যে কোনো সংসারী মানুষ দৈনন্দিন জীবনে achievement আর engagement শব্দ দুটির দ্যোতনা সঠিকভাবে যেদিন অনুধাবন করতে পারবেন, সেইদিনই তাঁর thought process-এ সর্বাঙ্গীন পরিবর্তন আসতে বাধ্য। কিন্তু আজকের এই cut throat দুনিয়ায় সেই রাস্তা শুরু থেকেই বন্ধ করে রাখা হয়। এখন আমাদের অধিকাংশকেই ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় you got to be an achiever, তাতে আখেরে শরীর এবং মনের যে কি দৈন্যদশা হবে সেটা নিজেরা ভুক্তভোগী হিসেবে বড়রা খুব ভালো করেই জানেন অথচ ইঁদুর দৌড়ের করুণ পরিণতির হুঁশিয়ারী তাঁরা ইচ্ছা করেই আমাদের দেন না, ওটা আমাদের ঠেকে শিখতে হয়।
দৌড়োতে দৌড়োতে একসময় হাই স্ট্রেস, হাই এংক্সাইটি, হাই ব্লাড প্রেসার, হাই সুগার, হাই ক্লোরোষ্ট্রল, হাই ইউরিক এসিড - তারপর একদিন বুকে যন্ত্রণা, স্টেন্ট, ওপেন হার্ট সার্জারি, তারপর আবার দৌড়, তারপর একদিন ব্রেন স্ট্রোক, পার্শীয়াল প্যারালাইসিস, কিছুদিন পর সবার অবহেলা, শেষে বলো হরি, হরিবোল। ব্যাস শেষ, achievement-এর খেল খতম। বাড়ি, গাড়ি, সম্মান, প্রতিপত্তি, সামাজিক স্বীকৃতি সব এখানেই পড়ে রইলো, আমি যে আসলে কে, আমার আসল কর্তব্য যে কি ছিল, কিছুই বুঝলাম না, পঞ্চভূতে মিশে গেলাম।
পরের জন্মে হয়তো আমারই বানানো বাড়িতে, আমারই কেনা দামি দামি ফার্নিচার আমারই ছেলেমেয়েরা কাবাড়ি ডেকে জলের দরে বিক্রি করে দিচ্ছে আর আমিই হয়তো সেই কাবাড়ির শরীর নিয়ে তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত দর কষাকষি করছি - এখন দুপয়সা বেশি কামাতে পারলে সেটাই আমার এই মুহূর্তের achievement - এই তো অঙ্ক, নাকি অন্য কিছু? আর যাঁরা পুনর্জন্ম মানেন না তাঁদের কঙ্কাল বাক্সবন্ধি হয়ে মাটির নিচে পড়ে থাকবে, কবে পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে last judgement day আসবে, সেই আশায়। মোদ্দা কথা হলো, ঈশ্বর যে কারণে মানুষের শরীর, মানুষের ব্রেন আর সোজা শিরদাঁড়া দিয়েছিলেন, সেটার ঠিকঠাক ব্যবহার কি আমরা করতে পারলাম?
তার মানে কি জাগতিক বিদ্যার প্রয়োজন নেই, জাগতিক জ্ঞান প্রয়োগের প্রয়োজন নেই, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রয়োজন নেই, কাজে পারদর্শিতার প্রয়োজন নেই, সংসার প্রতিপালনের প্রয়োজন নেই, নাকি দেশের ও দশের যাতে উপকার হয় সেরকম কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার প্রয়োজন নেই - সবকিছুরই প্রয়োজন আছে। শরীর যখন আছে তখন শরীরের চাহিদাও আছে আবার মনের চাহিদাও আছে, তাকে না মিটিয়ে উপায় নেই। আমাদের শাস্ত্রেই বলেছে 'ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ', in that order চতুর্বিদ সাধনা পদ্ধতি। কিন্তু এইখানেই নির্লিপ্ততার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাটা সবচেয়ে বেশি, যে শিক্ষাটা আমাদের বড়রা আজকাল আর আমাদের দেন না কারণ তাঁরা নিজেরাই ধর্মহীন, পথভ্রষ্ট।
এখানেই engagement-এর প্রশ্ন আসে। আমি কাজে লেগে থাকবো, অবশ্যই থাকবো। কিন্তু কাজ আমাতে লেগে থাকবে, সেটা হতে দেবো না। Pressure নেবো, অবশ্যই নেবো, কিন্তু সেটা শুধুমাত্র হাতের কাজটিকে আরো সুষ্ঠভাবে করার জন্য, এই ভেবে যে তাতে কোনো না কোনো সময়ে কারো না কারো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকারই হবে। এই ভাব নিয়ে এগোলে কি হয়, 'আমি কিছুই achieve করলাম না, আমার ভেতরে যিনি বসে আছেন, তিনিই পরিস্থতি সৃষ্টি করে আমাকে দিয়ে করিয়ে নিলেন, ফলাফলের ভার বাবা তাঁর জিম্মায়' - এরপর আর কোনো after effect-এর বোঝা ঘাড়ে চেপে থাকেনা। যেহেতু গোটা প্রক্রিয়াতে আমার কোনো stake নেই, ফলে আমার পাওয়ারও কিছু নেই, হারাবারও কিছু নেই, আমি নিমিত্ত মাত্র।
আমার নিজের আসল কাজ হলো নিজের স্বরূপকে খোঁজা। এই জীবনে ওই জায়গাটায় যদি একটুও এগোনো যায়, সেটাই সত্যিকারের achievement কারণ তার ফল জন্মের পর জন্ম ধরে আমার সঙ্গেই থাকবে। বাকি, যা থাকবে না তার জন্য প্রাণপাত করে লাভ কি? ঠাকুর গল্পচ্ছলে শিক্ষা দিচ্ছেন, "ভাঁড়ারে একজন আছে, তখন বাড়ির কর্তাকে যদি কেউ বলে, মহাশয় আপনি এসে জিনিস বার করে দিন। তখন কর্তাটি বলে, ভাঁড়ারে একজন রয়েছে, আমি আর গিয়ে কি করব! যে নিজে কর্তা হয়ে বসেছে তার হৃদয়মধ্যে ঈশ্বর সহজে আসেন না"।
No comments:
Post a Comment