পারিনি, কোনোমতে কামারপুকুরে মাথাটা ঠেকিয়েই কলকাতায় ফিরে আসতে হয়েছিল।
যাইহোক, এবার মায়ের অশেষ কৃপায় আবার তিন রাত্তির তাঁর বাড়িতে থাকবো, এর আগের তিন রাত্তির থাকার স্মৃতি এখনো মানসে বাস্তবের মতন উজ্জ্বল। মাতৃমন্দিরের প্রতিটি খাঁজখোঁজ আমার জানা, চোখ বন্ধ করে ভাবলেই এই গোটা মহাতীর্থক্ষেত্রের আনাচকানাচ আমি যেন স্পষ্ট সিনেমার মতন দেখতে পাই।
যখনই আমার মন খারাপ হয় আমি মনে মনে মায়ের বাড়ি চলে যাই, মায়ের সামনে গিয়ে বসি, শান্তি পাই। গতবার যখন গিয়েছিলাম তখন মন্দিরের বাইরে টেন্ট লাগেনি, গর্ভমন্দির কাঁচ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়নি, প্রসাদের হলটা অত বড় হয়নি, হলের মাথায় সোলার ইউনিট লাগেনি ইত্যাদি, যদিও মহারাজের দৌলতে যথাসময়ে সব খবরই পেয়েছি। এবার সব নতুন করে দেখেশুনে মেন্টাল ম্যাপটা একবার রিনিউ করে নিতে হবে।
মায়ের আদেশ হলো শেষ কথা। মা যখন যা করতে বলবেন করতেই হবে, সেখানে ব্যক্তিগত ইগো ফিগোর কোনো স্থান নেই। মা তো আর সরাসরি কিছু বলেন না, কোনো না কোনো মহারাজের মাধ্যমে আদেশ পাঠান। সেই আদেশ লঙ্ঘন করার সাধ্য আমার নেই। হয়তো সবসময় সফল হইনা, হয়তো অপারগ জেনেও মা কেবল পরীক্ষা করার জন্যই কাজ দেন, কিন্তু মা যে আমায় মনে করে তাঁর অমুক কাজটা করতে বলেছেন, সেই feelingটার মতন exhilarating আর কিই বা আছে!
তার জন্য যদি আমায় কারো হাতে-পায়ে ধরতে হয় এখনো ধরি, ভবিষ্যতেও ধরবো, কারণ কাজটা মায়ের। আমার কোনো স্বতন্ত্র identity নেই, মা যেমন চালান তেমনিই চলি। যার মানই নেই তার আবার অপমানের ভয় কিসের? গিন্নি ভয় পাচ্ছেন রাস্তায় এবং বিষ্ণুপুরের এই প্রচন্ড দাবদাহে এসি ছাড়া রোদ্দুরে আমার হয়তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে। আমি নিশ্চিত মা আগলে রাখবেন, কোনো সমস্যাই হবে না।
অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে আগামী ২৩শে এপ্রিল মাতৃমন্দির স্থাপনার শতবর্ষ উজ্জাপন হবে, সেই উপলক্ষে ২২ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্য্যন্ত টানা celebration, বিশেষ পূজা ইত্যাদির সাথে প্রভাতফেরি, তিনদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রচুর ভক্তসমাগম হবে। মা যে আমাকে তাঁর এই ঐতিহাসিক কাজে কাঠবেড়ালি হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, তাতেই আমি ধন্য।
১০০ বছর আগে যেদিন পরম পূজ্যপাদ শরৎ মহারাজ জগৎজননীর জন্মস্থানের ওপর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে মাকে উৎসর্গ করেছিলেন, সেদিন আমি অন্য শরীরে ওখানে উপস্থিত ছিলাম কিনা জানিনা। কিন্তু এবার, ১০০ বছর পর, এই বিশেষ দিনটিতে যে ওখানে উপস্থিত থেকে ভোরে মায়ের মঙ্গলারতি দর্শন করতে পারবো, এ নিশ্চয় পূর্বজন্মের কোনো বিশেষ সুকৃতির ফল।
যেহেতু জয়রামবাটি বা কামারপুকুর যাওয়ার জন্য এখনো পর্য্যন্ত না আছে ট্রেনলাইন, না আছে এসি বাস, তাই হওড়া থেকে সকাল ৭.২৫এর গোঘাট লোকাল ধরবো, সেখান থেকে হয় শেয়ারের ট্যাক্সি বা টোটো করে মায়ের বাড়িতে পৌঁছব। এতক্ষনে নিশ্চয় গোটা আশ্রম প্রাঙ্গণ আলোয় আলোয় সেজে উঠেছে, যেই সুয্যি ডুববেন অমনি স্বপ্নপুরীর মতন মায়ের বাড়ি ঘর মন্দির সব জ্বলজ্বল করে উঠবে। আর তর সইছে না কাল ভোরের অপেক্ষায়।
জয় মা জয় মা জয় মা।
No comments:
Post a Comment