Sunday, February 5, 2023

পারভেজ

লোকটা মুহাজির ছিল। ওর বাপ ঠাকুর্দা চোদ্দপুরুষ দিল্লির বাসিন্দা তো ছিলেনই, নিজেও এমন দুর্ভাগা, যে কয়েকবছর পর পাকিস্তানে না জন্মে নিজেও স্বাধীনতার আগেই দিল্লির চাঁদনী চকে জন্মেছিল। তারপর মাত্র চার বছর বয়সে পরিবারের সাথে স্বপ্নের দেশ পাকিস্তানে চলে তো গেল কিন্তু পরবর্তীকালে দেশের সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতিত্বের আড়ালে ডিক্টেটর হওয়া স্বত্তেও, মারা যাওয়ার পর সেই দেশের রাজধানীতে কয়েকহাত মাটিও কপালে জুটলো না তার - কারণ লোকটা মুহাজির ছিল। 

অথচ এই লোকটা নিজেকে ভূমিপুত্রদের চেয়েও বেশি দেশভক্ত পাকিস্তানি প্রমান করার তাগিদে কত কিই না করেছে! নিজের দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যখন পড়শীদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে পাকিস্তানে বসে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে খোশগল্প করছেন, তখন এই লোকটা ফৌজকে আদেশ দিচ্ছে চুপিচুপি কার্গিলের পাহাড়ে চড়, যদি এই ফাঁকে, যখন বাস ডিপ্লোমাসির আবহে কেউ ফৌজি আক্রমণ মোটেও আশা করবে না, তখন কাশ্মীরে ভারতীয় ফৌজকে যদি একটু পিছিয়ে দেওয়া যায়! 

অন্যভাবেও নিজের জন্মভূমির চরম ক্ষতি করার কম চেষ্টা করেনি লোকটা, যাতে পাকিস্তানিরা একটু খুশি হয়। এই মুহাজির একসময় বালোচ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কচুকাটা করিয়েছে, পাশতুন এবং অন্যান্য ট্রাইবালদের প্লেন থেকে বম্বিং করে মারিয়েছে, সিন্ধুদেশের কত শান্তিপূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গুমখুন করিয়েছে আর গোরাদের কাছে টেরোরিস্ট বলে তাদের লাশ পেশ করে পুরস্কার হিসেবে কন্টেনার ভরে ভরে ডলার নিয়ে এসে পাকিস্তানি পাঞ্জাবীদের খাইয়ে পরিয়ে মোটা হাতি করেছে, তার ইয়ত্তা নেই। একটা সময় লোকটা আমেরিকাকে চমকাতো, আমেরিকা হুমকি দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারতো না - আখেরে সেই টাকার বস্তা, অস্ত্র, নানারকমের সুবিধা ইত্যাদি ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে তবে রেহাই পেত। 

এই লুটের বেশিরভাগটাই ফৌজের জন্য বরাদ্দ ছিল, বাকিটা পাঞ্জাবের জন্য। আজ সেই ফৌজ, সেই পাঞ্জাবীদের ফৌজ, লোকটাকে একটা শেষ সালাম পর্য্যন্ত ঠুকতে রাজি নয় - কারণ লোকটা মুহাজির ছিল। এটাই যদি আগে বুঝতেন কত্তা, আজ দুবাইয়ে মরতেও হতো না, করাচীতে কবরে যেতেও হতো না। নিজের মাটি নিজেরই মাটি হয়, বাকিদের কাছে ওই মুহাজির হয়েই থেকে যেতে হয় চিরকাল। লোকটার ধক ছিল, একথা মানতেই হবে। নিজের মাটিতে থাকলে বটবৃক্ষ হয়ে উঠতে পারতো, দুর্ভাগ্য যে ওদের পাল্লায় পড়ে বিষবৃক্ষ হয়ে রয়ে গেল।

No comments:

Post a Comment