Wednesday, April 26, 2023

মায়ের বাড়ি - মাতৃমন্দির চত্বর

মায়ের গ্রাম জয়রামবাটি থেকে শরীরটা ফিরে আসলো বটে কিন্তু মন এখনো ঐখানেই ঘোরাঘুরি করছে। এখনো আমি চোখের সামনে গোটা মাতৃমন্দির চত্বরটি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি - ঢোকার আগে প্রথমেই ডানহাতে ভানুপিসীর বাড়ি, তারপর মায়ের বৈঠকখানার জগদ্ধাত্রীপূজার বারান্দা, মায়ের নতুন বাড়িতে প্রবেশের দরজা, ভেতরে মায়ের নতুন বাড়ি, দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, সামনের দাওয়া, পেছনদিকে মায়ের ভাইজিদের থাকার ঘরগুলো, বেরিয়ে এসে ডানদিকে মাতৃমন্দিরের বড় মেন গেট, ঢুকে বাঁ দিকে ফুলের বাগানের ধারে প্রথমে ছোট অডিটোরিয়াম, তারপর মায়ের পুরানো বাড়ি। তার পেছনদিকের গ্রিলের গেট দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে মায়ের শোয়ার ঘর আর ভাঁড়ার, ডানদিকে দিদিমার বাড়ি, সামনে মায়ের রান্নাঘর, সোজাসুজি সদর দরজা, বাঁ দিকে বৈঠকখানা, তার পেছনে পাগলীমামীর ঘর। তারপর ওই পেছনদিকের গেট দিয়েই বেরিয়ে বাঁহাতে ছোট একটা লনের পর অফিসবাড়ি, সামনে স্বামীজীর মূর্তি, তার সামনে মন্দিরের পাশের লন। আগে যেখানে একটা বাঁধানো চাতাল ছিল সেখানে, মন্দিরের ঠিক পেছনে, নতুন বেসমেন্ট ও ভোগের রান্নাঘর কন্সট্রাকশন হচ্ছে আর তার সামনেই মায়ের সেই জগৎবিখ্যাত মন্দির, পাশে টেম্পোরারি শেড যেখানে পূজার ভাঁড়ার ও মায়ের পূজার প্রস্তুতি এবং ভোগ রাঁধা হয়। মন্দিরের সামনের রাস্তা, রাস্তার পাশে মায়ের পরিবারের গৃহদেবতাদের খড়ে ছাওয়া ঘর, তারপর ডান পাড়ে পূণ্যপুকুর, পেছনদিকে পরপর গেস্টহাউসগুলো, সেসব পেরিয়ে বাঁ দিকে খাওয়ার হলগুলো আর ডানদিকে সার দিয়ে হাতধোয়ার কল, তারপর পেছনের মাঠের গেট, তারপর গোয়াল আর তার পেছনে কর্মীদের লিভিং কোয়াটার্স। পূণ্যপুকুরের গা ঘেঁষে যে রাস্তাটি গাড়ি ঢোকার গেটের দিকে এগিয়ে গেছে, সেটি গেস্টহাউস শেষ করে একটি থানাকে বাঁ দিকে রেখে অর্ধচন্দ্রকার হয়ে আবার মেন গেটের সামনে এসে মিশেছে। এদিকে ভেতরে, যেখানে বেসমেন্ট তৈরি হচ্ছে, তার পেছনে তিনটি আলাদা আলাদা সাধুনিবাস, তার মাঝখানে, একটু পিছিয়ে, পায়রাঘর। গোলাপের বাগান পেরিয়ে অফিসের পেছনের বাঁ দিকের দুটি মুখোমুখি সাধুনিবাসের পর সেই পুকুর যেখানে মা স্নান করতেন আর যেখান থেকে কলসি কাঁখে খাবার জল তুলে আনতেন, সেটির বেড়া - পুকুরটি এখনো মঠের আয়ত্তের মধ্যে নেই। ডাইনিং হলের পেছনে সাধু নিবাসের খিড়কি দরজা অবধি একটা ঘেরা জায়গা, মঠের গাভীদের বিচরণভূমি আর ডাইনিং হলের এপাশে, অর্থাৎ নির্মিয়মান বেসমেন্টের দিকটায় পরপর শ্রীসারদা সদাব্রতের ঘরগুলো, খাবার পরিবেশনের প্রস্তুতিকক্ষ, ভান্ডারী মহারাজের টেম্পোরারি ঘর আর রান্না করার ঢাকা জায়গা। অনেকেই হয়তো জানেন না যে এখন যেখানে মায়ের মন্দির, যার গর্ভগৃহ সেই দৈবস্থানে যেখানে মা ভূমিষ্ট হন, সেটি মায়ের বাবার বাড়িরই অংশ ছিল এবং এই বাড়িতেই ঠাকুরের সাথে মায়ের বিবাহ হয় এবং এখানেই তিনি ৯ বছর বয়স অবধি থাকতেন। সেইজন্যই পারিবারিক ঠাকুরঘরটি তখন বসতবাটি লাগোয়া ছিল, এখন বিচ্ছিন্নভাবে একা রয়ে গেছে। পরিবার বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন যেখানে অফিসবাড়ি, সেইখানে মায়ের বাবা নতুন বাড়ি তৈরি করে উঠে যান। সে বাড়িতেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় যাকে আমরা মায়ের পুরানো বাড়ি বলি, সেই ঘরগুলো আরো পরে তৈরি করা হয়। এগুলো যেহেতু সবচেয়ে নতুন এবং ১৯১৬ পর্য্যন্ত এখানেই যেহেতু মা স্বয়ং এবং পরবর্তীতে তাঁর এক ভাইয়ের পরিবারবর্গ বাস করতেন, ফলে সৌভাগ্যবশত এগুলি অক্ষুন্ন থেকে গেছে, ঠাকুরঘর ছাড়া বাকি আগের অব্যবহৃত মাটির বাড়িগুলি কালের নিয়মে মাটিতেই মিশে গেছে। ফলে জয়রামবাটির মাতৃমন্দির কেবল মায়ের জন্মস্থানই নয়, মায়ের বিবাহমণ্ডপ এবং বাসস্থানও বটে। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে মা এখনো ওখানে বসে প্রতিদিন পূজা গ্রহণ করেন এবং আমাদের মনের কথা শোনেন। অমন ভরসার জায়গা কি আর ভূভারতে আছে রে দাদা?

No comments:

Post a Comment