Saturday, January 20, 2024

বিভীষণ

বিভীষণ - বিশেষরূপে ভীষণ - কার জন্য? প্রজাপতি ব্রহ্মার বরে বিভীষণ অমর, ফলে যুদ্ধারোপিত মৃত্যুভয়ে তো আর তিনি রামের পক্ষ অবলম্বন করেননি, রাজ্যলাভের লোভেও নয় কারণ তিনি যে জন্মাবধি ধর্মাত্মা, তাঁর জন্মের সময় দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করেছিলেন (তস্মিন্ জাতে মহাসত্ত্বে পুষ্পবর্ষং পপাত হ - উত্তরকান্ড ৯/৩৬)। রাবণের ভয়ঙ্কর ক্রোধ এবং তাঁর চাটুকার সভাসদদের অবজ্ঞার মুখেও আমরা কিন্তু বিভীষণকে অটল দেখি - যিনি অবলীলায় রাবণের মুখের ওপর "রাজার পাপেই রাজ্য নষ্ট হয়" বলে দিতে পারেন, তাঁর বুক কাঁপে না। 

বিভীষণ সম্পর্কে তাঁর অন্যান্য ভাইবোনদের কি মহৎ ধারণা সেটা আমরা সূর্পনখার কথাতেই দেখতে পাই - "বিভীষণস্তু ধর্মাত্মা ন তু রাক্ষসচেষ্টিতঃ" - রাক্ষসকুলে একমাত্র বিভীষণই ধর্মনিষ্ঠ (অরণ্যকান্ড ১৭/২৩)। তাহলে মোদ্দা কথা এই যে ঠোঁটকাটা তপঃক্লিষ্ট ধর্মনিষ্ঠ নির্ভীক বিবেকবান ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত অমর বিভীষণকে সবচেয়ে বেশি ভয় কে পেতেন? রাবণ নিজে। আসলে বিভীষণ রাবণের কাছে বিশেষরূপে ভীষণ বা ভয়ঙ্কর বিভীষিকা ছিলেন কারণ দুর্যধনের মতোই রাবণও জানতেন যে তিনি অধার্মিক। 

সেই বিভীষণকে বাঙালি কি বলতে শিখেছে? 'ঘরশত্রু'। ঠিক যেমন দেশের জন্য নিজের প্রাণ হেলায় বলিদান দেওয়া হুতাত্মা বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে বাঙালি 'বার খাওয়া ক্ষুদিরাম' বলে অপমান করে। আজ যখন অযোধ্যাধামে শ্রীরামচন্দ্র স্বমহিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন তখন বাঙালি তার মানসিক দৈন্য ঝেড়ে ফেলে আবার ধর্মপথে ফিরে যাবে কিনা সেটা বাঙালিকেই ঠিক করতে হবে। অনেক তো নষ্টামী হলো, এবার রাবণ অনুরাগ ত্যাগ করে শাশ্বতকে মানক বলে মেনে নিলে ভালো হয়না?

No comments:

Post a Comment