যদি গৃহস্থ হন তাহলে কোনো তীর্থক্ষেত্রে কখনো কারো দান নেবেন না। ধরুন বৃন্দাবনে পরিক্রমা করছেন, দেখলেন হয়তো কেউ হালুয়া বিলোচ্ছেন, নমস্কার করে এগিয়ে যাবেন, মোটেও হাত পাতবেন না। একইভাবে, কোনো মঠে, মন্দিরে, মিশনে বিনা দান দিয়ে কখনো প্রসাদ গ্রহণ করবেন না বা থাকবেন না। অন্নসত্ৰ সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের জন্য, আমাদের জন্য নয়। গৃহস্থ ভিক্ষান্নের অধিকারী নন, ওই ব্যবস্থা কেবলমাত্র সন্ন্যাসীর জন্য, যা সমাজের ধর্মীয় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই সন্ন্যাসীকে খালি হাতে প্রণাম করতে নেই, সামর্থ অনুযায়ী কিছু না কিছু দিতে হয়। আর গৃহস্থ যদি অন্যের দান নিয়ে তীর্থযাত্রা করেন তাহলে তার পূণ্যফল সেই দানীর হয়, গৃহস্থের নয়। সন্ন্যাসীর সাথে আমরা গৃহস্থরা যেন কখনো নিজেদের গুলিয়ে না ফেলি। বেদে চারটি অত্যন্ত মূল্যবান মন্ত্র আছে, যা যে কোনো গৃহস্থের পক্ষে জীবনযাপনের মানক:
১. বিষয়মুখত্যাগং বা সমাজং প্রতি যৎ কর্তব্যম্ ।
তৎ ত্যাগং নৈব ত্যাগমীশ্বর প্রােণিতম্
কামপাশ - বিমােচনবিতি ত্যাগমীশ্বরসম্মতম ।
অর্থাৎ, দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করা ও সামাজিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ঈশ্বরের অভিপ্রেত নয়। তিনি শুধু চান যে জীব বাসনা-কামনার পাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করুক।
২. প্রাণরক্ষার্থমাবশ্যকীয় দ্রব্যজাতস্য ভােগং ন তু পাপম্ ।
শরীরং স্বাস্থ্যরক্ষণং সবৈদ কর্তব্যং ধর্মসাধনার্থম্ ।
তেন বৈ বৰ্ততে প্রােজ্জ্বলঃ প্রজাপ্রদীপঃ সাধ্যতে চাধকৃৎ প্রতিরােধম্ ।
অর্থাৎ, জীবনের প্রয়ােজনসমূহ সাধন করা পাপ নয়, শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা কর্তব্য, নচেৎ জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্বলিত রাখা সম্ভব নয়, দুবৃর্তকে প্রতিহত করাও সম্ভব হয় না।
৩. কামী ইন্দ্রিয়দাসােআস্তি কামভােগলালসা নীচত্বং নয়তি
নিষ্ঠ জগতি পদ্মপত্রমিবাংভসা । এতদ্বৈ ঈশ্বরানুশাসনম্ ।
অর্থাৎ, ইন্দ্রিয়াসক্ত ব্যক্তিরা প্রবৃত্তির দাস। ইন্দ্রিয় সুখের সন্ধান মানুষকে হীন করে। ঈশ্বরের বিধান মানুষকে পদ্মের পাপড়ির মতাে হতে হবে, জলের দ্বারা পরিবৃত হয়েও যে সিক্ত হয় না।
৪. আস্তে ভগ আসীনস্য - চরৈবেতি চরৈবেতি
চরণ্ বৈ মধু বিন্দতি চরন্ স্বাদু উদুম্বরম্ ।
পশ্য সূর্যস্য শ্ৰেমাণং যাে ন তন্দ্রয়তে চরণ্
চরৈবেতি চরৈবেতি চরৈবেতি ।
অর্থাৎ, অকর্মন্য ব্যক্তির জন্য ঈশ্বর কপালে দুঃখ লিখে দেন। সুতরাং অক্লান্ত কর্মে ব্যাপৃত হও। অরণ্যে রােদন করলে মধু পাওয়া যায়। মধু আহরণের জন্য পরিশ্রম করতে হয়। দেখ সূর্য সারাক্ষণ এগিয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়েছেন, কখনাে আলস্য করেন না, তাই সূর্য চিরযৌবনময়। ঈশ্বরে ভরসা রেখে কর্মকান্ডে এগিয়ে চলো, তাতেই সৌভাগ্যের দ্বার খুলবে।
No comments:
Post a Comment