আসলে কারো কারো ওনাকে বুঝতে ভুল হচ্ছে, ফলে একটা মিষ্টি অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়ে কেউ কেউ অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্যও করে ফেলছেন। দোষটা তাঁদের নয়। এতসব কান্ড হচ্ছে, কারণ উনি কোনো conventional 'ism' মেনে চলছেন না - না অর্থনীতিতে, না সমাজনীতিতে, না বিদেশনীতিতে আর না সুরক্ষানীতিতে। ফলে যাঁরা বাঁধাধরা ছকে শ্রী নরেন্দ্র মোদিকে evaluate করতে চাইছেন, তাঁদের সাথে দেশের অধিকাংশ মানুষের perception আর মিলছে না।
আগামী ৬ই জানুয়ারি উনি চতুর্থবার UAE যাচ্ছেন, ২০১৪তে ওনার প্রথমবার যাত্রার আগে শেষবারের মতো ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী আমিরশাহীতে গিয়েছিলেন ৩১ বছর আগে। একদিকে দুনিয়াভরের বাম মিডিয়ার তৈরি করা image - রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রচারক, মুসলিমবিদ্বেষী দাঙ্গাকারীদের সর্দার অর্থাৎ একজন ঘোর অসহিষ্ণু নৃশংস হিন্দুত্ববাদী, আর অন্যদিকে আরব দুনিয়ায় যে আমূল পরিবর্তনের হওয়া বইছে, Abraham Accord এর পেছনে পেছনে হেঁটে তিনিই আজ মক্কা-মদিনার দেশের পরম মিত্র - গোটা আরব দুনিয়া আজ ওনাকে নিজেদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে অলংকৃত করছেন - দুটো ছবি মিলছে কই?
আবার এমন একটি রাজনৈতিক দলের তিনি অবিসংবাদী নেতা যা ওই বামপন্থী মিডিয়া, academic ও বুদ্ধিজীবীদের মতে ঘোর right wing, অর্থাৎ পুঁজিপতিদের দালাল। অথচ জনধন একাউন্ট খোলা থেকে নিয়ে open defecation ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব রুখতে স্বচ্ছতা অভিযান, প্রধানমন্ত্রী আওয়াস যোজনায় সমস্ত গরিবের জন্য পাকা বাড়ি থেকে নিয়ে মুদ্রা যোজনায় গরিব ছোট ব্যবসায়ীকে বিনা collateral রেখে অল্প সুদে loan, করোনাকালে বিনি পয়সায় রেশন থেকে নিয়ে প্রত্যেক কৃষকের ব্যাংক খাতায় বছরে ৬০০০ করে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া, গরিব মহিলাদের অর্থনৈতিক সশক্তিকরণ থেকে নিয়ে তালাক-এ-বিদদতকে আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানিয়ে দেওয়া, প্রত্যেক জেলায় মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা থেকে নিয়ে প্রত্যেক গরিবের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা করে দেওয়া, চতুর্দিকে dedicated freight corridor তৈরি করা যাতে শহরের produce-এর সাথে সাথে গরিব কৃষকের গ্রামীন ফসল এবং অন্যান্য গ্রামীন উৎপাদন সহজে এবং সস্তায় সারা দেশে বাহিত হতে পারে, সারা দেশজুড়ে চওড়া চওড়া highway তৈরি করা, রেলকে বিশ্বস্তরে নিয়ে যাওয়া যাতে সাধারণ মানুষের চলাচলের গতি বাড়ে, বড় এবং মাঝারি শহরে মেট্রো সহ public transport এর খোল-নোলচে বদলে ফেলা, public asset creation আর public utility services তৈরি করাতে স্বাধীনতাযাবৎ সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করা, গরিব শিশুর অপুষ্টি রোধ করা থেকে নিয়ে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, ইত্যাদি ইত্যাদি যা কিছু ওনার সরকারকে করতে দেখা যাচ্ছে - সবকটিই একটি Welfare State-এর আদর্শ মডেল, অর্থাৎ নিখাদ সমাজবাদী মডেল।
অন্যদিকে, সত্যিকারের capitalist হলে তো ওনার আমেরিকার অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধানদের মতন crony capitalistদের বন্ধু হওয়া উচিত ছিল - উনি তাও না। যেভাবে নোটবন্ধি করে direct tax base বহুগুণ বাড়িয়ে নিয়েছেন বা বেনামি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আইন এনেছেন, যেভাবে GST লাগু করে ট্যাক্স ফাঁকি অনেকটা রুখে দিয়েছেন, অথবা bankruptcy আইন এনে ব্যাঙ্ক লুট করার খুড়োর কল বন্ধ করে দিয়েছেন, তাতে ওনার ঠিক ঠিক capitalist হওয়া আর হলো কই, যতই বামপন্থীরা আদানি আম্বানি বলে নাচুন না কেন। আবার রাষ্ট্রের সর্বশক্তি নিয়ে উনি entrepreneurship আর innovation-এর পেছনে ঢালের মতন দাঁড়িয়ে, বেশ কিছু যুদ্ধাস্ত্র তৈরির কারখানা আর এয়ার ইন্ডিয়ার মতন অব্যবস্থার শিকার সরকারি সম্পত্তিকে ব্যক্তি মালিকানায় transfer করে অথবা এয়ারপোর্ট, সিপোর্ট, PPP মডেলে রাস্তা, কিছু ট্রেন ইত্যাদি কর্পোরেট ব্যবসাদারদের হাতে ছেড়ে দিয়ে, efficiency বাড়িয়ে exchequer-এর ওপর বোঝা কমিয়ে একদম ideal ব্যবসায়িক আবহাওয়াও তৈরি করছেন, যা মূলত মার্গারেট থ্যচারকে মনে করিয়ে দেওয়া পুঁজিবাদী মডেল।
বিদেশনীতিতে মুসলমান দেশগুলির সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে নিজের হিন্দু পরিচয়কে জলাঞ্জলি দিতে হবে, সেই ধারণাও উনি ভেঙে দিয়েছেন। নিজের দেশের প্রাচীন ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের মধ্যে ভবিষ্যতের প্রগতির ইন্ধন লুকিয়ে আছে - যে সভ্যতা এই কথা ভুলে গেছে তাদের সভ্যতার অন্তরাত্মার নাশ হয়েছে - তা সে মায়া থেকে ব্যবিলনীয়, মিশরীয় থেকে পারশিক, যেদিকেই তাকানো যাক না কেন। আমাদের দেশও সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছিল - উনি এসে আটকালেন। তাই মা গঙ্গায় ডুব দিয়ে বাবা বিশ্বনাথের মাথায় জলাভিষেক করার মধ্যে কেউ কেউ হয়তো রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু সোমনাথের মন্দিরচত্বরের সংস্কার থেকে নিয়ে কেদারনাথের কায়াকল্প, কাশীর বিশ্বনাথ করিডোর নির্মাণ থেকে নিয়ে অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপূজন - এইসবই কোটি কোটি ভারতীয়দের আস্থার সম্মানসূচক এবং সময়ের দাবি মেনে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার অন্তরাত্মার প্রতীকগুলির বহু প্রতীক্ষিত আধুনিকীকরণও বটে।
কারো বন্ধু হতে গেলে এবং সবার মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে গেলে সবসময় মুখোশ পরে থাকতে হবে, ক্রমাগত ভরাপেটে ইফতারের মতন ভণ্ডামি করে যেতে হবে - এই দুষ্প্রথা ভেঙে উনি শুধু নিজের আস্থা ও সংস্কারের প্রতি নয়, সমস্ত মতের প্রতি নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। ওনার আচার-ব্যবহার, মানসিকতা, confidence ও commitment দেখে সারা পৃথিবী বুঝতে পারছে যে ভারত তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়েছে, ফলে বিশ্বের দরবারে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে। একদিকে unprecedented scale-এ দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে আর অন্যদিকে massive scale-এ infrastructural development-এর সাথে সাথে আধুনিক Central Vista এবং প্রাচীন heritage-এর সংস্কারের মাধ্যমে নতুন ভারতের architectural footprint তৈরি হচ্ছে। সর্বোপরি, আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে আমদানি কমিয়ে Make in India-র দৌলতে নিজস্ব production বহুগুণ বাড়িয়ে রফতানির দিকেও দ্রুতগতিতে দেশের অর্থব্যবস্থা ছুটে চলেছে। নিজের আস্থার প্রতি unwavering আস্তা রেখে এবং কোনো ভনিতা না করেও কিভাবে যে মত-পন্থ-নির্বিশেষে সকলের মঙ্গলের জন্য একের পর এক অত্যাধুনিক AIIMS-এর উদ্বোধন করা যায় বা ২০৩০এ অন্তরীক্ষে space station পাঠানোর নির্ণয় নেওয়া যায়, এটাই অনেকে বুঝে উঠতে পারছেন না কারণ ওঁরা এমনটা যে আগে কখনো দেখেননি।
আসলে এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় কিন্তু তাতে লেখাটা বড্ড বড় হয়ে যাবে, পাঠকের অত সময় নষ্ট করে লাভ নেই। মোদ্দা কথা হলো এটাই সত্যিকারের হিন্দু way of life, সে কারো পছন্দ হোক বা নাই হোক। হিন্দু মানেই tolerent, হিন্দু মানেই maleable আর হিন্দু মানেই সংস্কারিত, শীল, সুজন। আবার হিন্দু মানে পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার ধারক এবং বাহক - শত আঘাতেও যখন হিন্দুর হিন্দুত্বকে শেষ করে দেওয়া যায়নি তখন একথা মানতেই হবে যে হিন্দু অসম্ভব resilient, মানসিকভাবে অসম্ভব শক্তিমান আর মারাত্মক প্রত্যয়ীও বটে। তাই উনি আমেরিকার সাথে QUAD মিটিং করেন, চীনের সাথে বর্ডারে প্রচুর সৈন্য সমাবেশ করেও নির্বিঘ্নে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চালিয়ে যান আর রাশিয়ার থেকে S400 কিনেও কোনো মার্কিনি প্রতিবন্ধন face করেন না।
শ্রী নরেন্দ্র মোদি একজন প্রকৃত হিন্দু। আর হিন্দু বলেই নির্ভেজাল কম্যুনিস্ট, ক্যাপিটালিস্ট, কাসটিস্ট, রিফরমিস্ট, কনজারভেটিভ, ডগমাটাইসড - পুরোপুরি কোনোটাই নন আবার সবকিছুরই ভালো অংশ কিছু থেকে থাকলে, তার আগ্রহী গ্রহীতা। ফলে ওনাকে ছকে ফেলা যাচ্ছে না, আর সেখানেই বাকি সকলের মহাসমস্যা কারণ তাঁদের সব agenda-ই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। হিন্দুর প্রধান শক্তি যে জাতিটি stereotyped নয় - সে উদার। হিন্দুকে যারা typecast করতে চাইবেন, তাঁদের এই ধরণের সমস্যায় পড়তেই হবে। কিছু করার নেই ভাই, অনেকদিন পর নিশ্চিন্তে নিজেদের হিন্দুত্ব জাহির করতে পারা যাচ্ছে কিনা, তাই দেশটি এত দ্রুত বদলে যাচ্ছে। নানা স্তরে নানা জায়গায় নানা সময়ে নানান ভোট আসবে যাবে, তাতে ওনার কিছু আসে যায়না। উনি ওনার পথেই এগিয়ে যাবেন কারণ দেশ আজ নিজেকে চায়।
No comments:
Post a Comment