Saturday, February 18, 2023

বরিষা রামকৃষ্ণ মিশন

গতকাল বরিষার শ্রীরামকৃষ্ণ মঠে গিয়েছিলাম মায়ের একখানি ছবি সংগ্রহ করতে। এই প্রথম গেলাম। ছোটছেলে আজ ব্যাঙ্গালোর চলে গেল। ওখানে ওর ডেস্কের ওপর মা থাকবেন, মায়ের দৃষ্টির বাইরে যেন ও কখনো না যায়। যাইহোক, অধ্যক্ষ মহারাজকে প্রণাম করতেই তিনি পাকড়াও করে অফিস ঘরে নিয়ে গেলেন, উদ্দেশ্য আলাপ করা। আমি ওনার টেবিলের ওপর মায়ের ছবিটি রেখে বেশ খানিকক্ষণ উল্টোদিকের চেয়ারে বসেছিলাম। কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে ভক্তরা আসছেন, স্বেচ্ছাসেবকরা আসছেন, কর্মচারীরা আসছেন, অন্যান্য ভিসিটররা আসছেন, ল্যান্ডলাইন এবং মোবাইলে নানান ফোনও আসছে, মহারাজ দক্ষ হাতে সবটাই সামলাচ্ছেন। তারই মাঝে আমায় জিজ্ঞেস করলেন, "ছেলের সাথে মায়ের পরিচয় আছে?", তারপর দুজনেই হেসে ফেললাম।

ওখানে মঠপ্রাঙ্গণে মিশনের একটি বৃদ্ধাশ্রম আছে, দেখলাম সেখানকার একজন বৃদ্ধ আবাসিক এসে মহারাজকে ফয়েলটি দিয়ে তাঁর প্রয়োজনীয় ওষুধের কথা বললেন। মহারাজ খুব সহমর্মিতার সাথে তাঁকে আশ্বস্ত করলেন যে আনিয়ে দেবেন। কিছুক্ষণ পর একটা ফর্দ নিয়ে একজন স্বেচ্ছাসেবক এলেন, বুঝলাম আবাসিকদের ওষুধের লিস্ট, কিনতে যাবেন, তাই টাকা নিতে এসেছেন। আগেই দেখেছিলাম মহারাজ একটি কাঠের চেয়ারে বসেন আর তার backrest থেকে একটি বহুব্যবহৃত কাপড়ের ঝোলা ঝুলছে, যিনিই প্রণাম করে সাধুসেবার জন্য দক্ষিণা দিতে যান, মহারাজ তাঁকেই আঙ্গুল দিয়ে ওই মুখখোলা ঝোলাটি দেখিয়ে দেন। আমার পাশে আরো দুজন বসেছিলেন, আমরাও সবাই প্রণাম করে ওতেই প্রনামি দিয়েছিলাম। 

যাইহোক, মহারাজ যেই ওই স্বেচ্ছাসেবককে সেই বৃদ্ধের ওষুধটিকে ওনার লিস্টে যোগ করতে বলেছেন অমনি তিনি একেবারে রে রে করে উঠলেন, "আরে ওর ঘরে খুঁজে দেখুন বান্ডিল বান্ডিল ওষুধ পাবেন, উনি নেন আর ভুলে যান"। দেখলাম মহারাজ স্মিত মুখে পেছন ফিরে ঝোলাটা টেনে তুললেন, তারপর টেবিলের কাঁচের ওপর ঝাড়লেন, টং টং শব্দ করে কিছু কয়েন সহ দশ, কুড়ি, পঞ্চাশ, একশ, দুশ আর একআধটা পাঁচশ টাকার নোট ঝরে পড়লো। দুহাত দিয়ে সব কিছু একসাথে কুড়িয়ে অঞ্জলি ভরে উনি ওই স্বেচ্ছাসেবকের হাতে তুলে দিয়ে গুণে দেখতে বললেন। 

একদিকে ভদ্রলোক টাকা গুনছেন আর অন্যদিকে মহারাজ লিস্ট দেখে ওই বৃদ্ধের ওষুধটি যোগ করে মোট ওষুধের জন্য কত লাগবে তার হিসাব কষছেন, আমরা চুপচাপ বসে বসে দেখছি। এদিকে মহারাজের হিসেব শেষ, ওদিকে টাকা গোনাও শেষ। মহারাজ মুখ তুলে বললেন "মোটামুটি ১৬০০ টাকা মতো লাগবে, কত আছে?" আমরা তিনজনেই পার্সে হাত দিয়েছি, যা কম পরে দিয়ে দেবো - স্বেচ্ছাসেবক বললেন, "কয়েনটয়েন মিলিয়ে exactly ১৬০০ই"। মহারাজ স্মিত হেসে একবার ওনার মুখের দিকে তাকালেন, তারপর খুব ধীরে ধীরে নিম্নস্বরে বললেন, "-- বাবু, স্বামীজী বলেছিলেন আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ, ওই চ টি ভুলে গেলে কি চলে?" মহারাজের নামটি আমার জিজ্ঞেস করা হয়নি। আবার যাবো, তখন জেনে নেব। বললেন তিন বছর আট মাস হলো উনি বরিষা মঠে এসেছেন, তার আগে সম্ভবত শিশুমঙ্গলে দীর্ঘদিন posted ছিলেন। ইস্কুলের উইনিফর্ম পরলে যেমন বাচ্চাদের আলাদা করে চেনা যায়না তেমনি গেরুয়া পরা সন্ন্যাসীদের চেনাও ভীষণ কঠিন। তবু কেন যেন বড্ড চেনা চেনা লাগলো।

No comments:

Post a Comment