শ্রীরামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা দিবসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের দ্বারা সিপিএমের নেতাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর পরাধীন পলিটব্যুরোর বিদেশি প্রভু-নির্দেশিত প্রেস বিবৃতিটি পড়লাম। যথারীতি, ভারতের কোটি কোটি মানুষের দানের অর্থে গড়ে ওঠা ভারতীয় অস্মিতার প্রতীক এই পুনর্নির্মিত মন্দিরটিকে সরকার এবং একটি বিশেষ দলের সাথে জুড়ে দিয়ে নিজেদের ধর্মবিরোধী এবং ভারতবিরোধী অবস্থানকেই তারা আবার ব্যক্ত করেছে, যা ১৯৬২ সালে চিনের ভারত আক্রমণের সময় চিনকে সমর্থন করার সময় থেকেই এই মতাবলম্বীরা দৃঢ়ভাবে পালন করে আসছে।
আসলে জরুরি অবস্থা জারি করে বিরোধী দলগুলির নেতাদের জেলে পুরে ভগ্ন সংসদে সম্পুর্ন অনৈতিকভাবে সংবিধানের মূলে আঘাত করে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যে দুটি শব্দ ঢুকিয়েছিলেন - সমাজবাদী আর পন্থনিরপেক্ষ, তাকেই নিজেদের স্বার্থে অতঃপর ছদ্মবামপন্থীরা ধর্মনিরপেক্ষ বলে সংজ্ঞায়িত করেছে। ইন্দিরার সংবিধানও কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে না, পন্থনিরপেক্ষতার কথা বলে - ধর্ম আর পন্থ সম্পূর্ণ আলাদা, যে পার্থক্যটা এই অশুভ শক্তির ইচ্ছে করেই গুলিয়ে দিতে চায়। এরা 'ধর্ম মানি না' বলে আসলে ধর্মাশ্রিত প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার একাত্মতার মূল ভিত্তিটিকে কেটে ফেলতে চেয়েছে, যাতে anarchy সৃষ্টি করে ভারতবিরোধী শক্তিদের উদ্দেশ্য সাধন করা যায়।
শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ, মহাবীর, শ্রীচৈতন্য, গুরুনানক, শ্রীরামকৃষ্ণ - এঁরা সমাজ জীবনে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন, সম্প্রদায় গড়তে নয় কারণ মানবিকতার ভিত্তিই ধর্ম। পরে ওঁদের কারো কারো অনুসারীরা আলাদা আলাদা সম্প্রদায় গড়ে তোলেন, সেটা অন্য বিষয়। যারা অমানবিক, পাপাচারী, দুর্জন তারাই অধার্মিক, ফলে ভারতের অন্যতম মুখ্য এবং পুরোধা ধর্মপ্রবর্তনকারীর স্মৃতিমন্দির নির্মাণের মাধ্যমে যখন বৃহত্তর সমাজ নিজেরাই নিজেদের মধ্যে আবার হারিয়ে যাওয়া ধর্মবোধ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে, তখন তার বিরোধিতা কারা করছে সেটা মানুষের কাছে স্পষ্ট না হলে মানুষ বুঝবেন কিভাবে যে নেতৃত্বের নিরিখে সমাজের ধর্মবোধ রক্ষার স্বার্থে কাকে বর্জন আর কাকে আলিঙ্গন করতে হবে?
ব্যাক্তিগতভাবে আমি খুব খুশি হয়েছি যে অমন পবিত্র দিনে এই অপবিত্র মতাদর্শের ছায়া ওই পবিত্র স্থানে পড়বে না। আরো কিছু কলুষিত চরিত্র ট্রাস্টের আমন্ত্রণ অস্বীকার করলে আমি আরো খুশি হবো। ভারতের ভিত্তিই হলো ধর্ম। 'ভয়ম্ রতম্ ইতি ভারতম্' - 'ভ' অর্থাৎ আলোর খোঁজে যে রত, সেই ভারত। সেই আলো বেদান্তের আলো, অন্তরাত্মার আলো, ধর্মের আলো, সভ্যতার আলো, মর্য্যাদার আলো, মানবিকতার আলো, সদাচারের আলো। যে আলো ভারত থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, বহির্বিশ্ব থেকে ভারতে আসেনি। যারা তা মানে না এবং আলো ছেড়ে অন্ধকারের পেছনে দৌড়োয়, আলোর দিশারীর মন্দিরে তাদের কি কাজ?
No comments:
Post a Comment