আমার গোত্র শান্ডিল্য। নারদীয় ভক্তিসূত্র পড়তে পড়তে যখন ১৮ নং সূত্রে শান্ডিল্যের নাম পেয়েছিলাম, স্বভাবতই উৎসুক্য জেগেছিল তাঁর সম্পর্কে জানার এবং তাঁর লেখা পড়ার। এমনিতেই 'শান্ডিল্য ভক্তিসূত্র' এবং সেই সম্পর্কিত স্বপ্নেস্বরের ভাষ্য পড়ার ইচ্ছা অনেকদিন ধরেই মনের মধ্যে সুপ্ত ছিল, কিন্তু ছাপার অক্ষরে ওই নামটা দেখে এবং পরম পূজনীয় স্বামী ভূতেশানন্দজী মহারাজকৃত সূত্রটির ব্যাখ্যা পড়ে আমার পূর্বপুরুষকে যিনি আলোর পথ দেখিয়েছিলেন, তাঁর সম্পর্কে জানাটা আগে দরকার বলে মনে হয়েছিল। আর এই পরিচয় খুঁজতে গিয়েই পুরো ঘেঁটে গেছি।
শান্ডিল্য একজন নন, একাধিক। এবং যুগে যুগে যেমন নতুন এক একজন মনু, তেমনি শান্ডিল্যও এক এক যুগে এক একজন। ত্রেতাযুগে একজন শান্ডিল্য আছেন যিনি রাজা ত্রিশঙ্কুর পুরোহিত, আবার আর একজন আছেন যিনি রাজা দিলীপের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক এবং দীক্ষাগুরু। দ্বাপরেও একজন শান্ডিল্য আছেন, যিনি যাদবদের রাজা নন্দের পুরোহিত। আবার কলিতেও শান্ডিল্য আছেন, তাও আবার একাধিক জন - কখনো তিনি শরশয্যায় শায়িত ভীষ্মের সাথে শাস্ত্রালাপ করছেন আবার কখনো রাজা জন্মেজয়ের ছেলে শতানীককে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করাচ্ছেন।
এখন এই নানান শান্ডিল্যদের timelineটি কি ভয়ঙ্কর গোলমেলে, বলছি শুনুন। ইক্ষ্বাকু বংশের রাজা ত্রিশঙ্কু হলেন শ্রীরামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ, কুলগুরু বশিষ্ঠের শিষ্য এবং গায়ত্রীমন্ত্র সহ ঋগ্বেদের তৃতীয় মন্ডলের মন্ত্রদ্রষ্টা ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্রের সমসাময়িক কারণ তাঁকে দিয়ে নিজের জন্য তিনি একটি alternate স্বর্গ তৈরি করিয়েছিলেন। আর ওই বংশেরই রাজা দিলীপ হলেন রাজা দশরথের প্রপিতামহ। দিলীপের পুত্র রঘু, রঘুর পুত্র অজ ও অজের পুত্র দশরথ। এখন ত্রিশঙ্কু থেকে নিয়ে রামচন্দ্র পর্য্যন্ত কুলগুরু কিন্তু সেই বশিষ্ঠমুনি, অর্থাৎ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে তিনিও একজন ব্যক্তি নন। তারপরের মহাভারতের যুগে রাজা জন্মেজয় হলেন রাজা পরীক্ষিত ও রাণী মদ্রবতীর জ্যেষ্ঠপুত্র, অভিমন্যুর পৌত্র এবং অর্জুনের প্রপৌত্র। পরীক্ষিতের মৃত্যুর পর মন্ত্রীরা তাঁকে হস্তিনাপুরের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন, এ মহাভারতের যুদ্ধের অনেক পরের ঘটনা। এবার, জন্মেজয়ের ছেলে শতানীক, মানে মহাভারতের যুদ্ধ এবং ভীষ্মের শরশয্যা শেষ হয়ে যাবার পর তৃতীয় প্রজন্মের রাজা। এতগুলো যুগ ধরে এবং এক এক যুগে নানা প্রজন্ম ধরে একই শান্ডিল্যমুনি বিচরণ করে বেড়াচ্ছেন, এটা কোনোমতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ তো গেল একটা দিক।
এবার আসি লেখালেখির দিকটায়। বৃহদাকরণ্য উপনিষদে তিনজন শান্ডিল্যের কথা আছে, ছান্দগ্য উপনিষদে আছে 'শান্ডিল্য বিদ্যা' নামক একটি অতি মূল্যবান রচনাংশ আর খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে পঞ্চরাত্র তত্বের অংশ হিসেবে আরো একজন শান্ডিল্যের ভক্তিসূত্র পাওয়া যায়, যে দর্শনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে অগমশাস্ত্রের মূল প্রবক্তা মাধবাচার্য্য এবং রামানুজ বৈষ্ণবীয় ধারাকে popularise করেছিলেন। এই পঞ্চরাত্র তত্ব থেকেই কিন্তু অবতারবাদের উৎপত্তি। আর শান্ডিল্য সংহিতা এবং শান্ডিল্যপনিষদের লেখক যে কোন শান্ডিল্য, বলা খুব মুস্কিল। তবে এসব বড়জোর হাজার তিনেক বছর আগেকার কথা, আর ভাগবৎ রচনার কয়েক'শ বছর আগের কথা তো বটেই। তাহলে গুরু খুঁজতে গিয়ে গরু খোঁজা হয়ে গেল, তাই তো? এটুকু বেশ বুঝতে পারছি যে ভক্তিসূত্রের শান্ডিল্য আর আমার গোত্রের সূত্রধর ঋষি শান্ডিল্য এক নন। খুব সম্ভবতঃ ছান্দগ্য উপনিষদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিই হলেন সেই বিরল শিক্ষক, যিনি আমার পূর্বপুরুষকে নিজের ঋদ্ধির দ্বারা সমৃদ্ধ করেছিলেন, যে কারণে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে তাঁর নাম আজও আমারা নিজেদের কূলের পরিচয়সূচক হিসেবে বহন করে চলেছি।
সেই ঋষি তাঁর 'শান্ডিল্য বিদ্যা'র পরপর চারটি শ্লোকে অদ্বৈত বেদান্তের সার বলেছেন,
सर्वं खल्विदं ब्रह्म तज्जलानिति शान्त उपासीत ।
अथ खलु क्रतुमयः पुरुषो यथाक्रतुरस्मिँल्लोके पुरुषो भवति तथेतः प्रेत्य भवति स क्रतुं कुर्वीत ॥ १ ॥
1. All this is Brahman. From It the universe comes forth, in It the universe merges and in It the universe breathes. Therefore a man should meditate on Brahman with a calm mind. Now, verily, a man consists of will. As he wills in this world, so does he become when he has departed hence. Let him with this knowledge in mind form his will.
मनोमयः प्राणशरीरो भारूपः सत्यसङ्कल्प आकाशात्मा सर्वकर्मा सर्वकामः सर्वगन्धः सर्वरसः सर्वमिदमभ्यत्तोऽवाक्यनादरः ॥ २ ॥
एष म आत्मान्तर्हृदयेऽणीयान्व्रीहेर्वा यवाद्वा सर्षपाद्वा श्यामाकाद्वा श्यामाकतण्डुलाद्वैष म आत्मान्तर्हृदये ज्यायान्पृथिव्या ज्यायानन्तरिक्षाज्ज्यायान्दिवो ज्यायानेभ्यो लोकेभ्यः ॥ ३ ॥
2-3. He who consists of the mind, whose body is subtle, whose form is light, whose thoughts are true, whose nature is like the akasa, whose creation in this universe, who cherishes all righteous desires, who contains all pleasant odours, who is endowed with all tastes, who embraces all this, who never speaks and who is without longing— He is my Self within the heart, smaller than a grain of rice, smaller than a grain of barley, smaller than a mustard seed, smaller than a grain of millet; He is my Self within the heart, greater than the earth, greater than the mid—region, greater than heaven, greater than all these worlds.
सर्वकर्मा सर्वकामः सर्वगन्धः सर्वरसः सर्वमिदमभ्यात्तोऽवाक्यनादर एष म आत्मान्तर्हृदय एतद्ब्रह्मैतमितः प्रेत्याभिसंभवितास्मीति यस्य स्यादद्धा न विचिकित्सास्तीति ह स्माह शाण्डिल्यः शाण्डिल्यः ॥ ४ ॥
4. He whose creation is this universe, who cherishes all desires, who contains all odours, who is endowed with all tastes, who embraces all this, who never speaks and who is without longing—He is my Self within the heart, He is that Brahman. When I shall have departed hence I shall certainly reach Him: one who has this faith and has no doubt will certainly attain to that Godhead. Thus said Sandilya, yea, thus he said.
No comments:
Post a Comment